Alapon

ধর্ষণ, হারকিউলিস থেরাপি ও বাংলা ভাই

একের পর এক তিনটি ঘটনা। এবারের চিরকুটে লেখা ছিলো- ‘আমি পিরোজপুর ভান্ডারিয়ার...ধর্ষক রাকিব। ধর্ষকের পরিণতি ইহাই। ধর্ষকেরা সাবধান— হারকিউলিস।’ নিহত রাকিব (২০) একজন মাদ্রাসা ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ভান্ডারিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামি ছিল।

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাকিবের লাশটি পাওয়া গেছে। সম্ভবত কয়েক ঘণ্টা আগে তাকে গুলি করা হয়েছিলো। রাকিব ভান্ডারিয়ার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলায় প্রায় একই ধরণের গলায় চিরকুট ঝোলানো সজলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারও আগে ১৭ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার থেকে একজন নারী গার্মেন্টস শ্রমিককে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন রিপনের (৩৯) গলায় চিরকুট ঝোলানো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায় এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে, হারকিউলিসের ব্যাপারে তারা অন্ধকারে আছেন। অন্ধকারে থাকলেও পুলিশের হাবভাবে মনে হচ্ছে তারা বেশ নিশ্চিন্ত। অনেকেই মনে করেন এসব হারকিউলিস বলে কিছু নেই। পুলিশই ঘটনা ঘটাচ্ছে কিন্তু তাদের কাঁধে যাতে বিচারবহির্ভূত হত্যার দায় না চাপে যেজন্য তারা হারকিউলিস থেরাপি ইউজ করছে। ২৪ জানুয়ারি খুন হওয়া সজলের ব্যাপারে তার স্বজনেরা বলছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নেয়ার একদিন পরই লাশ পাওয়া গেছে। সজলের ঘটনায় অনেকেই পুলিশের দিকেই ইঙ্গিত করছেন। 

বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা খুবই সাধারণ ব্যাপার। পুলিশ নানান অজুহাতেই দেশের মানুষকে খুন করছে। গত বছর মাদক নির্মূলের কথা বলে প্রায় সাড়ে চারশত মানুষকে গুলি করে মেরেছে। সরকার ভেবেছিলো এতে মানুষ খুশি হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ এসব ক্রসফায়ারের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বিশেষ করে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরাম হত্যার ঘটনা সারদেশবাসীকে নাড়া দিয়েছে। 

সম্প্রতি হাসিনা নতুনভাবে সরকার গঠনের পর শুরু হয়েছে ধর্ষণ আর গণধর্ষণ। শুরু হয়েছে ভোটের দিন রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। এক বিএনপি সমর্থককে গণধর্ষিত হতে হয় ধানের শীষে ভোট দেয়ার অপরাধে। এরপর একের পর এক ধর্ষণের খবর আসতেই থাকে। এর মধ্যে নতুন করে শুরু হলো হারকিউলিস থেরাপি। অনেকের ধারণা এই হারকিউলিস থেরাপির মাধ্যমে সরকার ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং কিছু ক্রসফায়ারও দিতে চায়। 

তবে এই ধরণের হত্যা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। অপরাধী যত বড় অপরাধ করুক না কেন, তাকে অবশ্যই আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। ধর্ষকদের বিচার সবাই চায়, তবে এভাবে নয়। এভাবে পুলিশ যে কাউকে হত্যা করে ধর্ষক বলে চালিয়ে দেয়ার অবকাশ থেকে যায়। বাংলাদেশ পুলিশ অতাচার নির্যাতনে সিদ্ধহস্ত। এমনও হতে পারে হারকিউলিস থেরাপি জনপ্রিয় হলে এই থেরাপি দিয়ে সরকার বিরোধী মত দমন করবে। তখন আর কেউ কিছু বলবে না। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে। অনেককে দেখা যাচ্ছে হারকিউলিসকে স্বাগত জানাতে। 

আর যদি এটা পুলিশ না করে থাকে তবে এটি আরো বেশি উদ্বেগজনক খবর। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সর্বহারাদের উৎপাত শুরু হয়। তারা দল বেঁধে ডাকাতি করে। মানুষ তাদের নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হয়। এককথায় তারা জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। এমন সময় পুলিশের পাশাপাশি কিছু যুবক এই সর্বহারা নিধনে এগিয়ে আসে। তাদের মধ্যে অন্যতম বাংলা ভাই। 

বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে অনেক সর্বহারা ডাকাতকে হত্যা করা হয়। জনগণ তাদের স্বাগত জানায়। অবশেষে দেখা যায় বাংলা ভাইরা সর্বহারাদের চাইতেও বড় সমস্যায় পরিণত হয়। সারাদেশে অরাজকতাসহ বোমা ফাটাতে থাকে। একের পর এক আদালতে বোমা মেরে বিচারপতিদের হত্যা করতে থাকে। 

তাই বিচারবহির্ভূত হত্যা দেশের জন্য কখনোই ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারে না। আমরা ধর্ষণের বিচার চাই, সেই সাথে হারকিউলিস থেরাপি বন্ধ চাই এবং এই থেরাপি প্রয়োগে খুনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।  

পঠিত : ১৯২৮ বার

মন্তব্য: ০