Alapon

রোহিঙ্গারা কি আমাদের জন্য সমস্যা?

আমি দক্ষিণের মানুষ, একেবারে দক্ষিণের। আমি শহরে থাকিনা। এটা উল্লেখ করার বিশেষ কিছু কারণ আছে। শহরের মানুষ এদিকে কী হচ্ছে সেটা সম্পর্কে বলতে গেলে কিছুই জানেনা। এরা ততটুকুই জানে, যতটুকু ইন্টারনেটে আসে। 
বিশেষ করে ঢাকার মানুষ, তারা পাহাড় সম্পর্কে কিছুই জানে না। এমনকি অনেকে পাহাড় নিয়ে লিখে, তারাও। এ কারণে ভুলভাল লিখে কিংবা উল্টোটা। আর পলিসি মেকাররাও পলিসি বানায় ঢাকায় বসে।

কক্সবাজার সম্পর্কে বাইরের মানুষ জানে এটা পর্যটন নগরী। এখানে বীচ আছে, সমুদ্র আছে। আর রোহিঙ্গারাও আছে। অস্ত্র শস্ত্র আর মাদক পাওয়া যায়। এই মাদক কারা আনে সেটা তারা জানেনা। জানার কথাও না। মাঝেমধ্যে পত্রিকায় দেখে, তারা পাশ কাটিয়ে যায়। আবার যখন দেখে মাদক বহনের/চালানের সময় রোহিঙ্গা আটক, তখন একটা হইহই রব পড়ে যায়। শেষ করে দিল দেশটা রোহিঙ্গারা।
আজকাল মিডিয়ার বদৌলতে আমরা অনেকেই জানি, এখানকার 'বেশীরভাগ অপরাধ' করে রোহিঙ্গারা। এই নিউজ গুলোর কারণে আবার বিশাল সুবিধাও পায় একটা শ্রেণী, যারা মূলত রোহিঙ্গা নয়। এরা রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে মাদক আনায় বার্মা থেকে, সেটা আবার বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহও করে। এতে তাদের বিশাল লাভ। লাভটা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদেরকে সস্তায় পাওয়া যায়, তাদেরকে দিয়ে অল্প টাকাতে এইসব কাজ করানো যায়।

এরচেয়ে বড় লাভটা আসে তার পর, সেটা হচ্ছে- ধরা পড়লে প্রথমত কোনো রিস্ক নাই। রোহিঙ্গাদের কোনো মা বাপ নাই এখানে, আইনজীবী পাওয়ারও অধিকার নাই। ধরা পড়লে গডফাদার পর্যন্ত আসার সুযোগ নাই।
দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে- মাদক কারবারের জন্য রোহিঙ্গা গ্রেফতার বলে নিউজ করবে, এতে বাঙালী গডফাদার থাকবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এজন্য দেখবেন কক্সবাজারের যত অপরাধের নিউজ, সব রোহিঙ্গা দিয়ে ভরা।

আমার বেশ কিছু সাংবাদিক বন্ধুকে চিনি, যারা নিয়মিত এই গডফাদারদের কাছ থেকে টাকার একটা অংশ নেন, বিনিময়ে তাদেরকে বাঁচিয়ে দেন। এবং এর পেছনে যে অবশ্যই অবশ্যই রোহিঙ্গারা দায়ী, সেটা নিশ্চিত করেন। 
যদি কখনো প্রয়োজন হয়, সেই গডফাদারদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো বাঙালীদেরও ফাঁসিয়ে দেন মাদক সম্রাট হিসেবে। শুধু স্থানীয় পত্রিকা নয়, নামী দামী মিডিয়ার সাংবাদিকগণ এই কাজটা করেন। (বরং স্থানীয় পত্রিকা এসব কম করে, এখানকার মানুষ এসব জানেন বলে।)
উদাহরণ হিসেবে কাউন্সিলর একরামুল হত্যার বিষয়ে তালাশের প্রতিবেদনটি উল্লেখ করা যায়।

রোহিঙ্গাদের এখানে কেউ ব্যবহার করেন জায়গা জমি দখলের জন্য, কেউ ব্যবহার করেন লাঠিয়াল হিসেবে, কেউ ব্যবহার করেন চুরি ছিন্তাই করার জন্য। রোহিঙ্গাদেরকে খুব অল্প টাকাতে খাটানো যায়।

২০১৭তে যখন ঘরবাড়ী, স্বজন হারা রোহিঙ্গারা দলে দলে ঢুকে, তখনই স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রচুর সুন্দরী নারী অপহরণ করেন। পরে অবশ্য ছোটখাটো বখাটেরাও থেমে থাকেনি। কেউ মেয়ে অপহরণ করেছে, কেউ জায়গায় রেপ করে ছেড়ে দিয়েছে। আর কিছু স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের সাথে করে নিয়ে আসা গরুছাগল কেড়ে নিয়েছে, কেউ স্বর্ণালংকার কেড়ে নিয়েছে।
যারা কেড়ে নেয়ার সাহস করেনি, তারা জাল টাকায় 'কিনে' নিয়েছে। যেহেতু রোহিঙ্গারা নতুন একটা দেশে পালিয়ে এসেছে, তারা এখানকার টাকা জাল না আসলে চেনার কথা নয়।

তখন টেকনাফে স্বর্ণের দাম এত স্বস্তা হয়ে গিয়েছিল, যা বলার মত নয়। আমার স্বর্ণকার বন্ধু আমাকে বলেছিল, টাকা পয়সা থাকলে বেশী করে স্বর্ণ কিনে রাখতে।
গরু ছাগলের দাম এত কমে গিয়েছিল, আমার কিছু বড় ভাই এক থেকে দুই হাজারে ছাগল আর ৬-৭ হাজারে গরু কিনে আনে।
এমনকি এরচেয়ে অবিশ্বাস্য রকমের কম দামেও বিক্রী হয়। ওদের ঘর নাই, বাড়ী নাই, আশ্রয় নাই, কোথায় থাকবে তার কোনো ঠিক নাই। খাবারের দরকার, থাকার দরকার। তখন বর্ষাকাল। ওরা যেমন দাম পায়, তাতেই বিক্রি করে দেয়।
৯০ টাকার বাঁশের দাম বেড়ে হয়ে যায় আড়াইশ টাকা, কারণ রোহিঙ্গারা কিনতে বাধ্য। ওরা বাঁশ দিয়ে, তেরপল দিয়ে আশ্রয় বানাবে।
তেরপল আর পলিথিনের দাম বাড়ে ৬ থেকে ৭ গুণ। মোটামুটি যে যেভাবে পারে নির্যাতন করেছে। 

আমার এক বন্ধু তখন বিজিবির টেকনাফে কর্মরত। তাকে জানাই রোহিঙ্গা নারীদের ব্যাপারে কিছু একটা করতে। এর দুইদিন পর বিজিবি অভিযান চালিয়ে প্রথমে ১৬ জন রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধার করে। এভাবে খোঁজ পাওয়া অল্প কয়েকজন রোহিঙ্গা নারীকে অপহরকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করা গিয়েছিল। বেশীরভাগের আর কোনো খোঁজ মিলেনি।

রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার কথা সবাই বললেও, সরকার সীমান্ত খুলছিল না।
ঠিক এমন সময়ে রয়টার্সের এক নিউজে দেখতে পাই বার্মিজরা হিন্দু রোহিঙ্গাদেরও হত্যা করছে। 
ভারতীয় মিডিয়া এই খবর ফলাও করে প্রচার করে। তখনই বুঝতে পারি অবশেষে রোহিঙ্গাদের ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে। আমি জানি এখন ভারত কী করবে! আমার একজন স্যারকে বলেছিলাম- আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে সীমান্ত খুলে দেবে।খবরের লিংকে কয়েকজনের কমেন্টের রিপ্লাইতেও বলেছিলাম- সীমান্ত খুলবে।
পরদিন সীমান্ত খুলে দেয়ার জন্য সরকারী ঘোষণা আসে।

বিদেশী এনজিও গুলো আসার অনেক আগে আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য খাবার আর কাপড় নিয়ে গিয়েছিলাম, তখন ২৬ টি হিন্দু রোহিঙ্গা পরিবার পেয়েছিলাম, যাদের প্রত্যেকের পরবারের সদস্যদের হত্যা করেছিল বার্মিজ আর্মী। এদের বাড়ী সম্ভবত মংডুতে।

আমরা যখন রিফিউজিদের আশ্রয় দেয়ার চেষ্টা করছি, তখন একদল প্রভাবশালী কাজ আর আশ্রয় দেয়ার নাম করে তাদের নারীদের নিয়ে যায়। কিছু হুজুর বিয়ে করার জন্য দলে দলে কক্সবাজার চলে আসে। যেন এরা এখানে বিয়ে করতে এসেছে।
এরপর বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের বিয়ে করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে।

রোহিঙ্গাদের জন্য প্রচুর ত্রাণ এলো, টাকা এলো, বিদেশী সাহায্য এলো।
সরকারের প্রতিটা সেক্টর থেকে শুরু করে প্রতিটা নেতা, পাতিনেতা টাকা কামিয়ে কোটিপতি হয়ে গেল।
হিন্দু রোহিঙ্গাদের ভারত কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে মিয়ানমারে ফেরৎ নিয়ে গেল।
যাওয়ার আগে ইন্ডিয়ান মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিয়ে গেল- তাদেরকে মুসলমান রোহিঙ্গারাই মেরেছে। 
কী অবিশ্বাস্য! যারা মেরেছে তাদের সাথেই কিনা তারা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে!
সে কেন এই ধরণের স্টেটমেন্ট দিয়েছিল, সেটা জানি। কারণ এই মহিলার সাথে আমি নিজে কথা বলছিলাম তার মাস দেড়েক আগে। তখন চোখে পানি ছিল, দূঃখ ছিল, মিয়ানমার আর্মির প্রতি ঘৃণা ছিল।

প্রধানমন্ত্রী নিজে রোহিঙ্গাদের দেখতে এলেন। তাকে মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধি দিয়ে পোস্টার বিলবোর্ডে ছেয়ে গেল কক্সবাজার। দাবী করা হলো নোবেল শান্তি পুরষ্কারের।
সবাই রোহিঙ্গাদের নিয়ে ব্যস্ত। 
তখন উত্তরবঙ্গে বন্যা চলছে। উত্তরবঙ্গে যাওয়া যেহেতু আমার জন্য অনেক দূর হয়ে যায়, ঢাকার কিছু মানুষের সাথে যোগাযোগ করলাম। ফেইসবুকে পোস্ট দিলাম, রোহিঙ্গাদের কারণে যেন আমরা উত্তরবঙ্গের বানবাসীদের ভুলে না যাই। আমার মনে আছে, অনেকে আমাকে গালাগালি করেছিল তখন। আমি জানি এরা কারা, হুজুগে এই লোকজন হুজুগের বিরুদ্ধে যাওয়া সবাইকেই গালাগালি করে।
যেহেতু গালাগাল খেলে আমি কখনো মন খারাপ করিনা, এতে কিছু মনেও করিনা, তাই আমিও চেষ্টা চালিয়ে গেলাম।
কয়েকজন ভাই তখন উত্তরবঙ্গে ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিল আমার পরিচিতদের মধ্যে। অপরিচিতদেরও অনেকে গিয়েছিল, ছবি দেখেছিলাম ফেইসবুকে।
সেই সময়ে পুলিশের সাথে মিলে সাঁওতালদের জমি দখল করছিল এক আওয়ামীলীগ নেতা। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সেই খবর আসলেও আমাদের মধ্যে কেবল ডেইলি স্টার আর প্রথম আলো ছাড়া শুরুতে এই খবর ছাপেনি কেউ তখন। পুলিশ নিজে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ফুটেজ ছিল সাঁওতালদের ঘরে।
দেখলাম- কালো চামড়ার সাঁওতালদের জন্য কারো দয়ামায়া অত নেই। আমি নিশ্চিত, তাদের গায়ের রঙ সাদা হলে অনেকেই কথা বলতো তাদের জন্য।

দুই বছর কেটে গেল। রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশী বরাদ্ধ কমে গেছে অর্ধেক। প্রজেক্টও বেশীরভাগ শেষ। যে যা টাকা কামানোর কামিয়ে নিল।
শান্তি পুরস্কার আসেনি। ইউজলেস রোহিঙ্গাদের দিয়ে এখন কী করবে! মিয়ানমারও নিতে চাচ্ছেনা, বাংলাদেশও কোনো তৎপরতা চালাচ্ছেনা। একবার তৎপরতা চালিয়েছিল জাতিসংঘে। সেখানে আমাদের শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তান বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দিলেও বন্ধু রাষ্ট্র ভারত ভোট দিয়েছিল মিয়ানমারের পক্ষে।
আরাকানে যে বিশাল কন্সট্রাকশন চলছে, ভারতে সেখানে শেয়ারহোল্ডার।
বাংলাদেশ আর তৎপরতা চালায়নি। ভারতও খুশী, মিয়ানমারও খুশি।
মিয়ানমার শর্ত দিয়েছে- প্রতিবারে তিনশ জন করে রোহিঙ্গা তারা নিয়ে যাবে। এক পরিবারের তিনজনের বেশী যাওয়া যাবেনা। 
তো পরিবারের বাকী সন্তানেরা কী করবে? বাংলাদেশে থেকে যাবে? না ওরা রেখে যাবে?
২ বছর পূর্তিতে গণহত্যা দিবস পালন করেছে রোহিঙ্গারা। সেখানে সবাই একত্রিত হয়ে মোনাজাত করেছে নিহত স্বজনদের জন্য।
ওরা যে বক্তৃতা দিয়েছে, সেগুলোও শুনেছি। ওদের যে নেতা মুহিবুল্লাহ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তার বক্তব্যও শুনেছি। সে একবারের জন্যও বলেনি বাংলাদেশে থেকে যাবে তারা। সে বলেছে, চলে যেতে হবে আমাদের। আমাদের যেন নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয়, সেই দাবী জানাচ্ছি।
খুবই যৌক্তিক দাবী। এটা কীভাবে অপরাধ হয়, আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা। কেউ পারলে বুঝিয়ে দেবেন। তবে গালাগাল করলে আমি কম বুঝি, চেষ্টা করবেন গালাগাল ছাড়া বুঝাতে।
রোহিঙ্গারা এর আগেও দুইবার রিফিউজি হয়েছিল, তখন তারা ফিরে গেছে।
রোহিঙ্গাদেরকে ঠিকঠাক ভাবে ফিরিয়ে দিতে না পারাটা বাংলাদেশ সরকারের নৈতিক এবং কুটনৈতিক ব্যর্থতা। এটা হয়েছে গাফেলতির কারণে।
বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী মিশনের সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্যদের মধ্যে অন্যতম।
বাংলাদেশ এতটা প্রভাবশালী যে, জাতিসংঘ যখন সৌদিআরবের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ গঠন করতে যাচ্ছিল, তখন বাংলাদেশ ভেটো দেয়। জানিয়ে দেয় এরকমটা করা হলে তারা আর শান্তিরক্ষায় ভূমিকা রাখবেনা। 
বাংলাদেশের চেষ্টায় সৌদিআরব যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে বেঁচে যায়। বাংলাদেশ সরকারের সাথেও সম্পর্ক ভাল হয়।
যে বাংলাদেশ সৌদি আরবকে বাঁচিয়ে দিতে পারে, তারা একই শক্তি খাঁটিয়ে আরাকানে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দিতে পারেনা। আবার আরাকানকেও নিতে চায় না।
তার বদলে তাদেরকে মৃত্যুর হাতে আবার ঠেলে দিতে চায়।

এদিকে আমাদের মিডিয়া কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিরতিহীন উস্কানী নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটা নিউজের প্রতিটা হেডলাইনে হেইট প্রোপাগাণ্ডা।
তারা রোহিঙ্গাদের সমাবেশকে দেখিয়েছে 'বাংলাদেশ বিরোধী' সমাবেশ হিসেবে। তাদের বক্তব্য দেখায়নি। উল্লেখ করেনি মৃত স্বজনদের জন্য মোনাজাতের কথা। মাথায় টুপি দেয়া ভিডিও দেখে বাঙালীরা ধর নিয়েছে তারা মারামারি করতেও মাথায় টুপি দিয়ে আসে।

'মুক্তি' নামের একটা এনজিওর জব্দ করা দা ছুরিকে 'রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরী অস্ত্র উদ্ধার' বলে শিরোনাম করলেও, এগুলো কী অস্ত্র! মুক্তি যে ভারতভিত্তিক এনজিও, এর মালিক যে ভারতেরও নাগরিক, সেসব আর তারা বলেনা।

এদিকে জনগণ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে সাড়ে সাত লাখকে করেছে ৩০-৩২ লাখ। (এই সংখ্যাটা এককভাবে সাইবার ৭১ এর দেয়া)। রোহিঙ্গারা গরুছাগল মুরগী না, তারা একসাথে ৮-১০ করে বাচ্চা দেয় না। ৬ মাস পর পরও বাচ্চা দেয় না। এই জিনিসটা সম্ভবত ওরা জানেনা। প্রথম বছরে বাচ্চা জন্ম দেয়া নারীরা বেশীরভাগই ধর্ষিত। দ্বিতীয় বছরে এসে বাচ্চা জন্মের হার কমে গেছে।

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী জন্মহার মুসলমানদের। এটাকে মুসলমান বিদ্বেষী দেশ আর সংগঠন গুলোও এভাবে বলে, আমরা যেভাবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বলছি। রোহিঙ্গারা অশিক্ষিত, মূর্খ, তারা গুজবে সহজে বিশ্বাস করে। আপনি আমি শিক্ষিত হয়েই যে এরচেয়ে কম বিশ্বাস করি, তা কিন্তু না। সেখানেও মারামারি, খুনোখুনি হয়। তবে ক্রাইম রেট আমাদের চেয়েও অনেক অনেক কম।

ওদের একটা দুটো ক্রাইমকে আমরা যেভাবে হাইলাইট করে ফোবিয়া ছড়াই, একই কাজটা পাশের দেশ ভারত করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। তারপর তারা সেটা দিয়ে মুসলমান হত্যা জায়েজ করে।

আজকের আল-জাজিরার প্রতিবেদনে দেখলাম, ভারতের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন পুলিশ মুসলমানদের ক্রিমিনাল মনে করেন। এবং মুসলমানদের হত্যা করাকে উচিৎ বলে মনে করেন, এটাকে কোনো অপরাধ বলে মনে করেন না। ওরা যে কাজটা আমাদের সাথে করে, আমরা একই কাজটা রোহিঙ্গাদের সাথে করতে যাচ্ছি। ওদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ওদের মেয়েদের অপহরণ, গরু ছাগল কেড়ে নেয়া এসবের পরও আমরা আসলে ফেরশতা। অনেকে শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ছিলেন। পরে ভাবলাম স্বাভাবিকই তো, রোহিঙ্গাদের গায়ের চামড়া কালো।

মিডিয়ার নিয়মিত উস্কানীর প্রভাব জনগণের উপর খুব খারাপ ভাবে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। তার প্রথম শিকার হবো আমরা। আপনারা ঢাকায় থেকে উস্কানী দেয়া লোকজনের কিছু হবেনা। আল্লাহর ওয়াস্তে থামেন এবার। ঘৃণা শুধু ঘৃণাই বাড়ায়, কোনো সমাধান আনেনা। ঘৃণা আর জাতিবিদ্বেষ না ছড়িয়ে রোহিঙ্গাদের কীভাবে নিরাপদে মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠানো যায় সেই কথা যখন আমাদের ভাবার কথা, তখন আমরা করছি ঠিক উল্টোটা।

Michael Scofield এর ফেসবুক থেকে। 

পঠিত : ১৫৬৫ বার

মন্তব্য: ০