Alapon

ফিলিস্তিনিদের জন্য আমেরিকার পক্ষ থেকে 'ডিল অফ দ্যা সেঞ্চুরি'...

ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশ্নার জুন মাসে ডিল অফ দ্যা সেঞ্চুরির ইকোনোমিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সম্পর্ক নিয়ে ধারনা রাখা প্রায় সকল এক্সপার্ট এই প্ল্যানকে আকাশের চাঁদ বা পাই ইন দ্যা স্কাই বলে আখ্যা দিয়েছে আর আমেরিকা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে পরিকল্পনাটিকে 'পিস ফর প্রস্পারিটি' নামকরন করা হয়েছে।


এর উপর কিছু পয়েন্টঃ


১) ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের মধ্যে কোন ধরনের রাজনৈতিক চুক্তি এই পরিকল্পনায় রাখা হয় নাই। পরিকল্পনাটি আপাতত এবং মুলত একটা অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।


২) ফিলিস্তিনিদের জন্য ভবিষ্যতে আলাদা রাষ্ট্র বা স্টেট রাখা হবে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে জ্যারেড কুশনার (পরিকল্পনা টিম লিডার) জানিয়েছে ফিলিস্তিনিরা আলাদা রাষ্ট্র পাওয়ার যোগ্যতা এখনও অর্জন করে নাই। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় গাযা এবং অয়েস্ট ব্যাংকের জল, স্থল আর বায়ু এই তিনটাই বরাবরের মতো ইসরায়েলি কন্ট্রোলে থাকবে।


৩) ফিলিস্তিনিদের দাবী মুলত রাজনৈতিক, যেমন রাইট টু রিটার্ন, ৬৭ এর অকুপেশানের আগের বাউন্ডারিতে ফেরত, ইসরায়েলিদের সেটেলমেন্টের স্থগিত, ইস্ট জেরুজালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী, গাজার অবরোধ তুলে দেয়া ইত্যাদি নিয়ে কোন ছাড় ইসরায়েল দিতে যাচ্ছে না। সেটেলমেন্ট অব্যহত থাকবে যাতে প্রতিদিন ইসরায়েলের সেনাদের সহায়তায় ফিলিস্তিনিদের বসতবাড়ি , ফসলি জমি থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে ইসরায়েলিদের বসানো হচ্ছে। এই সপ্তাহেই ইস্ট জেরুজালেম থেকে ১০০ ফিলিস্তিনি বাড়ি ইসরায়েলি সেনারা বুলডোজার আর বিস্ফোরক দিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছে, যেসবের লিগ্যাল মালিক ছিল ফিলিস্তিনিরা (মুসলমান যারা ইসরায়েলের নাগরিক) ।


৪) এই প্ল্যান করার সময় জ্যারেড ফিলিস্তিনের কারো সাথেই আলোচনা করে নাই, কেবল ইসরায়েলিদের সাথে করেছে। তার টিমে আছে সব সেটেলমেন্টে বিশ্বাসকারী আমেরিকান আর বিহাইন্ড দ্যা সিনের ইসরায়েলিরা। স্বভাবতই ইসরায়েল এই প্ল্যান দেখে অত্যন্ত আনন্দিত কিন্তু ফিলিস্তিনিরা এই প্ল্যানকে রিজেক্ট করে দিয়েছে। এমনকি ফিলিস্তিন অথোরিটির মাহমুদ আব্বাস গতকাল ইসরায়েলের সাথে করা গত ২৫ বছরের চুক্তি সমুহ বাতিল বলে ঘোষণা দিয়েছে। মুলত ফিলিস্তিন অথোরিটি আর ইসরায়েলের মাঝে করা এসব চুক্তি দিয়েই ইসরায়েল অয়েস্ট ব্যাঙ্ক রামালার পানি ইলেক্ট্রিসিটি, ব্যবসা, আয়কর, ব্যবসায়িক পন্য ইন এন্ড আউট অফ অয়েস্ট ব্যাঙ্ক,, কে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ঢুকতে পারবে আর কে বের হতে পারবে ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।


৫) ডিল অফ দ্যা সেঞ্চুরি অনুযায়ী এই পরিকল্পনায় অয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও গাজায় ২7.5 বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মিসর, জর্দান ও লেবাননে প্যালেস্টাইনের জন্য যথাক্রমে 9.19 বিলিয়ন ডলার, 7.4 বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং 6.3 বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের আহ্বান রাখা হয়েছে। আর প্রকল্পগুলি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, পানি, উচ্চ-প্রযুক্তি, পর্যটন ও কৃষি খাতে রয়েছে। বলা হয়েছে এতে করে মিলিওন জবস ক্রিয়েট হবে। কিন্তু বলা হয় নাই এই মিলিয়ন জবস কেবল ফিলিস্তিনিদের জন্য।


৬) প্রকল্প বাস্তবায়নের চাবিকাঠি থাকবে মুলত ইসরায়েলের হাতে । প্রকল্পগুলো কন্ট্রোল করবে ইসরায়েল। জ্যারেডের মতে ফিলিস্তিনিরা সুশিক্ষিত নয় এবং নিজেদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করার সক্ষমতা তাদের নাই। ১৯৩০-৪০ এর দশকে যখন ভারত উপমহাদেশ নিজেদের স্বাধীনতার দাবি করেছিল তখন চার্চিল অনুরুপ কথাই বলেছিল আমাদের ইঙ্ক্যাপাবিলিটি নিয়ে। কলোনাইজার-অকুপায়াররা এই যুক্তি দেখিয়েই তাদের অকুপেশান জারি রাখে।


৭) এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আসবে মুলত সৌদি আরব আর আরব আমিরাত থেকে, আর আঞ্চলিক ব্যবসায়ীদের থেকে। যদিও এখন পর্যন্ত সৌদি আরব কিংবা আরব আমিরাত কোন অর্থনৈতিক কমিট্মেন্ট করে নাই।


৮) এখানে যেই কথা মনে রাখা প্রয়োজন তা হচ্ছে বিগত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন দাতা দেশ থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য যেই অর্থ আসে , ব্যবসা খাতে কিংবা পিওর ডোনেশান তা কন্ট্রোল করে ইসরায়েল। আর এর খুব কমই ফিলিস্তিনিদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের হাতে সময় মতন পৌছায়। বেশিরভাগ সময়েই ইসরায়েল নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাতে এসব অর্থ ফিলিস্তিনিদের জন্য গ্রহন করে না। করলেও তার উপর কড়া কর আরোপ করে, ব্যবসায়িক আর শিল্প খাতে বাইরে থেকে কি গুডস আসবে, বর্ডার দিয়ে যাওয়া আসা করবে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের। এতে করে সময় মতন কোন ব্যবসা তাদের গুডস ডেলিভারি পায় না বা দিতে পারে না। আর্টিফিশিয়ালি গাযা আর অয়েস্ট ব্যাঙ্ককে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করার সকল মেকানিজম ইসরায়েল আরোপ করে রেখেছে।


৮) এই প্রকল্পে আমেরিকার পক্ষ থেকে যেইসব প্রোগ্রাম রাখা হবে বলে উল্লেখ করেছে তা মুলত বিগত আমেরিকান সরকার বাস্তবায়ন করেছিল যা ট্রাম্প এসে বন্ধ করে দিয়েছে। অর্থাৎ ট্রাম্প মুলত পুরাতন কিছু প্রকল্প ফের বাস্তবায়নের কথা বলেছে। নতুন কিছু নয়।


৯) ইতিমধ্যে সৌদি আরব, বাহরাইন, আর আরব আমিরাত ছাড়া আরব অঞ্চলের বাকি সব দেশ এই পরিকল্পনা রিজেক্ট করে দিয়েছে, বিশেষত জর্ডান আর লেবানন। ইওরপিয়ান ইউনিয়ন এই পরিকল্পনা বাতিল করে পূর্বের টু স্টেট পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের কথা বলছে।


10) মুলত এই পরিকল্পনা হচ্ছে আরব দেশের টাকায় ইসরায়েলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা আর জর্ডান-লেবানন-মিসরে ফিলিস্তিনিদের চালান করে দেয়ার পরিকল্পনা।


লিখেছেন: সাবিনা আহমেদ

পঠিত : ১৩০৪ বার

মন্তব্য: ০