Alapon

কাবার দরজায় অঙ্কিত হয়েছে যার নাম

ইসলামী জমিয়তে তালাবা’র দ্বিতীয় নাজিম-ই-আলা বা কেন্দ্রীয় সভাপতি খুররম জাহ মুরাদ এশিয়ার একজন বিখ্যাত প্রকৌশলী। একইসাথে তিনি ছিলেন দা’য়ী, সংগঠক, ছাত্রনেতা, হাদীস বিশারদ, ইসলামিক চিন্তাবিদ এবং সেরা প্রকৌশলী। তিনি একমাত্র অনারব যার নামে কাবার একটি দরজার নাম হয়েছে বাবে মুরাদ। 

জন্ম : 
খুররম জাহ মুরাদ ১৯৩২ সালে ভারতের ভূপালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তাঁর পরিবার লাহোরে চলে আসেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন। 

শিক্ষা ও ক্যরিয়ার :
খুররম জাহ মুরাদ করাচির NED University of Engineering and Technology থেকে পুরকৌশল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ডিগ্রি লাভ করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত পান এবং ইসলামী আন্দোলন ও ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তার ক্যরিয়ার শুরু করেন। তিনি একই বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন University of Minnesota থেকে। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাকিস্তানের বহু উন্নয়ন কাজ ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার সাথে যুক্ত ছিলেন। আইয়ুব খানের আমলে ১৯৬৫ সালে মাতুয়াইল, মুসলিম নগর, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানাসহ ৫৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বন্যামুক্ত এলাকা গড়তে প্রতিষ্ঠা করা হয় ডিএনডি বাঁধ। এই প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন খুররম জাহ মুরাদ। 

১৯৭৫ সালে সৌদি বাদশাহ পবিত্র কাবা ঘরের এক্সটেনশন কাজ শুরু করেন। এসময় ডাক পড়ে বিখ্যাত প্রকৌশলী ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব ইঞ্জিনিয়ার খুররম জাহ মুরাদের। সৌদি বাদশাহ পারিশ্রমিক হিসেবে মুরাদ যা চাইবেন তাই দিতে চাইলেন। তিনি এই কাজের জন্য কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন নি। এক্সটেনশন কাজের ডিজাইন জমা দিয়ে মুরাদ বললেন- "আপনি আমাকে দিতে চেয়েছেন এটা আপনার বদান্যতা। আমি এর পুরস্কার পরকালে আল্লাহর কাছ থেকে নিতে চাই এটা আমার বদান্যতা" এই বদান্যতার পুরস্কার হিসেবে মসজিদুল হারামের আটটি দরজার মধ্যে একটি দরজা ইঞ্জিনিয়ার মুরাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। দরজাটির নাম 'বাবে মুরাদ'। 

সাংগঠনিক জীবন :  
খুররম জাহ মুরাদ পাকিস্তানে তার দাওয়াতী কার্যক্রম শুরু করলেও গোটা এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকায় তিনি দাওয়াতের কাজ ও ইসলামী সংগঠন প্রতিষ্ঠার কাজ করেছেন। একজন শিক্ষক ও দা’য়ি হিসেবে তিনি বহু মানুষে প্রেরণার প্রতীক হয়ে আছেন। পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রধান হিসেবে পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য ও আফ্রিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম চালিয়ে তিনি ইসলামী আন্দোলনের যুবকদের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। 

১৯৫১-১৯৫২ সেশনে খুররম জাহ মুরাম ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিম-ই-আ’লার দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী ছাত্রসংঘের সংবিধান প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সংবিধানের খসড়া তারই তৈরী করা। তিনি জামায়াতে যোগ দেয়ার পর পূর্ব-পাকিস্তানে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা মহানগরীর আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, UK এর ডিরেক্টর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মাওলানা মওদুদী র. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘তরজুমানুল কুরআনের’ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৯৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খুররম জাহ মুরাদ পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।        

প্রকাশনা : 
খুররম জাহ মুরাদ বহু গ্রন্থের রচয়িতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, কুরআন অধ্যয়ন সহায়িকা, ইসলামী আন্দোলনঃ কর্মীদের পারষ্পরিক সম্পর্ক, ইসলাম-দ্যা ইজি ওয়ে, হু ইজ মুহাম্মাদ, গিফট ফ্রম মুহাম্মদ, শরীয়াহ-দ্যা ওয়ে টু জাস্টিস, ইসলাম এন্ড টেরোরিজম, ঈমানদারী, নিয়ত এবং আমল ইত্যাদি।  

উক্তি : 
“উদ্দেশ্য বা নিয়ত হল আমাদের আত্মার মত অথবা বীজের ভিতরে থাকা প্রাণশক্তির মত। বেশীরভাগ বীজই দেখতে মোটামুটি একইরকম, কিন্তু লাগানোর পর বীজগুলো যখন চারাগাছ হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেওয়া শুরু করে তখন আসল পার্থক্যটা পরিস্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে। একইভাবে নিয়ত যত বিশুদ্ধ হবে আমাদের কাজের ফলও তত ভালো হবে।” 

“কেউ যদি কুরআনের শরণাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও অন্তরে সংস্পর্শ না লাগে, হৃদয় আলোড়িত না হয়, জীবন অপরিবর্তিত থেকে যায়, খালি হাতে ফিরেন, যেভাবে এসেছিলেন ঠিক সেভাবেই প্রত্যাবর্তন করেন, তাহলে তার চেয়ে মর্মান্তিক দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে?” 

পঠিত : ৩৪৬৬ বার

মন্তব্য: ০