Alapon

যৌন নির্যাতন বন্ধ হবে তখনই যখন নারীরা প্রতিবাদ করতে শিখবে...

সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। মোবাইলে ব্যালেন্স ছিল না, তাই রাস্তার পাশে লোডের দোকানে দাড়ালাম। দোকানদার বললেন, ‘নাম্বার বলেন।’
নাম্বার বলা শুরু করলাম, তিনি লিখতে শুরু করলেন।

কিন্তু অর্ধেক নাম্বার লেখার পর দেখি, মধ্যবয়সি দোকানদার সাহেব রাস্তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন। তখন রাস্তা দিয়ে সুশ্রী এক ললনা হেটে যাচ্ছে। তিনি দুচোখ দিয়ে হয়ত সেই ললনার শরীরের ব্যবচ্ছেদ করছেন!

ঘটনাক্রমে আমার পথ আর সেই ললনার পথ একই ছিল। পথ চলতে চলতে খেয়াল করলাম, এই ললনার দিকে তরুণরা যতটা না তাকাচ্ছে, তার চেয়ে মধ্যবয়সিরাই বেশি তাকাচ্ছে। আর মধ্যবয়সিদের তাকানোর ভঙ্গিটা সত্যিই ভয়ানক। তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে, ললনার জামা-কাপড় ভেদ করে শরীরের ভিতরের সবকিছু দেখতে পাচ্ছে!

দ্বিতীয় আর একটি ঘটনা বলি। রাত ১০ টায় বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে উঠে পড়লাম। সিটিং বাস হলেও, অনেক মানুষ দাড়িয়েছে। মাঝের দিকে একজন বোরখাপরা মহিলা বসে আছে। মানুষজন যখন নামছে বা উঠছে তার শরীরের সাথে লাগছে। দেখে মনে হল, মহিলা খুব বিব্রত হচ্ছেন। তাকে বাঁচানোর জন্যই হয়ত অপর একজন শুভ্র চেহারার মানুষ এগিয়ে এলেন। তাকে আড়াল করে দাড়ালেন, যেন অন্যদের শরীরের সাথে না লাগে!

একটু পরে খেয়াল করলাম, সেই মহিলা কাচুমাচু করছে। আরও ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম, শুভ্র চেহারার অধিকারী সেই মধ্যবয়সি লোক তাকে যৌন নির্যাতন করছে। সে বারবার তার যৌনাঙ্গ মহিলার গায়ে লাগাচ্ছে। আর মহিলা শুধু নড়াচড় করছে! কিন্তু সেই নরপশু তার কর্মকান্ড চালিয়েই যাচ্ছে।

এই দৃশ্য দেখছিলাম আর রাগে শরীরটা কাঁপছিল। কিন্তু বাসের আর কেউ এই ঘটনা দেখেছে বলে মনে হয় না। তাই চাচ্ছিলাম, মহিলা প্রতিবাদ করুক। তাহলে লোকটাকে ধরে উত্তম-মধ্যম দেওয়া যাবে। কিন্তু মহিলা নির্বিকার। প্রতিবাদ করার সাহস করেনি। হয়ত ভেবেছে, প্রতিবাদ করলে আদৌ কোনো প্রতিকার হবে কিনা!

খেয়াল করে দেখুন, এখানেও মূল কালপ্রিট মধ্যবয়সি। বাসে, ঘাটে, রাস্তায়, অফিসে যেসব যৌন নির্যাতন বা যৌন বিষয়ক ঘটনা ঘটছে তার সিংহভাগের সাথে জড়িত মধ্যবয়সিরা। যেমন, জামালপুরের ডিসি সাহেবও মধ্য বয়সি। বাজারে একটা কথা প্রচলন আছে, বিবাহিতদের নাকি নিজের বউ ছাড়া জগতের আর সব নারীকেই বউ মনে হয়। এখনকার মধ্যবয়সিদের অবস্থা দেখে তেমনই মনে হচ্ছে।

আর দ্বিতীয়ত, নারীদের মুখ বুঝে যৌন নির্যাতন সহ্য করার প্রবনতা। এই প্রবনতা আরও বেশি যৌন নির্যাতন উসকে দিচ্ছে। একজন লম্পট যখন প্রথমবার অপরাধ করে বাধা পায় না, তখন তার সাহস আরও বেড়ে যায়! দ্বিতীয়বার আরও সাহস নিয়ে করে। একসময় সে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস নিয়েই যৌন নির্যাতন করে।

তাদের এই আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে দিতে হবে। তা ভেঙ্গ দিতে হলে, নারীদের প্রতিবাদ করতে জানতে হবে। প্রতিবাদে অভ্যস্থ হতে হবে। প্রতিবাদি হোন। আপনি প্রতিবাদি হলে, আপনাকে দেখে অপর নারী প্রতিবাদ করার সাহস করবে। আপনারা প্রতিবাদ করলে, এই লম্পটরা যৌন নির্যাতন করার সাহস পাবে না...

পঠিত : ৬১৩ বার

মন্তব্য: ০