Alapon

যারা বিয়ে করে বউকে খাওয়ানোর দুঃশ্চিন্তায় ভুগছেন তাদের বলছি...

বিয়ের সিদ্ধান্ত যখন নেই, তখন চাকরির বয়স মাত্র ৪ মাস। নো সেভিংস। স্বাভাবিক।

বেশ কয়েকজন উপদেশ দিল যে অন্তত ২ বছর চাকরি করো, কিছু টাকা জমিয়ে নিয়ে বিয়ে করো। বিয়ে মানেই খরচ, তারপর নতুন একজন আসছে তার ভরন পোষন এরও ব্যাপার আছে।মনে মনে ভাবলাম আচ্ছা দুই বছর পরই নাহয় বিয়ে করলাম, কিন্তু এই ২ বছর কী ফিরে পাবো আর ?
দাম্পত্য জীবন থেকে দুইটা বছর বাদ যাবে, দ্বীনের অর্ধেক পূরন দুইটা বছর পরে হবে, আল্লাহ্‌ সন্তান দিলে সন্তানের সাথেও ২ বছর কম কাটাতে পারব ইত্যাদি।
প্ল্যান করলাম ধার করব। তাছাড়া ভালো কাজ করতে যাচ্ছি, সাহায্যের মালিক আল্লাহ্‌।

বিয়ে যদি সব থেকে কম খরচেও করতে চান তবুও কিছু খরচ থাকবেই। অবশ্যই যে বিয়েতে যত কম খরচ সে বিয়ে তত বরকতের- তবে স্ত্রীর দেনমোহর (সাধ্যমত), সামর্থ্যমত আত্মীয় স্বজনদের ওয়ালিমা খাওয়ানো ব্যাপারগুলো আছে।
বিয়েতে অধিকাংশ খরচ আব্বুই করেছিল, আমার তরফ থেকে যাবতীয় প্রাসংগিক কসমেটিকস আর বিয়ের আংটি ও এক জোড়া স্বর্ণের চুড়ির দায়িত্ব নিয়েছিলাম। ইচ্ছা ছিল শেষমেষ কিছু টাকা বাচাতে পারলে সারপ্রাইজ হিসেবে তাকে বিয়ের রাতে একটা ডায়মন্ড নোজপিন দেবার। (ডায়মন্ড শুনে আতকানোর কিছু নেই, তিনহাজারেও পাওয়া যায়)

কাছের ৩ জন বন্ধুর থেকে ধার নিয়েছিলাম। সময় নিয়েছিলাম ৩ মাস। মোটামুটি বড় একটা এমাউন্ট। আর তারাও আল্লাহ্‌ এর ইচ্ছায় সাহায্য করেছিল।

মাশাআল্লাহ্‌ বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে গেল। আমার প্ল্যান গুলোও সাকসেসফুল হয়েছিল ঠিক যেভাবে চেয়েছিলাম।
যে একমাত্র রব আমার সাহায্যকারী, তার সম্মানের কসম, বিয়ের পর আমার রিজিকে বরকত অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেল। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সবার টাকাও শোধ করে ফেললাম। আল্লাহ্‌ এর উপর ভরসা করে টাকা জমাতে দুই বছর অপেক্ষা করেছিলাম না, আল্লাহও নিরাশ করেন নাই।

বিয়ের পর আমার কোন খরচই বাড়েনি, খাওয়া দাওয়া তো পরিবারের খাবারের মধ্যেই বাড়তি একজনের আরামেই হয়ে যায়। বউকে পড়াশোনা, হাতখরচ, কসমেটিক ইত্যাদি বাবদ শুধু হাত খরচটা দিতে হয়, আর মাশাআল্লাহ্‌ আমার স্ত্রী কেও ক্রেডিট দিতে হয়, সে কোন অহেতুক খরচ করেনা। জাস্ট যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু করে।

এখন আল্লাহ্‌ আমার উপার্জন প্রায় দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছেন। অপ্রত্যাশিত ভাবে একের পর এক রিজিক আসতেই আছে। অথচ পূর্বের তুলনায় এক্সট্রা কোন পরিশ্রম বা ইবাদাত করিনি। বিয়েই তো একটা ইবাদাত।

আশ্চর্যের বিষয় আরো যে আজও যখনই কোন খরচ বেড়ে যায় তখনই প্রায় অলৌকিক ভাবে হাতে একের পর এক ভালো ধরনের এমাউন্ট আসতে থাকে মাসিক ফিক্সড উপার্জনের বাইরেও। যেই মাসে খরচ বেশী হয় সেই মাসে উপার্জন আরো বেশি হয়। এগুলো কেবলমাত্র আল্লাহ্‌ এর বিশেষ অনুগ্রহ ফলেই সম্ভব। আল্লাহ্‌ তার কৃত ওয়াদা রেখেছেন।

[ রসূল (সাঃ) বলেছেন যে, তিন ব্যক্তির আল্লাহর উপর হক রয়েছে যে তিনি তাদের সাহায্য করবেন তার মধ্যে এক ব্যাক্তি হলো "যে চরিত্র রক্ষার জন্য বিয়ে করতে চায়" আত-তিরমিযী ১/৩১১ ]

হয়ত লাখ পতি বা কোটিপতি হয়নি, আর হবার ইচ্ছাও নেই। আল্লাহ্‌ যেটুকুর উপযোগী মনে করবেন, যেটুকু দিলে হালাল ভাবে বাবা,মা, স্ত্রী, পরিবারবর্গ নিয়ে জীবন যাপন করতে পারব, আল্লাহ্‌ ও তার সৃষ্টিকুলের হক আদায় করতে পারব সেটুকুই প্রত্যাশা।

তবে মাশাআল্লাহ আল্লাহ্‌ অভাবে রাখেন নি, মধ্যবিত্ত সুন্দর জীবন যাপন করতে পারছি। রিজিকও বেড়ে চলেছে। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার সারমর্ম থেকে এটাই বলতে চাই,
টাকা জমাতে বা জীবন গোছানোর অপেক্ষায় বিয়েতে দেরী করার ব্যাপার টা হাস্যকর। 
._________________________

বিয়েই স্বচ্ছলতার দরজা !!!

"তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।" (সূরা নুরঃ ৩২)

উমার ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন-

" বিয়ের মাধ্যমে স্বচ্ছলতা তালাশ কর"

বর্ণিত আছে যে তিনি আরো বলেছেন-

" আমি এমন অদ্ভূত লোক আর দেখিনি যে বিয়ের মাধ্যমে স্বচ্ছলতা তালাশ করেনা অথচ আল্লাহ্ ওয়াদা করেছেন যে--"তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন।" "
তাহলে আল্লাহর বান্দাগণ কি আপনাদের বিয়ে করা থেকে আটকে রেখেছে??
যারা স্বচ্ছলতার দোহাই দেন, তারা কী আসলেই স্বচ্ছল হতে চান না??

আল্লাহ এর ওয়াদা কি আপনাদের জন্য যথেষ্ট নয়??

সংগৃহিত:

পঠিত : ১২৪৭ বার

মন্তব্য: ০