Alapon

বাংলা সাহিত্যের সার্থক প্রেমিকা কে?

মেমসাহেব, ঠাকুরঝি, রাজলক্ষী নাকি চন্দ্রমুখী!আপনার কি অভিমত?

জ্বী হ্যা, দেবদাসে চন্দ্রমুখী এবং পার্বতীকে দাঁড়া করালে আমি চন্দ্রমুখীকেই বেছে নিব।যে ভালোবাসতে জানে তার আবার জাতকুল কি!রাতের অভিসারে পার্বতী দেবদাসের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছিল, দেবদাস স্থান দেয় নি। আত্মসম্মানবোধ অার প্রচণ্ড অভিমানে পারু জমিদারের পত্নী হয়েছিল। দেবদাস মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছিল।পার্বতীর মনে যতবার দেব'দা নাম উচ্চারণ হবে ততবার মরমে মরমে মৃত্যুর স্বাদ পাবে । আহ! এতবার মরেও বেচারী দেবদাসের চরণতলে ঠাঁই পাবে না।সেইদিক থেকে চন্দ্রমুখী সার্থক। দেবদাসীরা শুধুই ভালোবেসে যায় তারা প্রতিদান চায় না।

কিশোরী বয়সে দূরবীনের ধ্রুবকে পড়ে হেদিয়ে মরতাম। আমার ঠিক ধ্রুবর মত বর চাই। উচ্ছৃঙ্খল, মাতাল, হাড়ে হারামজাদা ধ্রুবকেই চাই। রেমির মত আষ্টেপৃষ্ঠে ভালোবাসব। এত ভালোবাসব যে কোন একদিন কাছে টানতে বাধ্য হবে। এতগুলো বছর পর ব্যাপারটা নিজের কাছেই হাস্যকর ঠেকে। শুধু ভালোবাসলেই হয় না জীবনে চলার পথে তার পরম বন্ধু না হলে কখনই মনের গভীরে প্রবেশ করা যায় না।সেদিক থেকে পরমা সুন্দরী রেমি হেরে গেছে মধ্যবয়স্কা রঙ্গময়ীর কাছে। হেমকান্তের হৃদয়ের শাখা-প্রশাখায় রঙ্গময়ীর বাস, রেমি ধ্রুবর হৃদয়ের রঙ জানে না।

লাবন্য! বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ শিক্ষিত মেয়েরা লাবন্য হয়ে জন্ম নিতে নিতে শেষপর্যন্ত আটপৌরে হয়ে জীবন শেষ করে। অমিত খেলতে ভালোবাসে। গুটির দান ভুল করে লাবন্য বার বার থমকে দাঁড়ায়।

শরৎচন্দ্রেের নায়িকা যেমন-রমা, বিরাজবৌ বা রাজলক্ষীর কথাই ধরা যাক তাদের মাঝে প্রেয়সীর চেয়ে মাতৃভাব অত্যন্ত প্রবল।স্বামীকে পাত পেরে খাইয়ে, সকাল বিকাল দু'বেলা গড় হয়ে প্রণাম করে স্বর্গসুখ লাভ করে। প্রেমিকের সাথে ছলাকলা করে হৃদয় রক্ষা করা, সেকি! পাপ হবে পাপ!

আমার কাছে গোবর লেপুনি কপিলাই সেরা। তেলে জবজবে চুলে, বেগুনী শাড়িখানা গায়ে কুবেরের মন ঢেউ তোলে আবার কুবেরের হুক্কা নদীর পাড়ে দিয়ে আসতে ভুল করে না। সুযোগ বুঝে কুবেররে কয়,
-আমারে নিবা মাঝি? 
হ। কুবেরের হাত ধরে কপিলা ময়নাদ্বীপে পাড়ি দেবার সময় বাঙালি পাঠকের মনে একবারও প্রশ্ন জাগে না কপিলা কুলটা, অসতী গায়ের বধূ। এখানেই কপিলার প্রেমের স্বার্থকতা। কপিলা কুবেরের ছাইয়ের মত পোঁড়া দেহে ছায়ার মত মিশে গেছে। বরং কুবের একলা গেলেই ভিতরটা কেমন খা খা করত।

আরেকজন আছেন সম্ভবত তার মত সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী নারী চরিত্র দ্বিতীয়বার জন্ম হবে না। সে মাধবীলতা । পানপাতার মত ভরাট মুখ দেখে অনিমেষের মনে প্রেম জেগেছিল কি না জানা নেই। কালবেলা জুড়ে সে অনিমেষের সহযোদ্ধা, বন্ধুর মত হাতে হাত ধরে এগিয়ে গিয়েছে। বিখ্যাত নকশাল নেতা অনিমেষের প্রেম করার মত সময় ছিল না।শান্তিনিকেতনে একরাতের প্রেমে মাধবীলতাকে আবদ্ধ করেছিল। অন্তস্বত্তা মাধবীলতার সিঁথিতে সিঁদুর দান করবার আগেই তাকে চলে যেতে হয় জেলে।মাধবীলতা ছোট্ট অর্ককে বুকে ধারণ করে বস্তিতে নেমে এসেছিল। অপেক্ষা করেছিল বছরের পর বছর। অনিমেষের একরাতের প্রতিদানে মাধবীলতা জনম জনম ভালোবেসেও তৃপ্ত হয় নি।এরচেয়ে পূজনীয় প্রেম আর কি কিছু হতে পারে!

পঠিত : ৮৭৩ বার

মন্তব্য: ০