Alapon

আপনি ঋণখেলাপী? আপনার জন্য রয়েছে পুরস্কার

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৫৮টি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। একই সময়ে ঋণ খেলাপির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ১১৮ তে। দেশের ব্যাংকিং খাতে যে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমে গেছে এই হিসাব দেখলেই তা বোঝা যায়। লাগামহীনভাবে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে গেছে। বাড়ছে মূলধন ঘাটতি। এর পাশাপাশি ব্যাংকের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল কমে যাচ্ছে। এদিকে তুলনামূলক কম সুদ হওয়ায় ব্যাংকে আমানত প্রবাহ কমে গেছে। এতে দেখা দিয়েছে চরম তহবিল সঙ্কট। 

ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের চ্যানেল ঠিক রাখতে স্বল্প মেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করছে। একই সাথে দৈনিক প্রয়োজন মেটাতে রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কেউ কেউ ধার নিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো ব্যাংক কলমানি মার্কেট নির্ভর হয়ে পড়েছে। সাধারণ আমানত না পাওয়ায় এমনকি কিছু ব্যাংক সরকারি আমানত নির্ভর হয়ে পড়েছে। সরকারের উন্নয়ন ব্যয় চালাতে ব্যাংকে রাখা সরকারি আমানত প্রত্যাহার করতে হতে পারে। এতে ভয়াবহ বিপদে পড়ে যেতে পারে দুই ডজনেরও বেশি ব্যাংক। সবমিলে নানামুখী সঙ্কটে পড়ে গেছে দেশের ব্যাংকিং খাত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে আদায় বাড়াতে না পারলে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে দেশের ব্যাংকিং খাতকে। কিন্তু খেলাপি ঋণের উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতির মধ্যেও ব্যাংকিং খাতকে দুর্দশা থেকে টেনে তুলতে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার না করে উল্টো খেলাপিদের জন্য নানা ধরনের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় খেলাপি ঋণ নীতিমালায় শিথিলতা এনে খেলাপিদের জন্য নানা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়। এমনকি খোদ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল খেলাপি ঋণের জন্য কাউকে জেলে যেতে হবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।

ঋণখেলাপিদের নানা ধরনের সুযোগ দেয়ার ঘোষণায় ঋণ পরিশোধে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছেন উদ্যোক্তারা। যারা এত দিন নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তাদের অনেকেই হঠাৎ করে ঋণ পরিশোধ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে ব্যাংকের নগদ আদায়ের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ব্যাংকের নগদ আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে অনেক ব্যাংক। এতে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সক্ষমতা। প্রভাব পড়ছে ব্যাংকের মুনাফায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে বছর শেষে নিশ্চিত লোকসানের মুখে পড়তে হবে ব্যাংকগুলোকে।

ঋণখেলাপিদের একের পর এক বিশেষ সুবিধা দেয়ার ঘোষণায় গোটা ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঋণখেলাপিদের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সরল সুদে ১২ বছরে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া সংক্রান্ত অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তাদের মতে, ঋণখেলাপিদের এই ধরনের সুবিধা দেয়ার অর্থ হচ্ছে, নিয়মিত ব্যাংক ঋণ পরিশোধকারীদের নিরুৎসাহিত করা। এতে, যে সব ব্যবসায়ী ১১/১২ শতাংশ সুদে নিয়মিত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করছেন, তাদের সুবিধা না দিয়ে ঋণখেলাপিদের পুরস্কার করা হচ্ছে। এই ধরনের প্রণোদনা ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা আরো বাড়বে। এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যে সব ব্যবসায়ী নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন তাদের চেয়ে ঋণ খেলাপিদের বেশি সুবিধা দেয়া হলে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। নিয়মিত ব্যাংক ঋণ পরিশোধকারীরা যদি ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপি হয়ে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে, তখন কি হবে ?

মির্জ্জা আজিজ বলেন, বর্তমানে অনেক ব্যবসায়ী ১১/১২ শতাংশ সুদে নিয়মিত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করছেন, আর অন্যদিকে ঋণখেলাপিরা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করবে? এটা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে? তিনি বলেন, ঋণখেলাপিদের  ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টেসহ ১২ বছরে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সুবিধা দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। ঋণখেলাপিদের এই সুবিধা দেয়া হলে নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারীরা কেন ১১/১২ শতাংশ সুদে ২/৩ বছরে ঋণ পরিশোধ করবে। বরং ঋণ পরিশোধ না করলে ৯ শতাংশ সরল সুদে ১২ বছরে তা পরিশোধ করার সুবিধা পাবেন তারা। কাজেই সেই পথই অবলম্বন করবেন তারা, এটাই স্বাভাবিক।

পঠিত : ১২০৯ বার

মন্তব্য: ০