Alapon

নিজের গড়া দেশে বড়ই অপ্রাসঙ্গিক সিরাজুল আলম খান

যদি আমাকে প্রশ্ন করেন পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাওয়া বা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এককভাবে কে বেশি ভূমিকা রেখেছে? এর উত্তর হবে সিরাজুল আলম খান।

নোয়াখালীর সন্তান এই সিরাজুল আলম খান পড়েছেন ঢাকা ভার্সিটিতে গণিত বিভাগে। গণিতে পড়লেও গণিতবিদ না হয়ে হয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও তাত্ত্বিক। ১৯৬১ সালে তিনি ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ হলেও গোপনে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ লালন করতেন। বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক করার লক্ষ্যে তিনি দেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করতে চেয়েছেন। এই লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে তিনি এবং তার মতের অনুসারীদের নিয়ে নিউক্লিয়াস নামে একটি গোপন সংগঠন তৈরি করেন। এই নিউক্লিয়াস পরে বিএলএফ বা বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স নামে প্রকাশ্যে আসে।

১৯৬২-’৭১ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন, ৬-দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন, ১১-দফা আন্দোলন পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন করে এই ‘নিউক্লিয়াস’। আন্দোলনের এক পর্যায়ে গড়ে তোলা হয় ‘নিউক্লিয়াসে’র রাজনৈতিক উইং বি.এল.এফ এবং সামরিক ইউনিট ‘জয় বাংলা বাহিনী’।

স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে ‘জয় বাংলা’ সহ সকল স্লোগান নির্ধারণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে “...এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” বাক্যসমূহের সংযোজনের কৃতিত্ব ‘নিউক্লিয়াসে’র। এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিরাজুল আলম খানের ভুমিকাই ছিল মুখ্য। ১৯৬৯-’৭০ সনে গন-আন্দোলনের চাপে ভেঙে পড়া পাকিস্তানী শাসনের সমান্তরালে ‘নিউক্লিয়াস’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠন করা হয় ছাত্র-ব্রিগেড, যুব-ব্রিগেড, শ্রমিক-ব্রিগেড, নারী-ব্রিগেড, কৃষক-ব্রিগেড, সার্জেন্ট জহুর বাহিনী। এদের সদস্যরা ভেঙ্গে পড়া পাকিস্তানী শাসনের পরিবর্তে যানবাহন চলাচল, ট্রেন-স্টীমার চালু রাখা, শিল্প-কারখানা উৎপাদন আব্যাহত রাখা এবং থানা পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খ্লা রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করে। নিউক্লিয়াসের সদস্যদের দ্বারা এইসব দুরূহ কাজ সাম্পাদনের জন্য কৌশল ও পরিকল্পনাও ‘নিউক্লিয়াস’র।

১৯৭০-’৭১ সন নাগাদ বিএলএফ-এর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ হাজারে। এদের প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উন্নত সামরিক ট্রেনিং প্রাপ্ত হন এবং ‘মুজিব বাহিনী’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্ত ১১টি সেক্টরের পাশাপাশি ৪টি সেক্টরে বিভক্ত করে বি.এল.এফ-এর সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা ও কৌশল ছিল কেবল ভিন্ন ধরনের নয়, অনেক উন্নতমানের এবং বিজ্ঞানসম্মত। বিএলএফ এর চার প্রধান ছিলেন সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক, আব্দুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমেদ। বিহারীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে দেশকে অরাজক বানানোর মূল হোতা নিউক্লিয়াস।

১৯৭১ সনের ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় উদ্বোধনী সভা স্থগিত ঘোষণার পরপরই ২রা মার্চ বাংলাদেশর প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণসহ ৩রা মার্চ ‘স্বাধীন বাংলার ইশতেহার’ ঘোষণার পরিকল্পনাও ‘নিউক্লিয়াসে’র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে এই দুটি কাজ ছিলো প্রথম দিকনির্দেশনা। আর এই দুই গুরুদায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে আ.স.ম আবদুর রব এবং শাজাহান সিরাজ। নতুন দেশের নাম বাংলাদেশ হবে এ সিদ্ধান্তও সিরাজুল আলম খানের।

এই কথাগুলো বলার কারণ কিছুদিন আগে সিরাজুল আলম খানের একটি আত্মজৈবনিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয় 'আমি সিরাজুল আলম খান' নামে। দেশে এখন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির সরকার চলছে। হাসিনা সরকার এই বইটি নিষিদ্ধ করে দেয়। আফসোস! এক সময়ের প্রতাপশালী এই নেতার বই নিষিদ্ধ হয়েছে তার হাতে গড়া দেশে। অথচ এই খবর পাত্তা পায়নি কোথাও। কেউ এর ঘটনার প্রতিবাদ তো দুরস্থান খবর পর্যন্ত প্রকাশ করেনি।

হে সিরাজ! তোমার ষড়যন্ত্রে তৈরি হওয়া দেশে তুমি আজ বড়ই অপ্রাসঙ্গিক। তুমি তোমার জিল্লতি দুনিয়াতেই উপভোগ করছো। আজকে তোমার একটা চ্যালাও নাই তোমার পাশে দাঁড়াবে।

পঠিত : ২০২২ বার

মন্তব্য: ০