Alapon

আলিজা আলী ইজেতবেগোভিচ; এক ইতিহাসের নাম...

ইউরোপের নবীনতম স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র বসনিয়া-হারজেগোভিনার প্রথম প্রেসিডেন্ট প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মরহুম আলিজা আলী 1925 সালের 8 ই আগষ্ট রাজধানী সারাজেভোর অদূরে 'সামাক' নামক স্থানে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্ৰহন করেন। তার শিক্ষাজীবনের শুরু হয় সারাজেভোতে এবং সারাজেভ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি 1956 সালে আইনশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।

1940 সালে সারাজেভোতে প্রতিষ্ঠিত হয় 'YOUNG MUSLIMS' নামক একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন। 16 বছরের তরুণ আলিজা শুরু থেকেই ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। আদর্শগতদিক দিয়ে শহীদ হাসানুল বান্নার প্রতিষ্ঠিত 'ইখওয়ানুল মুসলিমুন' এর সাথে 'ইয়ং মুসলিমস'এর যথেষ্ট মিল ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মেহমুদ হানদজিকের (1906-1944) সুযোগ‍্য নেতৃত্বে ইয়ং মুসলিমের সাংগঠনিক কার্যক্রম ব‍্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে মার্শাল টিটোর কম‍্যুনিষ্ট সরকার দারুণভাবে শংকিত হয়ে পড়ে এবং মুসলিমদের তৎপরতা থামাতে ঢালাওভাবে গ্ৰেফতার, নির্যাতন তথা দমননীতির আশ্রয় নেয়।

1946 সালে মুসলিম সাময়িকী 'মোজাহেদ' প্রকাশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার অপরাধে আলিজা আলীকে যুগোশ্লাভ সরকার আটক করে এবং পরবর্তী তিন বছর কারারুদ্ধ করে তার ওপর ব‍্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় তার একান্ত সহযোগী ও বন্ধু নেদজীব শাকির বেগোভিচকেও চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ইয়ং মুসলিমের তৎপরতা বন্ধ করতে 1949 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এর চারজন সক্রিয় সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং অসংখ্য নেতা-কর্মীদের গ্ৰেফতার করে বিনা বিচারে আটক রাখা হয়। বাধ্য হয়ে ইয়ং মুসলিমস এর ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ সরকারের সাথে সরাসরি সংঘাতের পথ থেকে কৌশলগতভাবে কিছুটা সরে এসে দলীয় সাংগঠনিক ভিত্তি সুদৃঢ় করায় অধিকতর মনোনিবেশ করেন।

তরুণ আইনজীবী আলিজা এ সময় থেকেই মুসলিমদের অধিকার আদায়ের ব‍্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা পালনের পাশাপাশি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করায় আত্মনিয়োগ করেন। বলকান অঞ্চলের নির্যাতিত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের স্বার্থে এ সময় তিনি ব‍্যাপকভাবে লেখালেখিও শুরু করেন। আলিজা আজীবন মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং সত‍্যিকারের আদর্শ ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। তার বিভিন্ন লেখাতেও এই চিন্তা চেতনার প্রভাব ছিল লক্ষনীয়।

সারাজীবনই তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে কম‍্যুনিজম তথা মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।
1970 সালে আলিজা ইসলামী মূল্যবোধ ও ইসলামী দর্শনের সমন্বয়ে তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা গবেষণার বহিঃপ্রকাশ ঘটান তার বিখ্যাত ISLAMIC DECLARATION প্রকাশের মাধ্যমে। তৎকালীন যুগোশ্লাভিয়ার চরম মুসলিমবিরোধী ও বৈরী পরিবেশের মাঝেও তিনি দৃঢ়চিত্তে ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা, ইসলামী রাষ্ট্রীয় ব‍্যবস্হাপনা, ঐক্যবদ্ধ মুসলিম সমাজব‍্যবস্হা প্রভৃতি বিষয়ে সুসংহত অভিমতগুলোকে যৌক্তিকভাবে উপস্হাপন করেন। ISLAMIC DECLARATION-এর শুরুতেই তিনি দৃঢ় অভিমত ব‍্যক্ত করেন যে, মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত একটি একক ও ঐক্যবদ্ধ ইসলামী সমাজব‍্যবস্হা থাকা প্রয়োজন।

তার মতে বিশ্ব ভূখণ্ডের যেখানেই মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ কিংবা তাদের সংখ্যাধিক‍্য যথেষ্ট সেখানে ইসলামী রাষ্ট্রীয় ব‍্যবস্হাপনা স্হাপনের উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক রাজনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন। অন‍্যথায় সশস্ত্র সংগ্ৰামের পথ বেছে নেয়া উচিত। বলকান অঞ্চলের মুসলিমদের জনপ্রিয় নেতা আলিজা আলীর এহেন কর্মতৎপরতায় শংকিত হয়ে কম‍্যুনিষ্ট শাসক 1983 সালে তাকে গ্ৰেফতার করে। এবার তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ এনে তাকে চৌদ্দ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
অবশ্য প্রবল জনমতের চাপে ছয় বছর পর 1988 সালে সরকার তাকে মুক্তি প্রদানে বাধ্য হয়। তিনি 2003 সালে ইন্তেকাল করেন।

 cltd


পঠিত : ২০৮৩ বার

মন্তব্য: ০