Alapon

বয়ঃসন্ধি...

১.
ছুটির ঘণ্টা বাজতেই মারিয়া হাফ ছেড়ে বাঁচল।

আজ সারাদিন যা ধকল গেল! একেতো গরমটাও পড়েছে ভয়াবহ। তারপর টানা ছয়টা ক্লাস নিতে হল। দুজন শিক্ষক আছেন ছুটিতে। তাই নিজের ক্লাসের পাশাপাশি তাদের ক্লাসগুলোও নিতে হয়েছে।

মারিয়া সোজা চলে এলো ক্যান্টিনে। মুখ হাতে ভাল করে পানি দিল। একটা সিঙ্গারা আর চায়ের অর্ডার দিয়ে বসল টেবিলে। খিদেও লেগেছে বেশ। ছেলেমেয়েদের সাথে বকবক করতে করতে খিদে লেগে যায়। কিছুক্ষণ পরপর গলা শুকিয়ে আসে।

বাচ্চাদের পড়ানো বিরাট ধৈর্যের ব্যাপার। মাঝে মাঝে মনে হয় এর চাইতে মাটি কাটাও সহজ। ক্লাস কন্ট্রোল করতে করতেই সময় যায়। এর মধ্যেই বাচ্চাদের পড়ানো, হোম ওয়ার্ক চেক করা, খাতা দেখা, ডায়েরী লিখা...দম ফেলার সময় নেই। এক ক্লাস শেষ হতে না হতেই আরেক ক্লাস। মাঝে মাঝে মাথা পুরো ভো ভো করে। শুণ্য শুণ্য লাগে।

“আরে মারিয়া ম্যাডাম যে! কতক্ষণ?”

মারিয়া চোখ তুলে দেখল সোমা ম্যাডাম। সোমা ম্যাডাম বয়সে মারিয়ার প্রায় কাছাকাছি। তবে এই স্কুলে মারিয়ার সিনিয়র। মারিয়ার দু বছর আগে তিনি জয়েন করেছেন।

“এইতো ম্যাডাম, হল দশ মিনিট। বসুন না...”

সোমা ম্যাডাম চেয়ার টেনে বসলেন।

মারিয়া জিজ্ঞাসা করল “আপা, চা খাবেন তো?”

সোমা ম্যাডাম বললেন “চা অলরেডি এক কাপ খেয়েছি। এখন আর খাব না। একটু পরেই তো মিটিং। ওখানেও নিশ্চয় চা নাস্তা কিছু জুটবে। তাই আপাতত পেটটা খালি রাখছি”

মিটিঙের কথা মারিয়ার একদমই মনে ছিল না। গতকালই নোটিশ দেয়া হয়েছিল। সাধারণত মাসে একবার শিক্ষকদের মিটিং হয়। এ মাসে এই নিয়ে দুবার হচ্ছে।

“ইস! মিটিঙয়ের কথা আমি একদমই ভুলে গিয়েছিলাম। আজ সারাদিন যা গেল! টানা ছয়টা ক্লাস নিতে হল। আমার ছিল চারটা, সেই সাথে শিহাব স্যার আর রোকেয়া ম্যাডামের মেকআপ ক্লাস। ভেবেছিলাম, ক্যান্টিন থেকে সোজা বাড়ি চলে যাব” কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল মারিয়া।

“আপনার ব্যাগে কি প্যারাসিটামল আছে?”

“কার লাগবে? আপনার?”

“উহু, আমার জন্য নয়” সোমা ম্যাডাম মুচকি হেসে বললেন “আপনার জন্য। আপনার চেহারা দেখছি রীতিমত বিধ্বস্ত। আজকের মিটিং সহজে শেষ হবে না। অনেকক্ষণ ধরে চলবে। তাই আগেভাগেই প্যারাসিটামল খেয়ে নিন। নইলে মিটিংয়ে বসে তাল রাখতে পারবেন না। মাথা ধরে যাবে”

অন্য মিটিঙগুলো সাধারণত ১৫-২০ মিনিটেই শেষ হয়ে যায়। মারিয়া জিজ্ঞাসা করল “আজকের এজেন্ডা কি?”

“অনেক। কিছু আছে রীতিমত ভয়াবহ। সব কথা এখানে বলা যাবে না। মিটিঙে গেলেই টের পাবেন”

কয়দিন ধরেই শিক্ষকদের রুমে গুজুর গুজুর, ফিসফিস চলছিল। মারিয়া কান পেতে শুনতে যায় নি। এইসব আলোচনায় এমনিতেই তার আগ্রহ কম। সোমা ম্যাডামের কথা শুনে মনে পড়ল, দুই দিন আগে শান্তা ম্যাডাম আর রোকেয়া ম্যাডাম কি নিয়ে যেন আলাপ করছিল। দুজনের চোখেমুখে চাপা উত্তেজনা। শান্তা ম্যাডাম চোখ মুখ কুঁচকে বলছিলেন “আরে আপা! আমার নিজের মেয়ে হলে কেটে টুকরো টুকরো করে নদীর জলে ভাসিয়ে দিতাম!”

স্কুলে শান্তা ম্যাডাম বদরাগী হিসেবে পরিচিত। অল্পতেই রেগে যান। ছেলে মেয়েরা তাকে বাঘের মত ভয় পায়। তুহিন স্যার একবার টিচার্স রুমে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, শান্তা ম্যাডামের উচিৎ এফিডেভিট করে নিজের নাম পালটে ফেলা। নামের সাথে তার স্বভাব চরিত্রের এত ভয়াবহ অমিল দেখলে, তার বাবা মাও আঁতকে উঠতেন!

ভাগ্য ভাল, শান্তা ম্যাডাম তখন রুমে ছিলেন না। তাহলে একটা তুলকালাম বেধে যেত।

সোমা ম্যাডাম উঠে দাঁড়ালেন “আমি যাচ্ছি। আপনি তাহলে আসুন”

মারিয়া চায়ে চুমুক দিতে দিতে মাথা নাড়ল। মাথার বাম পাশে হালকা ব্যথা শুরু হয়েছে। শিরাগুলো দপদপ করছে। চা শেষ করে একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিল।

তারপর পা বাড়াল টিচার্স রুমের দিকে ।
.
.
২.
মারিয়া মিটিং রুমে এসেই ফিসফাস টের পেল। সবার মধ্যেই একটা চাপা উত্তেজনা। মারিয়া এক পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়ল। মাথা ব্যথাটা সারে নি। বরং একটু একটু করে যেন বাড়ছে।

কিছুক্ষণ পরেই প্রিন্সিপ্যাল স্যার রুমে ঢুকলেন।

প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে মারিয়ার বেশ লাগে। হাসিখুশি একজন মানুষ। বয়স প্রায় পঞ্চান্ন। কিন্তু এই বয়সেও স্যার দারুণ চটপটে। প্রতিদিনই পুরো স্কুল চক্কর দিয়ে বেড়ান। সবার খোঁজখবর রাখেন। কিছু কিছু মানুষ আছে এমন, যাদের দেখলে শ্রদ্ধা, সমীহ, ভালবাসা সব অনুভূতি একসাথে হয়। স্যারও ঠিক তেমন।

প্রিন্সিপ্যাল স্যারই কথা শুরু করলেন “আপনারা জানেন, গত সপ্তাহে স্কুলে কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও বেশ আলোচনা হচ্ছে। আপনাদেরকে তাই ডেকেছি, এটা নিয়ে কথা বলার জন্য। আমি আপনাদের সবার মতামত জানব। প্রথমে শান্তা ম্যাডামের কাছ থেকেই শুনি। তিনি এই স্কুলের সবচেয়ে সিনিয়র শিক্ষক“

শান্তা ম্যাডাম বলা শুরু করলেন “আমি ক্লাস সিক্সের ক্লাস টিচার। ক্লাস সিক্সের সব কিছু আমাকেই দেখতে হয়। গত মঙ্গলবারে ক্লাস সেভেনের এক ছেলে আমার ক্লাসের এক মেয়েকে প্রেমপত্র পাঠিয়েছে”

তুহিন স্যার জিজ্ঞাসা করলেন “ছেলে মেয়েদের ক্লাস তো আলাদা হয়। ছেলেটা প্রেমপত্র পাঠাল কি করে?”

“ঐ ছেলেরই এক বোন আছে ক্লাস সিক্সে। ওর মাধ্যমেই প্রেমপত্র পাঠানো হয়েছে। ডায়েরী চেক করতে গিয়ে ব্যাপারটা আমার নজরে আসে। আমি প্রিন্সিপাল স্যারকে জানিয়েছি। মেয়েটাকেও ক্লাসে আচ্ছামত বকেছি” শান্ত ম্যাডাম জবাব দিলেন।

ক্লাস ফাইভের ক্লাস টিচার হলেন শেফালী ম্যাডাম। প্রিন্সিপ্যাল স্যার শেফালী ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বললেন “আপনার ক্লাসে কি হয়েছিল?”

শেফালী ম্যাডাম লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন। মারিয়া বুঝতে পারল না, তিনি এত লজ্জা পাচ্ছেন কেন?

প্রিন্সিপাল স্যারও ব্যাপারটা খেয়াল করলেন “দেখুন! এখানে আমরা সবাই শিক্ষক। পাশাপাশি বাচ্চাদের অভিভাবকও। সমস্যার সমাধান করতে হলে আমাদের সমস্যাটা জানতে হবে।”

শেফালী ম্যাডাম মুখ খুললেন। গলার স্বর কাঁপা কাঁপা। বোঝাই যাচ্ছে, তিনি ঠিক স্বচ্ছন্দ নয়। কোনরকমে বলে গেলেন “গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা। টিফিন পিরিয়ড চলছিল। আমি খেয়াল করলাম, টয়লেটের পাশে কিছু মেয়ে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করছে। আমাকে দেখে সব চুপ হয়ে গেল। পরে জানতে পারলাম...কি করে যে বলি...ইয়ে দুটো মেয়ে নাকি একসাথে টয়লেটে...” শেফালী ম্যাডাম আর শেষ করতে পারলেন না।

প্রিন্সিপাল স্যার জিজ্ঞাসা করলেন “আপনি কি তার সত্যতা যাচাই করেছেন”

“জী স্যার...ঘটনা সত্য”

“আপনি কি করলেন?”

“আমি স্যার প্রথমটায় ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না, কি করা উচিৎ। পরে তো স্যার আপনাকে জানিয়েছি।“

প্রিন্সিপাল স্যার মাথা নাড়লেন “আর তাহেরা ম্যাডাম যেন কি বলতে চাইছিলেন?”

তাহেরা ম্যাডাম বললেন “আমার ক্লাস থ্রিতেও শান্তা ম্যাডামের মত ঘটনা। ক্লাস থ্রি এর এক মেয়ে ক্লাসের ফার্স্ট বয়কে প্রেমপত্র দিয়েছে”

“আপনি নিজে দেখেছেন?”

“জী স্যার”

“তাতে কি লেখা ছিল?”

“খুব বেশি কিছু নয়। sweet heart লিখে ছেলেটার নাম লেখা। তার নিচে একটা লাভ চিহ্ন। লাভ চিহ্নের নিচে মেয়েটার নাম”

শিক্ষকেরা সবাই হেসে উঠলেন। কেবল শান্তা ম্যাডামই গম্ভীর।

সবার হাসি থামলে তিনি বলে উঠলেন “স্যার আমরা হয়তো হাসছি। কিন্তু ব্যাপারটা গুরুতর। আমাদের স্কুলের একটা মান সম্মান আছে। সুনাম আছে। এইসব কথা বাইরে গেলে লোকে কি বলবে?

আমি তো স্যার ভাবতেই পারছি না, ক্লাস থ্রি এর একটা বাচ্চা মেয়ে একটা ছেলেকে এইভাবে প্রেমপত্র পাঠায় কি করে? আমাদের এই বয়সে আমরা প্রেম কি জিনিস তাইতো জানতাম না। আর ক্লাস ফাইভের ঘটনা তো মুখে আনার মত না। আমার মনে হয় ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। ঐ মেয়ে দুটোকে টিসি দিয়ে বের করে দেয়া উচিৎ।“

পুরো রুম আবার গম্ভীর হয়ে উঠল। প্রিন্সিপাল স্যার বাকি শিক্ষকদের দিকে ফিরলেন “আপনাদের কি অভিমত?”

শিক্ষকদের মধ্যে তিনজন টিসি দেয়ার পক্ষে। বাকিদের কেউ কেউ অন্য কোন কঠোর শাস্তির কথা বললেন। অন্যরা বললেন, অভিভাবকদের কাছে স্টুডেন্টদের নামে নালিশ করতে।

মারিয়া চুপচাপ সবার কথা শুনছিল। প্রিন্সিপাল স্যার এবার মারিয়ার দিকে ফিরলেন “মারিয়া ম্যাডাম! আপনি এত চুপচাপ কেন? কিছু বলছেন না যে”

মারিয়া আস্তে করে বলল “এইতো স্যার, সবার কথা শুনছি”

“আপনার কি অভিমত?”

মারিয়া উঠে দাঁড়াল। মাথা ব্যথাটা আগের চাইতে কম। শিরার দপদপানিটাও কমেছে। মারিয়া বলা শুরু করল “আসলে স্যার, আমি এই স্কুলে সবচাইতে নবীন শিক্ষক। বয়সেও বোধকরি সবার ছোটই হব। সবার সামনে কথা বলতে ঠিক সাহস হয় না”

কোন এক অজানা কারণে প্রিন্সিপাল স্যার মারিয়াকে খুব স্নেহ করেন। স্যার হেসে অভয় দিলেন “কোন সমস্যা নেই। আপনি নির্ভয়ে বলুন”

মারিয়া একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলো। তারপরে বলল “আসলে স্যার, এইখানে যত ঘটনা বলা হয়েছে, তার কোন কিছুই আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগে নি”

মারিয়া খেয়াল করল, সবগুলো চোখ এখন তার দিকে নিবদ্ধ। শান্তা ম্যাডামের চোখে মুখে পরিষ্কার অসন্তষ্টি।

একটু দম নিয়ে মারিয়া আবার বলা শুরু করল “ছেলে মেয়েদের যে বয়স, আমরা সবাই এই বয়স পেরিয়ে এসেছি। এই বয়সে ছেলে মেয়েরা নিজেদের শরীরের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আগ্রহ অনুভব করে। যাকে আমরা বলি বয়ঃসন্ধি।“

শান্তা ম্যাডাম কিছুটা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন “ক্লাস থ্রি এর বাচ্চার আবার কিসের বয়ঃসন্ধি?”

মারিয়ার তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে ফিরল “বয়ঃসন্ধির পাশাপাশি আর একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখা উচিৎ। পরিবেশ। ভেবে দেখুন স্যার, আজ ঘরে ঘরে ডিশ, টেলিভিশন। হাতে হাতে মোবাইল, ইন্টারনেট। আজকাল ছেলে মেয়েরা আগের যে কোন সময়ের চাইতে অনেক বেশি পরিপক্ক।

আমাদের এ সময়ে নাটক, সিনেমা, গানে একটা জিনিসই থাকে-প্রেম। এর বাইরে আপনি কিছু পাবেন না। যেদিকেই তাকান, সেদিকেই প্রেমের ছড়াছড়ি। যেন, দুটি ছেলে মেয়ের মাঝে প্রেম ছাড়া আর কোন সম্পর্ক হতে পারে না। তাই, একটু বুঝতে শেখার পর থেকেই বাচ্চারা প্রেম শিখছে। শিখছে, কাউকে ভাল লাগলে প্রেম নিবেদন করতে হবে।

তাছাড়া, এখন ইন্টারনেট অনেক সহজলভ্য। অনেক বাচ্চারাই অভিভাবকদের অগোচরে আপত্তিকর ভিডিও দেখে। গান দেখে। দেখে দেখে তারা বয়সের চাইতে বুড়িয়ে যাচ্ছে। বয়ঃসন্ধিও হচ্ছে আগে আগে।

বয়ঃসন্ধিকালে এমনিতেই সব বাচ্চাদের মাঝে শারিরীক, মানসিক কিছু পরিবর্তন আসে। কিন্ত এখন বয়স দিয়ে বাচ্চাদের বিচার করা কঠিন। এটাই স্যার আজকের যুগের বাস্তবতা”

মারিয়া কিছুক্ষণের জন্য থামল। রুমের সবাই নিরব। কেউ কিছু বলছে না। প্রিন্সিপাল স্যারই মুখ খুললেন “আপনার পরামর্শ কি? আমাদের এখন কি করা উচিৎ?”

“আমি স্যার টিসি দেয়ার পক্ষে নই। ছেলে মেয়েরা হয়তো বুঝতেই পারছে না, কাজটা অন্যায়। তাছাড়া টিসি দিলে এই সব ঘটনার কথা বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার ক্লাসে সবার সামনে এগুলো নিয়ে বকাঝকা করলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়। এতে ছেলে মেয়েরা অপমানিত বোধ করে। আজকাল খুব সামান্য কারণে আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটছে। তেমন কিছু হলে, তা আমাদের সবার জন্যই খারাপ হবে।

তাই আমি মনে করি, তাদের বাবা মায়েদের সাথে আমরা যোগাযোগ করতে পারি। ঘটনা সম্পর্কে জানাতে পারি। পাশাপাশি ছেলে মেয়েদেরকে কাউন্সেলিং করতে পারি। তাদের বয়স কম। অনেক কিছুর ভাল মন্দ বুঝার মত তাদের বয়স হয় নি। তাদের সামনে এইসব কাজের কুফল তুলে ধরা দরকার। আন্তরিকতা দিয়ে, দরদ দিয়ে। ঠিক বন্ধুর মত।

আমার স্যার আরও একটা পরামর্শ আছে”

“কি পরামর্শ”

“আমরা একজন প্রফেশনাল মনোবীদকে স্কুলে নিয়োগ দিতে পারি। প্রতিদিন না হোক তিনি অন্তত সপ্তাহে একদিন স্কুলে থাকবেন। ছেলে মেয়েরা তার সাথে কথা বলবে। মন খুলে তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা জানাবে। এ জাতীয় সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে তিনি তাদের পরামর্শ দিবেন।

সাধারণ যে কোন মানুষের চাইতে প্রফেশনাল মনোবীদের প্রভাব অনেক বেশি”

তুহিন স্যার সোৎসাহে সায় দিলেন “আমি মারিয়া ম্যাডামের সাথে একমত। আমি স্যার এমএস করেছি অস্ট্রেলিয়ায়। আমি দেখেছি, সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রফেশনাল মনোবীদ থাকেন। আমাদের দেশে এই ধারা এখনো সেভাবে শুরু হয় নি। আমরা স্যার এই ব্যাপারটা শুরু করতে পারি।“

কিছুক্ষণের জন্য নীরবতা। একটু পরে প্রিন্সিপাল স্যারই নীরবতা ভাঙ্গলেন “অনেকগুলো পরামর্শ এসেছে। চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমাদের স্কুল কমিটির সাথে পরামর্শ করা দরকার। আজ এই পর্যন্তই থাক। কি সিদ্ধান্ত হয়, আমি আপনাদেরকে পরে জানাব”

সোমা ম্যাডাম এগিয়ে এল মারিয়ার কাছে। ফিসফিস করে বললেন “ম্যাডামতো রীতিমত ফাটিয়ে দিয়েছেন!”

মারিয়া মুচকি হেসে উঠল। বাসায় ফিরতে হবে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে…

লিখেছেন: শামসুর রহমান ওমর

পঠিত : ১৩১৮ বার

মন্তব্য: ০