Alapon

আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়; বরঞ্জ নতুন একটি বিপদ!

গতরাতে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ দেখলাম কিছু অল্পবয়সি ছেলে হৈ...হৈ... রব তুলে একটা লাশ নিয়ে যাচ্ছে!

এই পথ দিয়ে প্রায়ই লাশ নিয়ে যায়; সামনেই কবরস্থান। তাই পথে চলাচলকারি মানুষদের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া বিশেষ কোনো ঘটনা না। কিন্তু ছেলেগুলোর চিল্লাচিল্লি আর আর লাশের সাথে মুরুব্বী গোছের কাউকে দেখতে পেয়ে সবাই খুব অবাক হল।

সবকিছুতে আমার আগ্রহটা একটু বেশি। সেই লাশের মিছিলের পিছু পিছু আমিও হাটা ধরলাম। লাশটা কাছাকাছি হওয়া মাত্র একটা বোটকা গন্ধ নাকে এসে । এমন গন্ধ সচারচর কখনো পেয়েছি বলে মনে হয় না।

লাশের মিছিলের সাথে থাকা এক ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কীভাবে মারা গেছে?’
সে আমার মুখের দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে বলল, ‘গলায় ফাঁস দিয়ে মরছে!’ তার কথা শুনে খুবই অবাক হলাম। সেইসাথে আমার আগ্রহের মাত্রাটাও বেড়ে গেল। তাদের পিছু পিছু আমিও কবরস্থানে প্রবেশ করলাম।

পিছু হাটতে হাটতে উপস্থিত লোকেদের মুখে শুনে যা বুঝলাম, ‘ছেলেটার বয়স ১৯ বছর হবে হয়তো। তার সাথে একটা মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেই মেয়ে তাকে ধোকা দিয়ে অন্য কোথাও বিয়ে করে ফেলেছে। তাই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়েছে। গলায় দড়ি দিয়েছে আরও তিনদিন আগে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ লাশ পেতে ৩ দিন সময় লেগেছে। সেকারণেই হয়তো লাশের শরীর থেকে কিছুটা গন্ধ বের হয়েছে।’

লাশের পিছু পিছু হাটছি...। অবশেষে আমরা নির্ধারিত কবরের কাছে পৌঁছে গেলাম। এবার আত্মহত্যাকারীর লাশ কবরে নামানোর পালা। কিন্তু কবরে কেউ নামতে চাচ্ছে না। অবশেষে তার চাচা এবং মামাকে অনেকটা জোর করে কবরে নামিয়ে দেওয়া হল। তারপর লাশটা কোনো রকম কবরে রেখেই তারা উঠে পড়ল। তারপর উপস্থিত সকলের অবস্থা দেখে মনে হল, লাশটাকে কোনোরকম মাটিচাপা দিয়ে পালাতে পারলেই যেন সবাই রক্ষা পায়!

কবর দেওয়া শেষ করে যখন সবাই ফিরছিল, তখন আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিকেই গালিগালাজ করছিল। কোনো মৃত্য ব্যক্তিকে এভাবে কেউ গালিগালাজ করতে পারে, সেখানে উপস্থিত না থাকলে তা কখনো বিশ্বাসই করতাম না।

আত্মহত্যা একটি লজ্জাকর এবং ঘৃন্নিত কাজ। শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকেই নয়, সামাজিক দিক থেকেও এটি জঘন্য কাজ। যে আত্মহত্যা করে, সে নিজেকে যেমন ধ্বংস করল, সেইসাথে নিজের পরিবারকেও ধ্বংস করে গেল!

বেশ কয়েকবছর আগে একটা ঘটনা দেখেছিলাম। একটি বিয়ের সমস্ত কথাবার্তা ফাইনাল হয়ে যাওয়ার পর আচমকা ভেঙ্গে যায়। কারণ, ছেলেপক্ষ কোনো এক ভাবে জানতে পারে, মেয়ের পরিবারের কোনো এক সদস্য আত্মহত্যা করে মারা গেছে। কেবল এ কারণেই সেই বিয়েটা ভেঙ্গে যায়!

আত্মহত্যা যেমন ব্যক্তির ইমান আমল সব হত্যা করে ফেলে। তেমনি নিজের পরিবারকেও সামাজিকভাবে হত্যা করে ফেলে! আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়; বরঞ্জ নতুন একটি বিপদ! যে বিপদ ভুক্তভোগি পরিবারকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

পঠিত : ১১৩৭ বার

মন্তব্য: ০