Alapon

প্রিয়া সাহার অভিযোগ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি পরিকল্পিত?

ট্রাম্পের কাছে প্রিয়ার সাহার অভিযোগকে যারা বিচ্ছিন্ন ঘটনা কিংবা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলই উদ্দেশ্য বলছেন, তারা বুঝে শুনেই সরলমনা এ জাতিকে ধোকা দিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ ও সাহায্যের নামে হস্তক্ষেপ কামনার পর প্রিয়া সাহাকে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাঈলের ইনভাইটেশনে একটি অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে।

এই প্রিয়া সাহা, রানা দাস গুপ্ত, খুশি কবির, সুলতানা কামাল, শাহরিয়ার কবির, আবুল বারাকাত গং সবাই একই রসুনের একেকটা কোষা, যার গোড়া একসাথে জট পাকানো। কেউ কাজ করেন বেশি সাউন্ড হয় কম। কেউবা একদম নিরিবিলি আবার কেউ কেউ কাজ ও সাউন্ড দুইটাই বেশি করে করেন।

আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, এরা প্রায়ই একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেন। এর সাথে কারো দ্বীমত নেই। খুবই সুন্দর শ্লোগান। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই "অসাম্প্রদায়িক" শব্দের আড়ালে তারাই মুলত আরেকটি সম্প্রদায়কে (হিন্দু) সব সময় প্রমোট করেন। একই সাথে মুসলিম সম্প্রদায়কে মৌলবাদ বলে গালি দিয়ে থাকেন।
তো কোন একটি সম্প্রদায়কে প্রমোট করে বা হাইলাইট করে একই সাথে মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রতিপক্ষ বানিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হয় কিভাবে?

এই ইসকন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ প্রতিটিই একেকটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন। এদের সকল তৎপরতার মুল ফোকাসই হলো বিদেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা করা, মুসলিম সম্প্রদায় ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কৌশলে আঘাত করা এবং একই সাথে হিন্দু সম্প্রদায় ও তাদের কালচারকে দেশী ও বাংগালী কালচার বলে বাংলাদেশের মানুষের মন ও মননে গেঁথে দেয়া। ইসরাঈলসহ দেশে বিদেশে যারা মুসলমানদের স্বীকৃত দুশমন, তাদের সাথে হাত মিলিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছে। এদের ফান্ড আসে বাইরে থেকে। সেখান থেকে বিশাল অংশ ব্যয় করে মিডিয়া ও বিবেক বিক্রিত কিছু বুদ্ধিজীবীদের পেছনে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, এরা সব সময় থাকে সরকারি নজরদারির বাইরে। সরকারের নজরদারির সকল ফোকাস হলো ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে।

সাম্প্রতিক এদের যে একটু ভিন্ন চেহারা জাতির সামনে প্রকাশ পেয়েছে এটা তাদের পরিকল্পনার সেকন্ড ফেইজ। বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান অস্থির এবং কার্যত অভিভাবকহীন সময়কে তারা বেছে নিয়েছে একটু ঝাকুনি দিয়ে পরখ করার জন্য। দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্র ও প্রসাশনের সকল সেক্টরে পরিকল্পিত লোক বসানোর কাজ চলে আসছে। যার ফলাফল হলো ৯.৭% সংখ্যালঘুদের দেশে সরকারি সেক্টরে কাজ করছেন ২৫% এর বেশি। এটা সরকারী হিসাবেই। পৃথিবী নামক এই গ্রহে আর কোন দেশে এমন নজির নেই। তবুও নাকি তারা সুখে নেই। 
আসলে এই রিক্রুটমেন্টের ধারাবাহিকতা নিয়ে তারা চিন্তিত। তারা চান ভবিষ্যতেও এই রেশিও কন্টিনিউ করুক। কিন্তু তাদের ভাবনার বিষয় হলো, এটা শেখ হাসিনার তৃতীয় মেয়াদ। চতুর্থ মেয়াদে তার কন্টিনিউটি নিয়ে তাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অন্যদিকে তাদের স্বর্গ রাজ্য ভারতে প্রচন্ড মুসলিম বিরোধী দল বিজেপি এবং এর নেতা মোদিজী আছেন দ্বিতীয় মেয়াদে। নেক্সট টাইম তার না আসার আশংকাও আছে তাদের মনে।

এদিকে বিশ্বের মোড়ল আমেরিকায় আছেন 'তালে মাতাল জাতে ঠিক' মুসলিম বিরোধী মি. ট্রাম্প। ইউকেতেও যিনি প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন, সেই বরিস জনসনও মুসলিম বিরোধী বক্তব্যের জন্য বহুল আলোচিত। নেকাবপরা নারীদের তিনি লেটার বক্সের সাথে তুলনা করে অসম্মানজনক বক্তব্য দিয়ে কনজারভেটিভদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। দেশীয় এবং বৈশ্বিক এমন কনজারভেটিভ ও মুসলিম বিরোধী এনভায়রনমেন্টকেই প্রিয়া সাহা গংরা তাদের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

তারা বিশ্বাস করেন, তাদের এই সাম্প্রদায়িক তৎপরতায় মুসলিম সম্প্রদায় ক্ষুব্দ হলেও আদতে তারা কিছুই করতে পারবেনা। পুলিশ দিয়ে মধ্যরাতে ভোট কাস্ট করে ভারতের সাপোর্ট নিয়ে ক্ষমতায় থাকা সরকার তাদের কিছুই করবে না। এমনকি তাদের উপর কোন নজরদারিও করা হবে না। দিল্লি থেকে মোদিজির ছোট্ট একটা টেক্সট মেসেজই শেখ হাসিনাকে চুপ করিয়ে দিতে যথেষ্ট।

প্রিয়া সাহার রাষ্ট্র বিরোধী কাজের পর সরকারের ডিফেন্সিভ অবস্থান এমন সিগনালই বহন করছে। যে আওয়ামিলীগের আমলে আঙুল ফুলে তারা কলাগাছ হয়েছে, সে আওয়ামী লীগকেই তারা পাত্তা দিচ্ছেনা।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র রক্ষা ও মুসমলামনাদের নিজেদের কৃষ্টি-কালচার হেফাজতের উদ্দেশ্যে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অধিক সচেতন থাকার কোন বিকল্প নেই।


পঠিত : ১৩০১ বার

মন্তব্য: ০