Alapon

আবু বকর জাকারিয়ারা আলেম নামের জালেম!

ইসলামের ইতিহাস পড়তে গেলেই এক শ্রেণির দরবারি আলেমের কথা পাওয়া যায়। যারা কিনা, রাজা-বাদশাহদের মন জোগাতে উলটা পালটা ফতোয়া দিতো। তাদের ফতোয়ায় জালেম হয়ে যেতো মজলুম, আর মজলুম হয়ে যেতো অপরাধী।

তখন ভাবতাম, এমন আলেম কী আদৌ থাকতে পারে, যে জেনে শুনে নিজের জন্য জাহান্নাম ক্রয় করে নিবে! সামান্য কিছু টাকা, যশ, খ্যাতির জন্য কোনো আলেম কি কখনো এমন উলটা পালটা ফতোয়া দিতে পারে। এসব আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতো। কিন্তু যখন তা নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি, তখন আর অবিশ্বাস করি কী করে! নিজের চোখ কানকে অবিশ্বাস করাই কী করে!

শায়খ আবু বকর জাকারিয়া! ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি ইতিমধ্যেই নিজের জাত চিনিয়েছেন। কাশ্মীর ইস্যুতে তিনি নতুন করে নিজের জাত চেনালেন। তিনি বলেছেন, ‘কাশ্মীরের জন্য মিছিল মিটিং করা কিংবা যুদ্ধ করা জায়েজ নাই।’

কাশ্মীরের উপর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর সারা বাংলাদেশের তৌহিদি জনতা যখন প্রতিবাদে ফেটে পড়ল তখন এই আবু বকর জাকারিয়া গংরা চুপচাপ ছিল। আমার তখনই মনে হয়েছিল, তারা হয়ত সৌদি আরবের প্রতিক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। যেই না সৌদি-ইমারাত জোট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পুরষ্কৃত করল এবং সংবর্ধনা দিল, তখনই সব পরিষ্কার হয়ে গেল। আর পরিষ্কার হওয়ার সাথে সাথে আবু বকর জাকারিয়া গংরা সৌদি রাজতন্ত্রের স্বার্থ সংরক্ষণে ফতোয়া প্রসব করা শুরু করলেন।

আবু বকর জাকারিয়াদের ফতোয়া যে সৌদি রাজ পরিবারের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, তার একটি ছোট্ট প্রমাণ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। কিছুদিন আগে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে জাকারিয়া সাহেব বলেছেন, ‘ইসলামে কিন্তু রাজতন্ত্র পুরোপুরি হারাম নয়। আল্লাহর রাসূল রাজতন্ত্রকে পুরোপুরি হারাম করে যাননি। ইসলামে রাজতন্ত্রের বৈধতা রয়েছে।’

এই কয়েকটা বাক্যই প্রমাণ করে, জাকারিয়াদের ফতোয়া সৌদি রাজতান্ত্রিক পরিবার থেকে নাজিল হয়। এরও আগে তুরস্কে সৌদি আরবের অ্যাম্বাসি অফিস সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন এই জাকারিয়া গংরা বলেছিল, এগুলো তুরস্কের চংক্রান্ত। কিন্তু যখন প্রমাণিত হল, এই হত্যাকান্ডের সাথে সৌদি যুবরাজ সালমান জড়িত। তখন এই জাকারিয়া গংরাই ফতোয়া দিয়েছিলেন, তাকে হত্যা করাই উচিত হয়েছে। জাকারিয়াদের মত মুফতিদের উচিত-অনুচিত সৌদি রাজ পরিবার থেকেই পাশ হয়ে আসে।

জাকারিয়া গং বা সৌদি রাজপরিবারের অবস্থান কাশ্মীরের জনগনের বিপক্ষে কেন?
পলিটিক্যাল ইসলাম। সৌদি রাজপরিবার সর্ববস্থায় পলিটিক্যাল ইসলামের ভয়ে ভীত থাকে। তারা ভাবে পলিটিক্যাল ইসলামের উত্থান হলে একসময় তা তাদের রাজতন্ত্রের উপর আঘাত হানবে। যার কারণে, তারা মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসির পতন ঘটাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।

সৌদি আরব চায় না, কাশ্মীর স্বাধীন হোক। কাশ্মীরের পলিটিক্যাল ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করুক। কারণ, কাশ্মীরে পলিটিক্যাল ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করলে, এর প্রভাব গোটা মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি মুক্তিকামীরা উৎসাহি হয়ে উঠবে। আর ফিলিস্তিনের মুক্তিকামীরা বেপরোয়া হয়ে উঠলে, আরব বসন্তের মত এর প্রভাব গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে। যেমনটা মিশর থেকে শুরু হয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল।

সৌদি রাজপরিবারের বিরোধীতা বা পক্ষে থাকার একমাত্র যুক্তি হচ্ছে, রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব। যে আন্দোলন রাজতন্ত্রের জন্য হুমকি, সৌদি রাজ পরিবার তাকে বাতিল বলে ঘোষণা করবে। আর তার সাথে সাথে আবু বকর জাকারিয়াদের মত পেইড সালাফি আলেমরা তাকে হারাম বলে ঘোষণা দিবে। আবু বকর জাকারিয়ারা আলেম নামের জালেম!

পঠিত : ৩৮৭০ বার

মন্তব্য: ০