Alapon

শেখ হাসিনার ছেলেমানুষির বলি হতে যাচ্ছে ৪৭ জন মানুষ

১৯৯৪ সালে হাসিনার উপর গুলিবর্ষণ এটা ছিল নিছক একটা ফাজলামো। এমনিই বলেছেন শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী মতিউর রহমান রেন্টু। তিনি ১৯৯৮ সালে লিখিত 'আমার ফাঁসী চাই' বইতে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। সম্প্রতি সেই সাজানো হামলা ও গুলি বর্ষণের ঘটনার মামলার রায় ঘোষণা করেছে পাবনার একটি আদালত। রায়ে স্থানীয় বিএনপির ৯ নেতার ফাঁসি, ২৬ জনের যাবজ্জীবন ও ১২ জনের দশ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতাকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার মামলার রায় নিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। সবাই অপরাধীদের শাস্তি চায়। এ শাস্তিতেতো কারো অখুশী হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ব্যাপার হলো-২৫ বছর আগের মামলায় বুধবার যাদেরকে ফাঁসি, যাবজ্জীবন ও কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তারা কি আসলেই অপরাধী ছিলেন? শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে গুলি বর্ষণের ঘটনার সঙ্গে কি আসলে জড়িত ছিলেন? এই গুলি কি আসলে বিএনপি নেতাকর্মীরা করেছিল নাকি শেখ হাসিনার সাজানো নাটক ছিল? সেদিনের গুলি বর্ষণের ঘটনার মূল রহস্য কি এদেশের মানুষ জানে? আসলে প্রকৃত ঘটনা ছিল ভিন্ন।

আমার ফাঁসী চাই বইয়ের ‘শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলি’ অধ্যায়ে মতিউর রহমান রেন্টু লিখেছেন, ১৯৯৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে বিমান যোগে যশোর হয়ে খুলনা এলেন। খুলনায় হাদীস পার্কে জনসভা করে রাতে নেত্রীর চাচাতো ভাই শেখ নাসেরের বড় ছেলে শেখ হেলালের বাসায় খেলেন এবং রাত কাটালেন। পরের দিন ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকাল ৯ টায় ট্রেন সফরে বের হলেন শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে। সাথে সাংবাদিক ভাড়া করে নিলেন নিউজের জন্য। শেখ হাসিনা প্রতিটি স্টেশনে নেমে নেমে ঘন্টা জুড়ে ভাষণ দিতেন সাংবাদিকরা লিপিবদ্ধ করতো।

এভাবে বিরতিহীন ভাবে শেখ হাসিনা স্টেশনে স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে সমাবেশ করেই গেলো। শেখ হাসিনা একই বক্তব্য বারবার রিপিট করায় বিরক্তি থেকে আর মধ্যরাতের সমাবেশে সাংবাদিকরা ট্রেন থেকে নেমে উপস্থিত হননি। তখন শেখ হাসিনাও আর সাংবাদিকদের নজরে রাখতে পারেনি নি।

রাত তখন ১১ টা ১৭ মিনিট। শেখ হাসিনার ট্রেনবহর ঈশ্বরদীতে পৌঁছানোর কিছু বাকী আছে। এমন সময় শেখ হাসিনা বলে উঠেন, এতো টাকা খরচ করে জামাই আদর করে ঢাকা থেকে যে সাংঘাতিকদের এনেছি তারা কি সব ঘুমাচ্ছে? তাদেরকে ডাইকা পাঠাও। তখন শেখ হাসিনার বেতনভুক্ত ব্যাগ বহনকারী মদন মোহন দাস বলে উঠলো-ডাইকা ঘুম ভাঙ্গান লাগব না। পিস্তল দিয়ে দুই রাউন্ড গুলি কইরা দিলেই সাংঘাতিকগো ঘুম কই যাইব, সব লাফাইয়া ট্রেন থেকে নিচে পইড়া যাইব।

সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনা তার ফুফাতো ভাই বাহাউদ্দিন নাসিমকে নির্দেশ দিলেন দে দুই রাউন্ড গুলি করে। আর নেতাকর্মীদের বলেন তারা যেন প্রচার করে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে।

ট্রেন ইশ্বরদী প্লাটফর্মে প্রবেশ করার আগ মুহুর্তে বাহাউদ্দিন নাসিম সাংবাদিকদের বগি লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছুড়লে শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশরাও ৫ /৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এসব গুলির আওয়াজ শুনে সাংবাদিকরা ভয়ে ট্রেনের ভেতর গড়াগড়ি শুরু করে। আর পরিকল্পনা মতো আমরা সাংবাদিকদের বগিতে এসে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য গুলি করা হয়েছে বলে প্রচার করতে থাকি। আর ঈশ্বরদীতে জনসভায়আমির হোসেন আমুও মাইকে প্রচার করতে থাকেন যে, শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গুলি করা হয়েছে।

রেন্টু আরও লিখেছেন, পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর বগুড়া সার্কিট হাইজে গিয়ে আমরা যারা এঘটনা জানি তারা হাসাহাসি করি। হাসাহাসির এক পর্যায়ে গুলির এই ঘটনা নিয়ে হরতাল ডাকার সিদ্ধান্ত হয়।

এই ছিল সেদিনের মূল ঘটনা। কিন্তু, সাজানো এই গুলির ঘটনায় জড়ানো হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে। এভাবেই শেখ হাসিনার ছেলেমানুষির বলি হতে যাচ্ছে অর্ধশতাধিক মানুষ। 

পঠিত : ২৮৭৮ বার

মন্তব্য: ০