Alapon

আমাদের কি কোনো দ্বায় নেই?

ছয় বছর এর শিশুকে শুয়োরের দল মেরে ফেলেছে। আমাদের কি কোনো দায় নেই? কিছুই করার নেই? আমরা নিরব থাকলে, আমরাও দায়ী হবো।

বর্তমানে আমরা একটা সেক্স ওয়ার্ল্ডে বাস করছি। এই অশ্লীলতার আগ্রাসনের কালো থাবা সমাজের সব স্তরে নেমে এসেছে। টিভি, ফেসবুক, ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সব গণমাধ্যম যেন কামনা তৈরির কারখানা। আবার হিন্দি স্যাটেলাইট চ্যানেলের আগ্রাসনের ফলে অশ্লীলতার জোয়ার এদেশও এসে পড়েছে।

তার উপর আছে পর্ণ সাইটের ইউটিউব ভিডিওয়ের ছড়াছড়ি। এন্ড্রয়েড সেট আর ইন্টারনেট এখন হাতের মুঠোয়। পর্ণ সাইটের বিজ্ঞাপন হাতছানি দেয়, ত্বরিত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়া মুভিতে নায়িকাদের স্বল্প পোশাকের যৌন আবেদনময় উপস্থিতি, আইটেম সং, বিলবোর্ডে পণ্যের বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে অর্ধনগ্ন নারীর আবেদনময় উপস্থিতি, চায়ের দোকানের ছোট্ট টিভিতে কিংবা ইলেকট্রনিক শোরুমেও সারাদিন চলতে থাকে নারীদেহের উমত্ত নাচ-গানের মহরা, সবমিলিয়ে চারিদিকে যেন যৌন উত্তেজক পরিবেশ।

তারপর সেই পর্দার বা রাস্তায় সুরক্ষিত কোনো স্বল্প পোশাকের নারীকে দেখে স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। তার সেই কামরূপ-কামাখ্যার চোখ তখন শিকার খুঁজতে থাকে। তার নোংরা চোখ পথের ধারের নিষ্পাপ শিশু অথবা নির্জন রাস্তায় চলা সাধারণ নারী, রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পাগলিটিকে তার কামনা-বাসনা পূরণের বস্তু হিসেবে টার্গেট করে ফেলে এবং ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ করে।

‘ধর্ষিতার পোশাক’ না ‘পুরুষের মানসিকতা’ এইসব ডিবেট বাদ দিন, আপনি নিজেই কি ধর্ষণকে প্রমোট করছেন না? আপনি তো নিজেই যৌন উত্তেজক পরিবেশ তৈরি করে যাচ্ছেন। আপনি কি নিচের কাজগুলো করেছেন?

১) ডিশের লাইনের বদৌলতে হিন্দি নাচ-গান, মুভি, সিনেমা আপনার স্ত্রী, বোন, ছেলে, মেয়ে গোগ্রাসে গিলছে। তাদের মস্তিষ্কে আপনি অশ্লীলতার বীজ রোপণ করছেন। আপনার স্ত্রী, কন্যা, বোন তাদের মতো কাপড় পরে ‘মাল’ সেজে বাহিরে বের হচ্ছে, অন্য পুরুষদের যৌন কামনার বস্তু হচ্ছে, আর আপনিও এমন স্মার্ট স্ত্রীর অধিকারী বলে গর্ব করছেন, আপনার কন্যাকে নায়িকার মডেলের পিঠ খোলা দামী শর্ট ড্রেস পরিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। একদিন সে হবে যৌন উত্তেজক এটম বোম। আপনার ছোট ছেলেটি ড্যাব ড্যাব করে স্বল্প বসনার নাচ দেখে আপনার সাথে বসে, একদিন সেই হবে কোনো ইভটিজার বা জঘণ্য ধর্ষক। ডিশের লাইন কেটে দিয়েছেন? বা কখনো এসব থামিয়েছেন?

২) রাস্তার পাশে চায়ের দোকান/ইলেকট্রনিক্সের দোকানে ফ্রিতে দেখানো নাচ-গান বন্ধের জন্য কখনো বলেছেন? বউ গ্রামে রেখে আসা শ্রমজীবী মানুষগুলোর লালা ঝরতে দেখেছেন, নিজেও লালা ঝরিয়েছেন, কিন্তু কখনো বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন কি? একা না হোক, ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করুন, এসব বন্ধের চেষ্টা করুন। এলাকার মুসুল্লিদের নিয়েও করতে পারেন।

৩) গায়ে হলুদ, ডিজে পার্টি, বার্থডে পার্টিতে যে নাচ-গান আর অশ্লীলতাগুলো করা হয়, তা থামানোর চেষ্টা করেছেন কি? নিজের/আত্মীয় স্বজনেরটাতে? নিজে না করলে, এসব অনুষ্ঠা্নে যাওয়া বন্ধ করুন। (আত্মীয়ের দাওয়াতে না গেলে গুনাহ হবে এসব ভাবার কিছু নাই কারণ যেখানে অশ্লীলতা থেকে আল্লাহ্‌ দূরে থাকতে বলেছেন) উপস্থিতি কমলে বা দর্শক না পেলে, এসব অশ্লীল পার্টি এমনিতেই বন্ধ হবে।

৪) সবাই মিলে জমায়েত হয়ে প্রতিবাদ করি, বিলবোর্ড, বিজ্ঞাপনে নারীদেহের নগ্নতা, অশ্লীলতা বন্ধের দাবী জানাই, ইউটিউব বা অনলাইনে, ডিশের দোকানে অশ্লীল চ্যানেল, পর্ণ ভিডিও, হিন্দি চ্যানেল বন্ধের দাবী জানাই। সরকারের কাছে লিখিত দাবী জানাই।

৫) রাস্তায় সেটে থাকা সিনেমার অশ্লীল পোস্টার এক টানে ছিঁড়ে ফেলুন, কেউ কিছুই বলবে না, ছুটির দিনে কয়েকজন মিলে করতে পারেন। শুধু দরকার একটু সৎ সাহস আর উদ্যোগ।

৫) অশ্লীলতা প্রমোটকারী পণ্যগুলো বর্জন করি, ব্যাভিচারের মদদদাতা ইউনিলিভারের ‘ক্লোজ আপ’ থেকে শুরু করে লাক্স, হুইল সব পণ্যের তালিকা করে বর্জন করি। গান্ধীজির স্বদেশী আন্দোলন সফল হতে পারলে আমাদের অশ্লীলতা বিরোধী আন্দোলন সফল হবে না কেন?

৬) ধর্ষিতা যেই হোক, হিন্দু/ মুসলিম/ রাস্তার পাগলী/ বোরকা পরিহিতা/ সাধারণ পোশাকের/ যেমনই হোক, সে মজলুম, তার পোশাক আর চরিত্র নিয়ে ব্যবচ্ছেদ না করে মজলুমের পাশে দাঁড়াই, তাকে আর্থিক, মানসিক আর আইনী সাহায্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আর ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করতে সবাই এক হই, বিচারব্যবস্থাকে চাপ দেই, পত্রিকা, মিডিয়ায় ধর্ষকের চেহারা, পরিবারের ঠিকানা প্রচার করি, তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করি।

অশ্লীলতার ধেয়ে এসেছে, এর আগ্রাসন এখনই বন্ধ করতে হবে নইলে এই সমাজ একদিন মুখ থুবরে পড়বে। চলুন শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ বন্ধ করি, ঘরে ঘরে ধর্মীয় শিক্ষা চালু করি। এই সমাজ আমাদের, একে কলুষমুক্ত করার দায়িত্ব প্রত্যেক ঈমানদারের।

“হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, কখনো শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না; তোমাদের মধ্যে যে কেউই শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে (সে যেন জেনে রাখে), সে (অভিশপ্ত শয়তান) তো তাকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ দেবে…” [সূরা নূর, আয়াত ২১]

কার্টেসী বাই: Dr-Umme Bushra Sumona

পঠিত : ৭৯২ বার

মন্তব্য: ০