Alapon

আসামের ১৯ লাখ বাঙালীর ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে...?

বহু জল্প-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ভারত ১৯ লাখ বাঙালীকে অবৈধ বলে ঘোষণা করল। এই বাঙালীদের মধ্যে যেমন মুসলিম আছে, আছে হিন্দুরাও। এই হিন্দুরা নিম্নবর্ণের।

যারা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে ভারতে অবস্থান করার নথিপত্র দেখাতে পারবে, কেবল তারাই নাগরিক থাকতে পারবে। এর পরে যারা আসবে তারা ভারতের নাগরিক হিসেবে আর নথিভুক্ত থাকতে পারবে না।

মূলত ১৯৭১ সালের যুদ্ধে বাংলাদেশ লাখ লাখ মানুষ শরনার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ আসামে আশ্রয় নিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ দেশে ফিরে আসলেও কেউ কেউ আসামেই থেকে যায়। তাই ১৯৮৫ সালে আসামের অসমীয় ভাষীরা এর প্রতিবাদ করে। তারা বাংলাদেশ থেকে আগত শরনার্থীদের আসাম থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানায়।

এই দাবি বহু পুরনো হলেও, অবশেষে মোদির বিজিপি সরকারের সময় এসে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে। মোদি সরকার অসমীয়ভাষীদের দাবি মেনে নিল কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের ১৯৩৯ সালে রচিত একটি বইয়ের দিকে তাকাতে হবে। বইটি রচনা করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা এম এস গরওয়াল। গরওয়াল তার “We, Our Nationhood Defined,” বইয়ে বলেছেন, ‘জাতি এবং সংস্কৃতির বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে জার্মানি সেমিটিক রেস ইহুদিদের থেকে তার দেশকে শুদ্ধ করে বিশ্বকে হতবাক করেছিল। এখানে সর্বোচ্চ গর্ব প্রকাশিত হয়েছে। জার্মানি দেখিয়েছে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি প্রতিষ্ঠায় এটি কতটা প্রয়োজনীয় ছিল। আমাদের এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এগুলো আমরা হিন্দুস্থানে প্রয়োগ করব এবং সফলতা ঘরে তুলব।’

দলিত হিন্দু এবং মুসলিমদের হিন্দুস্থান থেকে তাড়ানো মোদির দল বিজেপি এবং আরএসএস এর মৌলিক কাজের অংশ। তাই এখানে অবাক হওয়ার কিছু নই। বরঞ্জ তারা এসব কাজ করার জন্যই এতোদিন থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। আর যখন তারা ক্ষমতায় তখন এই কাজের বাস্তবায়ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর অসমীয়ভাষীদের দাবির মধ্য দিয়ে তাদেরও স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে। একারণেই মোদি সরকার বিপুল উৎসাহে আসামের ১৯ লাখ বাঙালীর নাগরিকত্ব কেড়ে নিল।

এই ১৯ লাখ বাঙালীর ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে?

তাদের ভাগ্যে আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নির্দিষ্ট করে বলাটা কঠিন। কিন্তু আমার এক ভারতীয় বন্ধুর কাছে জানতে পারলাম, আসামে নাকি হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মত ক্যাম্প করা হয়েছে। যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, তাদের সেই ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। আর তাদের নজরদারি করতে ক্যাম্পের চারদিকে হাজার সামরিক আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা পাহারা দিচ্ছে।

অনেকেই বলছে, ‘যাদের নাগরিকত্ব বাতিল হয়েছে তারা সবাই বাংলাদেশের আদি নাগরিক। তাই তাদের বাংলাদেশেই পাঠানো হবে।’

ভারতের পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে এতো বিশাল সংখ্যক অভিবাসীর ভার বহন করা কি আদৌ সম্ভব হবে? মনে হয় না! ভারতপ্রেমি সরকার হয়ত ভারতের এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিবে না। কিন্তু আপামর সাধারণ জনতা ভারতের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ! ফলে দিনশেষে সাধারণ এই মানুষগুলোর জীবনেই নেমে আসবে গভীর অমানিশা।

পঠিত : ৬৩৩ বার

মন্তব্য: ০