Alapon

স্বপ্নরাঙা শহরে সব বাঁধা পেরিয়ে। মবরুর আহমদ সাজু


আমাদের দেশ ছোট, আমাদের মানুষ বেশি। কিন্তু কেন যেন স্পেস ম্যানেজমেন্টটা আমারো আজো শিখে নেয়ার চেষ্টা করিনা।সুস্থ বিনোদনের অভাব আর মুক্ত বাজারের হাতছানি আমাদের শপিং মুখী করে তুলতে পেরেছে। যেকারণে প্রয়োজনের বেশি জিনিস, প্রয়োজনের বেশি পোষাক, প্রয়োজনের বেশি আরো অনেক কিছুকে নিয়ে আমরা বেসামাল। অপ্রয়োজনীয় এইসব জিনিসপত্রের জায়গা করতে প্রয়োজন বেশি স্কয়ার ফিট। রাস্তা থেকে সোজা উঠে যাবে অন্দরমহল। যার যার খোপে বন্দী হবে রড সিমেন্টের মানুষ। কবুতর তবু দিনে উড়ে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায় মুক্ত আকাশে, দলে বলে। মানুষ বন্দী থাকবে একা, ঘরে। বের হলে বন্দী হবে পথে। নি:সঙ্গ, বিছিন্ন মানুষ। তবু শহর বেড়ে যাবে। শহর বাড়াতে হবে। মৃত প্রাণীর বৃদ্ধি থেমে যায়, শুধু মৃত শহরের বৃদ্ধি থামেনা। প্রাণহীন মৃত শহর বাড়তে থাকে লম্বায়, উচ্চতায়। আমাদের বিধ্বংসী ক্ষুধা মেটাতে শহর কেবল বাড়তেই থাকে। ধেই ধেই করে। এত মানুষ, এত বাড়ি। বড় বড় বাড়ি। বাড়িতে সবুজ থাকবেনা, বাড়িতে কোলাহল থাকবেনা, ফুলের ঘ্রাণ থাকবেনা, পাখীর গান থাকবেনা। এসব মানুষ মেনে নেয়। সহজে মেনে নিতে পারে। কিন্তু কি এক অদ্ভুত কারণে ছোট বাসা মেনে নিতে পারেনা।
গ্রাম থেকে পরিবারের সাথে শহরে এসেছে রাইছা। মধ্য বিত্ত পরিবারের মেয়ে রাইছা। মায়ের সাথে থাকে সে। তার বাবা থাকেন বিদেশে। সবে মাত্র জি,এস,সি পাশ করে শহরের নামকরা আভিজাত্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ইদানিং ক্লাসের ফাঁকে আনমনা প্রতিক্ষণ ভাবনারাশি। বন্ধুরা রুটিন অনুযায়ী স্কুলে শিক্ষকদের হোমওয়ার্ক প্রেজেন্টিশন করলেও তার সহপাঠিরা করে কিন্তু রাইশার ভিন্ন জগতে বসবাস করছে সারাক্ষন কৌতুহলী। রীতিমতো ভাবনা ছায়াপথ-মায়ের সাথে বাবার সম্পর্কের অবনতি। বাবা থাকেন অনেক দিন যাবত বিদেশে মায়ের সাথে ফোনে বাকযুদ্ধ। সময়ের চাহিদায় বাবার সাথে রাইশার মা এর সম্পর্ক বিচ্ছেদ হলো মাত্র গেল বছর। পরিবারের উপার্জনের কেউ নেই। সেই একমাত্র কন্যা যার জন্য মা বাবা সবাই জীবন দিতে প্রস্তুত? একদিকে বাবা টাকা পাঠালে রাইশার মা সহ্য করতে পারে না। অন্যদিকে রাইশার মায়ের বাড়ি থেকে টাকা পয়সা আসে তার লেখাপড়ার জন্য। সব মিলিয়ে রাইশা চিন্তা জগতে মশগুল। অল্প বয়স ছাপ অনেক। জীবনের জয়গানে ছন্নছাড়া, কিন্তু রাইশা কৌতুহলী মনে অসাধারন কিছু করতে চায়। কিন্তু অসাধারন কিছু করা সহজ হচ্ছে না। হতাশ হয়ে পড়ে সে।  বর্তমানে তার কিছুই ভালো লাগছে না। রাইশা গ্রামের বিশাল বহুল পরিবারের জন্ম না নিলেও বর্তমানে শহরে জীবনে এসে আভিজ্য জেনারেশনের অংশের মুখোমুখি। যার জন্ম ইন্টারনেট জগতের প্রথম দিকে, কার একটি বড় অংশ সুবিধাভোগী। মধ্যবিত্তের আড়ালে তরুন সমাজ। তার ধারনা সে অভিজাত্য গল্পের প্রধান চরিত্র। সে নিজের জীবন উপভোগ করছে ঠিকই কিন্তু খামখেয়ালিপনায় জীবন ছন্নছাড়া। তার কিছুই ভালো লাগে না। সে এখন অভিজাত্য পরিবারের ছেলে মেয়েদের সাথে চলাফেরা করে। নৈমিত্তিক প্রেরনায় স্বপ্ন অসুখী। সে জানে না কীভাবে একটি মানুষের প্রাপ্তি তার প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হলে মানুষটি সুখি হয়। উল্টো হলে অসুখী হয়। এদিকে রাইশার বাবা মাকে রেখে ভিন্ন দেশে নতুন বিয়ে করে সংসার শুরু করছেন। অন্যদিকে তার মা নতুন হৃদয়জন রসায়নে হাবুঢুবু খাচ্ছেন।রাইশার স্বপ্নের প্রাপ্তি যেন প্রত্যাশার চেয়ে মিলছে না। সেটা জানার জন্য দায়বদ্ধতা কার? সমাজ, পরিবার নাকি রাষ্ট্রের।রাইশার মা-বাবার জন্ম ৭০দশকে। তাকে বড় করেছেন কখনো দাদু কখনো নানু। অনেক স্বপ্নের মেয়ে রাইশার ভাবনা মন্দ ছিল না। পারিবারিক যুদ্ধের ভয়ারহতা নিমজ্জিত হয়ে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কেন্দ্রিক হোক। অথচ মা-বাবার মান অভিমান খামখেয়ালিপনায় রাইশা এখন ভিন্ন জেনারেশনের অংশিভূত। তারা চেয়েছিলেন কি তাদের মেয়েটির লাইফ স্টাইল উন্নত হোক? রাইশা সময়ের যাতনায় গ্রেজুয়েশনের পথে ক্যারিয়ারে ফ্যাশনের জুড়ি সৌন্দর্যর স্পর্শ ছাড়া খাতা কলমের বিদ্যা নেই! বললেই চলে? প্রথম অধ্যায়ের লেখাপড়ার পর ২য় অধ্যায়ে মা-বাবার নজরহীন জীবনে তার কেউ পাশে ছিলই না। স্কুল কলেজে যাওয়া আসা অথচ কোনো এক ভাবনা পথের আর্শীবাদে বাবা মা তার ক্যারিয়ারের দিকে   আস্ফালনের তীর নিক্ষেপ করলেন। তারা জানবে না? উন্নত জীবনের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হবে। এই বর্তমান জগতে। এদিকে সময় শেষে পৃথিবীর সমীকরনে মা-বাব একছাদের নীড়ে একত্র হলেন। অবশেষে রাইশা বেখেয়ালি মনে খাতা বই কলমের জায়গা ছেড়ে আভিজাত্য জেনারশনের সেরা পল্লীর মধ্যমনি। মা-বাবাকে সময় দেয় না নিজেকে আজকাল অসাধারন মনে করে।তার ধারনা- যদি তোর ডাক না শোনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে।একা চলতে গিয়ে আজ রাইশার সৌন্দর্য পিয়াসী অবয়বে যাদু কাটে সমাজে উচ্চ শ্রেনী লোকদের। সে মনে করে সৌন্দর্যই তার ক্যারিয়ারে সেরা অর্জন। লেখাপড়া কম জানলে হবে। এই জেনারেশন অল্পবয়সী সুন্দরীদের আকৃষ্ট হয়। কেন হবে না? মা কে বাবা ছেড়েছেন মা বাবাকে …… । কিন্তু এই জেনারেশন সবই সৌন্দর্যকে অসাধারন মনে করে এদিকে ফেসবুকে অসাধারন খেতাব অর্জন করেছে রাইশা। সারাক্ষন চ্যাটিং ফোন মেইল এদিকে যাওয়া সেদিকে আড্ডা। এমন চলাফেরা রাত বেরাত আড্ডায় মত্ত্ব দেখে নিজেদের কে অপরাধী মনে করছে। তাদের জন্য আজ মেয়েটি এই অস্বাভাবিক……। তার এমন ক্যারিয়ার গড়ার জন্য তারাই সেই পুরাতন যুগে ফিরে যায় কথায় কথায়। এদিকে মা-বাবার সাথে থাকা রাইশা পারিবারিক সম্পর্কের ছেদ কেউ জানে না। নিজেকে নিজের ক্যারিয়ার গঠনে ভিন্নমুখি হতে চেয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে হয় কিভাবে সে জানে না। সময় বলে প্রত্যাশার সাথে বাস্তবতার না মিললে এই স্বপ্নে ছোঁয়া কিশোরী হতাশ হয়ে পড়ে। যোগত্যার চেয়ে বেশি সম্মান ও অভিজাত্য আশা করে সে। অথচ কঠোর পরিশ্রম করার কোনো ইচ্ছা নেই তার। তাই উদ্ভুত এই উচ্চবিলাশী রাইশা প্রত্যাশা প্রাপ্তি কখনোই তার মা-বাবার স্বপ্নের বাস্তবতার সাথে মিলে না। কারন রাইশার প্রতি মুহূর্ত ইগো আহত করছে। একাকী জীবনে ফেসবুক ইন্টারনেটে এর রঙিন দুনিয়ায়। আর এখানেই গড়ে উঠেছে তার উদ্ভুত দুনিয়ার রঙিন ফানুস। তবে সময়ের সংক্ষেপ বুঝে রাইশাই শেষ নিঃশেষে বলে গেল। দায়ী কেউ নয় দায়ী বিনয় বিশ্বাস শিক্ষা সাধনা কারন অচেনা পথিকে রাইশা ছিল উঠতি তরুনী তার দুরন্তপনা চাঞ্চ্যলতা উচ্চাকাঙ্খায় সফল ক্যারিয়ার কীভাবে গড়তে হয় জানতো না। নিজেকে সবসময় রঙিন দুরিয়ায় চিত্তোবিনোধনের বাহ বাহ’য় অসাধারন মনে করেছে। নিজেকে ছাড়া সবাই কে অগ্রাহ করেছে। তবে গল্পের প্রধান চরিত্র একটি গল্পের বাস্তবতার আড়ালে জীবন কাহিনীর সমাবেশ ।
 লেখক সিলেট:    

পঠিত : ৭৪২ বার

মন্তব্য: ০