Alapon

নয়ন বন্ডের ক্রসফায়ার এবং রাষ্ট্রের খুনি বনে যাওয়ার পরিণতি...

রবীন্দ্রনাথ বহু আগেই বলে গেছেন, ‘রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি!’

বাঙালিরা যে আজ অবধি মানুষ হতে পারেনি, তা নয়ন বন্ডের ক্রসফায়ারের পর নতুন করে অনুধাবণ হল।

প্রকৃত মানুষ বলতে আসলে কী বোঝায়?

প্রকৃত মানুষ হল সে-ই, যার বিচার, বুদ্ধি, বিবেচ ও বিবেচনা রয়েছে। কিন্তু বাঙালি জাতির প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মাঝে এই গুনগুলো অনুপস্থিত দেখা যায়। যেমন, রিফাত হত্যাকান্ডের পরপরই কেউ কেউ বলেছিল, ‘নয়ন বন্ডদের একমাত্র শাস্তি ক্রসফায়ার।’

এর আগে ফেসবুক এক্টিভিস্ট ও সেলিব্রেটি Arif R Rahman নামের এক ভদ্রলোক স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘নয়ন বন্ডকে ক্রসফায়ার না দিলে আইন শৃঙ্খলার বাহিনীর দ্বারা সংগঠিত পূর্বের ক্রসফায়ারগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

কোনো ক্রসফায়ারের ঘটনা অন্য কোনো ক্রসফায়ারকে বৈধতা দিতে পারে না। বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড সবসময়ই অন্যায়। আর এই অন্যায় কাজকে যারা মিষ্টি বিলিয়ে সাধুবাদ জানাচ্ছে, তারা আসলে বিচার-বুদ্ধিহীন মানুষ ছাড়া আর কেউ না। সোজা বাংলায় বলতে গেলে, তারা সব পাগল।

আপনারা স্মরণ করতে পারেন কিনা, ২০০৩ সালে সারাদেশে অপারেশন ক্লিনহার্ট শুরু হয়। সেই অপারেশনের মাধ্যমে দেশের বেশ কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। সেসময় দেখা গেছে, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এরূপ বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডে জনগন ব্যাপক খুশি। খুশির চোটে কেউ কেউ মনকে মন মিষ্টি বিতরণ করেছে।

কিন্তু সেই ক্রসফায়ারের কোপ সাধারণ জনতার উপর নেমে আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি। বিএনপি সরকার নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ক্রসফায়ার চালু করেছে। আর তার যথার্থ ব্যবহার করছে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার।

নয়ন বন্ডের মত সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করে মূলত সাধারণ জনতার সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলা করা হয়। এরূপ দু-একটি ঘটনা ঘটিয়ে সরকার তার অতীতের সমস্ত বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডকে জনগনের চোখে জায়েজ প্রমাণ করতে চায়। বোকা জনতা যখন বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডে খুশি হয়ে মিষ্টি বিতরণ করে, তখনই সরকার সুযোগটা বেশি পেয়ে যায়। তখন নিজের স্বার্থের প্রয়োজনে, রাজনৈতিক প্রয়োজনে বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড চালায়।

দ্বিতীয় বিষয়টি হল, দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থাহীনতা। জনগনের এই উল্লাস প্রমাণ করে, দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর জনগনের আস্থা নেই। তাই তারা দেশের প্রচলিত আইন মেনে নয়ন বন্ডের বিচার হোক তা চায়নি। আস্থাহীণতার কারণেই তারা এরূপ বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডের পর আনন্দ উল্লাস করছে।

সর্বশেষ বিষয়টি হল, হত্যাকারী কে? হত্যাকারী যখন স্বয়ং রাষ্ট্র হয়ে যায়, রাষ্ট্র যখন দেশের আইনকে তোয়াক্কা না করে সরাসরি নিজেই বিচারক বনে যায়, ঠিক তখনই একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়ে। নয়ন বন্ডের হত্যাকান্ডের পর এমন ঘটনা যে আর ঘটবে না, তা কি রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারবে?
না পারবে না! অন্যদিকে রাষ্ট্রের খুনি বনে যাওয়া, যে কোনো রাষ্ট্রের জন্যই হুমকি স্বরূপ। আর বাংলাদেশ তেমনই হুমকির মধ্যে রয়েছে।

শেষ কথা, ক্রসফায়ার কোনো সমাধান নয়। বরং ক্রসফায়ার নিজেই একটি সমস্যা। এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। দেশের সাধারণ জনতার মাঝে দেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

পঠিত : ৭০২ বার

মন্তব্য: ০