Alapon

যাকাতে উশর; একটি উপেক্ষিত ফরয

‘উশর’ শব্দটি আরবী আশরাতুন (দশ) শব্দ হতে এসেছে। এর শাব্দিক অর্থ হলো এক দশমাংশ। শরীয়তের পরিভাষায় কৃষিজাত পণ্য- ফল ও ফসলের যাকাতকে উশর বলে। এটা ফসলের যাকাত। আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কৃষির সাথে জড়িত। কিন্তু আমার জানামতে বহু মুসলিম ভাই উশর আদায়ে সক্রিয় নন। আজকের আলোচনা তাই উশর নিয়ে।

উশর সম্পর্কে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, তোমরা তোমাদের উপার্জিত হালাল সম্পদ হতে এবং যা আমি তোমাদের জন্য যমীন হতে উৎপন্ন করিয়েছে তা থেকে দান করো। (বাকারা ২৬৭)

তিনি আরো বলেন, ফসল কাটার সময় তার হক (উশর) আদায় করো। (আনআম ১৪১)

প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা. উশরের নিয়ম বলে দেন, যে যমীনকে আসমান অথবা প্রবাহমান কূপ পানি দান করে অথবা যা নালা দ্বারা সিক্ত হয়, তাতে পবিত্র উশর অর্থাৎ দশ ভাগের এক ভাগ আর যা সেচ দ্বারা সিক্ত হয়, তাতে অর্ধ উশর অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ। (বুখারী শরীফ)

ইমামে আবু হানীফা বলেন, যমীনে উৎপন্ন যাবতীয় ফসলেরই উশর অথবা অর্ধ উশর দিতে হবে। চাই দীর্ঘস্থায়ী শস্য হোক, চাই ক্ষণস্থায়ী শস্য অর্থাৎ শাক-সবজি হোক। তিনি আরো বলেন, কম-বেশি যাই হোক উশর আদায় করতে হবে।

উশর আদায়ের সময় :
উশর আদায়ের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যতবারই ফসল উৎপন্ন হবে ততবারই ফসলের যাকাত তথা উশর দিতে হবে।

উশরের নিসাব :
বিনা পরিশ্রমে ও খরচে উৎপাদিত ফসল ও ফল ফলাদির দশ ভাগের এক ভাগ বা তার মূল্য দান করে দিতে হবে। আর পরিশ্রম করে ফসল বা ফল ফলাদি ফলানো হলে তখন বিশ ভাগের এক ভাগ বা তার মূল্য দান করে দিতে হবে। ধান, চাল, গম ব্যতীত ফল-ফলাদির ১০টির ১টি বা ২০টির একটি দিতে হবে। আর যদি ৫টি হয় তবে একটার অর্ধেক দিতে হবে।

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওসাকের কম পরিমাণ শস্যের মধ্যে কোন যাকাত নেই এবং পাঁচ উটের কম সংখ্যায় যাকাত নেই। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-২১৩৫, অনুবাদ: বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার এবং বোখারী শরীফ, হাদীস নং-১৩২৩, অনুবাদ: আধুনিক প্রকাশনী

কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রsmile এবং পরবর্তীযুগের হানাফী আলেমগণের মতে ‘ভূমি থেকে যাই উৎপন্ন হোক, কম হোক বা বেশী হোক তার উপর যাকাত দিতে হবে’। উশরে কোনো নিসাব প্রযোজ্য হবে না।

যদি পাঁচ ওয়াসাক হিসেবে উশর দিতে চান তবে হিসাব হলো,
৫ ‘ওয়াসাক’ এক ওয়াসাক সমান ৬০ সা’আ। তাহলে ৫ * ৬০= ৩০০ সা’আ।
এক সা’আ উত্তম গমের মাপ হয় প্রায় ২.৪০ কেজি। তাহলে ৩০০ * ২.৪০= ৭২০ কেজি। নিসাব হলো ৭২০ কেজি।

কোন কোন ফসল/শস্য/ফলের উপর উশর ফরজ : 
জমি থেকে উৎপাদিত প্রত্যেক ফসলের উপর উশর ফরজ। যেমন খাদ্যশস্য, সরিষা, তিল, বাদাম, আখ, খেজুর, শুকনো ফল, শাকসবজি, শশা, খিরাই, গাজর, মূলা, সালগম, তরমুজ, লেবু, পেয়ারা, আম, মালটা প্রভৃতি। 
.
ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করা হলে বনজ বৃক্ষ, ঘাস, নলখাগড়া, ঔষধি বৃক্ষ, চা বাগান, রাবার চাষ, তুলা, আগর, ফুল, অর্কিড, বীজ, চারা, কলম ইত্যাদি যাকাতের আওতাভুক্ত হবে।

উশর আদায়ের হুকুম :
ফসলের যাকাত হচ্ছে উশর, যে উশর আদায় করলো সে তার ফসলের যাকাত আদায় করলো। যে উশর আদায় করলো না, সে তার ফসলের যাকাত আদায় করলো না। কাজেই, টাকা-পয়সা, স্বর্ণ-চান্দির যাকাত আদায় করা যেরূপ ফরয জমির উৎপাদিত ফসল ও ফল-ফলাদির যাকাত (উশর) আদায় করাও তদ্রুপ ফরয। অতএব, কেউ যদি ফসলের যাকাত (উশর) আদায় না করে তাহলে সে ফরয অনাদায়ের গুনাহে গুনাহগার হবে।

উশর পাবে কারা? 
যারা যাকাত পাওয়ার যোগ্য তারাই উশর পাবে।

বাংলাদেশে সবসময়ই কোনো না কোনো ফসল উত্তোলন করা হয়। এখনও কয়েকটি ফসল উত্তোলনের মওসুম চলছে। যেমন, ধান, আম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি। হানাফি মাযহাব অনুসারে আপনার ফসল যত পরিমাণই হোক উশর আদায় করতে হবে। আর অবশ্যই যদি আপনার সম্পদ ৭২০ কেজির বেশি হয় তবে কোনভাবেই আপনি উশর আদায় এড়াতে পারবেন না।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন।

পঠিত : ৯৫০ বার

মন্তব্য: ০