Alapon

ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া (রা) কে আমরা ভালও বলি না আবার মন্দও বলি না।

* কুফা বাসীর ইতিহাস টা অন্যরকম।
কখনোই তারা তারা তাদের ওয়াদা রক্ষা করেনি। যাকেই দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছে তার সাথেই তারা বেইমানি করেছে।
হয়তো তাদের আবেগ ছিলো অতি বেশি, পরে হয়তো ইমানের ঘাটতি বা শক্তিতে কুলাতো না।
যায় হোক হুসাইন(রা) এর দূত কেও তারা মূল্যায়ন করেনি বা পাশে থাকেনি, হুসাইন(রা) এর পাশেও তারা থাকেনি। অথচ তারাই ১৫০ এর বেশি চিঠি দিয়ে দাওয়াত করে এনেছিলেন।

* কুফা হতে একের পর একে করতে করতে প্রায় ১৫০ টি চিঠি এসে জমা হলো হুসাইন (রা) এর হাতে। প্রত্যেকে আবেগঘন কথার মাধুরী মিশিয়ে তাকে ডেকে পাঠাচ্ছেন।
হুসাইন (রা) সেখানের অবস্থা, পরিবেশ যাচাই-বাছাই করার জন্য তার চাচাতো ভাই মসলিন বিন আকিল কে পাঠালো। মসলিন বিন আকিল সেখানে গেলে প্রায় ৪০০০ লোক তার সাথে বা পক্ষে যোগ দিলো।
মসলিন বিন আকিল সবাইকে নিয়ে ওবাইদুল্লাহর বাসভবন এর সামনে দাড়ালো।
ওদিকে এই খবর পেয়ে ওবাইলদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ তার বাসার ছাদে বা বারান্দায় দাড়িয়ে বক্তব্য দিলো। কঠোর হুসিয়ারি দিলো।
মসলিন বিন আকিল দেখলো সন্ধা হতে না হতে তারা তিনজন বাদে সবাই চলে গেছে।

তিনি ভাবলেন সর্বনাশ! এরাই তো হুসাইন(রা) কে ডেকে পাঠিয়েছে। তিনি আসলে তো তাকেও তারা বিপদে ফেলে দিবে।
এদিকে ওবাইলদুল্লাহ মসলিন বিন আকিল কে বন্দী করলো।
যেদিন মসলিন বিন আকিল কে হত্যা করা হয় সেদিন তিনি হুসাইন(রা) কে চিঠি লিখলেন, বললেন, আপনি এখানে আসবেন না। এরা বিশ্বাস ঘাতক। এরা আপনার সাথে মুনাফিকি করবে।
কিন্তু চিঠি পোঁছানোর আগেই হুসাইন(রা) বের হয়ে যান। ফলে পরিবেশ পরিস্থিতি তার অজানা রয়ে যায়।

* হুসাইন(রা) যখন মনস্থির করলেন যে তিনি কুফায় যাবেন। তখন বড় বড় প্রায় সকল সাহাবী তাকে যেতে নিষেধ করেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের বলেন,
"আপনি যাবেন না, ওরা আপনার পিতা (আলি (রা))কে হত্যা করেছে। আপনার ভাইকে আঘাত করেছে। দয়াকরে আপনি যাবেন না।"

ইবনে আব্বাস বলেন,
"মানুষের দোষারোপ এর ভয় না থাকলে আমি আপনাকে বাধ্য করতাম জোর করে রাখতে। ওরা বিশ্বাস ঘাতক। দয়াকরে আপনি যাবেন না। "

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর বলেন,
" আল্লাহর কসম। যখন হুসাইন(রা) বের হন তখন যদি আমি থাকতাম। তাহলে তাকে কোনো মতেই যেতাম না। যদি সে আমার সাথে লড়ে আমাকে পরাজিত করে যেতো তবে সেটা ভিন্ন কথা।"

এছাড়াও ইবনে ওমর সহ অনেক বড় মাপের সাহাবী তাকে যেতে নিষেধ করেন। কিন্তু সেখানে তিনি যান।
সাথ সফরসংগী হিসেবে পরিবার সহ ৫০ জনের বেশি।

* ওবাইলদুল্লাহ বিন জিয়াদ যখন হুসাইন(রা) কে ঘেরাও করে তখন হুসাইন(রা) তাকে তিনটি প্রস্তাব দেন।
১) আমাকে মক্কায় ফিরে যেতে দেয়া হোক।
অথবা
২) আমাকে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া(রা) এর কাছে যেতে দেয়া হোক।
অথবা
৩) সীমান্তবর্তী এলাকায় পাঠানো হোক।

কিন্তু তার কোনো দাবিই না মেনে তাকে হত্যা করে এই কাপুরুষ ওবাইলদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ এবং সিমার।
আল্লাহর আযাব বর্ষিত হোক এই দুই হত্যাকারীর উপর।

* হুসাইন(রা) চেহারার দিক থেকেও রাসুল্লাহ (স) এর মতো ছিলো। কলিজা টুকরা ছিলেন তিনি। প্রচণ্ড ভালবাসার পাত্র। ছোটবেলায় তিনি তার নানা (রাসুল্লাহ(স)) এর পিঠে উঠে বসতেন। এমনও হয়েছে যে রাসুল্লাহ (স) নামাজে আর হুসেন(রা) তার পিঠে। যতক্ষণ তিনি পিঠে বসা ততক্ষণ তিনি উঠেন নি।
শুধু দুনিয়াতেই তিনি হিরার টুকরা নয়, পরকালেও জান্নাতে যুবকদের সরদার তিনি।

এমন একজন মানুষ কে কুফাবাসির বিশ্বাস ঘাতকতায় ওবাইলদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ এর হুকুমে সিমার হত্যা করে। হত্যার পর ওবাইলদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ তার খণ্ডিত মাথা সামনে নিয়ে একটি লাঠি দিয়ে নাক, ঠোঠে খুচ্চাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় একজন সাহাবি বলেন, ওরে পাপিষ্ঠ ইবনে জিয়াদ তুই যে জায়গায় লাঠির আঘাত করছিস। আমি দেখেছি সেই জায়গায় রাসুল আদর করেছেন, চুমু খেয়েছেন।

হে আমাদের রব! ওবাইলদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ও সিমার এর উপর তোমার আযাব বাড়িয়ে দাও।

*"হুসাইন(রা) এর খণ্ডিত মস্তক যখন ইয়াজিদের সামনে আনা হলো তখন তা দেখে ইয়াজিদ কান্না শুরু করেছিলেন। এমনকি তিনি মাটিতে পড়ে যান। তিনি বলেন, আল্লাহর গজব পড়ুক ওবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ এর উপর। তার সাথে হুসাইন(রা) এর রক্তের সমর্পক থাকলে কখনোই সে তাকে হত্যা করতে পারতো না। "

*হুসাইন (রা) শহিদ হওয়ার পিছনে ইয়াজিদ কতটুকু দায়ী?
ইয়াজিদ হুকুম জারী করেছিলো হুসাইন (রা) কে রাজ্যে প্রবেশে বাধা দিতে মোটেও হত্যা করতে নয়।
সেনাবাহিনী যখন হুসাইন(রা) সহ তার পরিবার কে ঘিরে ফেলে তখন সেনা সদস্যের কেউ নিজ থেকে চাইনি তার হাতে নবী পরিবার অসম্মানিত হোক বা কেউ নিহত হোক।
কিন্তু সেনাপ্রধান উবাইল্লাহ বিন জিয়াদ এবং সেনাসদস্য সিমার এই দুইজন হুসাইন (রা) কে হত্যা করেন। ইন্নানিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজেউন।
আল্লাহ এই দুই সেনার উপর তার আযাব বাড়িয়ে দিক।
পরে হুসাইন(রা) এর পরিবার কে অত্যান্ত সম্মানের সাথে ইয়াজিদ মদীনায় পাঠান।
★★প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে ইয়াজিদ কোনো ভাবেই দায়ী নয়??
হ্যা একভাবে তাকে আমরা দায়ী করতেই পারী। কারণ সে পারত উক্ত দুই সেনার মাথাটা দেহ থেকে আলাদা করে দিতে। কিন্তু তিনি বিচার করেন নাই।
তিনি বিচার করলে মুসলিম উম্মাহ অন্তত একটু হলেও শান্তি পেতো।
★★ হুসাইন(রা) হত্যার ঘটনায় আমরা অবশ্যই কস্ট পায় কিন্তু আমরা তার আগেউ অনেক সাহাবি কে এরকম নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় বিশেষ করে যারা প্রেসিডেন্ট ছিলো।
খেয়াল করুন আমরা কিন্তু তাদের ঘটনায় তেমন ব্যাথা পায় না। কারণ কি?
কারণ শিয়া চক্রান্ত।
শিয়ারা সেই সাহাবিদের কাফের মুনাফিক মনে করে। আরও খেয়াল করুন "ইমাম" শব্দটিও আমরা অন্য সাহাবির বেলায় শুনিনা। এটাও শিয়াদের চক্রান্ত।

* ইয়াজিদদের পক্ষের কথাঃ
ইয়াজিদ হুসাইন(র) এর পরিবার কে যথাযথ সম্মান দিয়েছেন। তাদের দাস দাসি বানান নি, তাদের কে বন্দিও করেন নি, ৩ মাস ভরণপোষণ করেছেন। তাদের মদিনায় পাঠায় ভালভাবে।
(পারসোনালি আমার কাছে মনে হয় হুসাইন (রা) কে যদি ইয়াজিদ কাছে আসতে দিতো ইয়াজিদ ক্ষমতা ছাড়তো না তবে হুসাইন (রা) কোনো ক্ষতিও করতো না।)
যাই হোক চলুন বোখারির একটি হাদিসের দিকে। হাদিস নং ৪০৯৩ সমুদ্র অভিযান অধ্যায়।
"আমার উম্মাতের মধ্যে যারা সমুদ্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তারা কে আল্লাহ মাফ করে দিবেন। তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। "
এই ইয়াজিদ ৫১ হিজরিতে সমুদ্রের যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। হুসাইন (রা)ও এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

হুসাইন(রা) এর ভাই মোহাম্মদ আল হুনাইফ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো ইয়াজিদ কেমন?
তিনি উত্তরে বলেন, সে নামাজি, কল্যাণমূখি, সুন্নাতের প্রতি প্রবল, উচ্চমানের মুফতি(আয়াত,হাদিস দিয়ে ফতোয়া দিতেন)।

রেফারেন্স: বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮ম খন্ড ১৭৩ পেজ
আত তাহযিব ওয়াত তাহযিব খন্ড ৪ পেজ ১৩৭
ইবনে হাজার আসকালানী।

★তাহলে ইয়াজিদের ব্যাপারে আমাদের ধারণা কি থাকবে?
আমরা তাকে অনেক ভাল একজন বলবো না আবার ঘৃণাও করবো না।


পঠিত : ৩৩৩৪ বার

মন্তব্য: ০