Alapon

হায়দ্রাবাদের অজানা ইতিহাস...

হায়দ্রাবাদ এর কথা শুনলে আপনার মাথায় কি আসে প্রথমে?

বিরিয়ানি, হালিম, তেলেঙ্গানা আর তেলুগু সিনেমা।আজকের বিরিয়ানির শহর ও টলিউডের কেন্দ্র হায়দ্রাবাদের রয়েছে একটা সম্বৃদ্ধ ইতিহাস। দাক্ষিণাত্যের মধ্যে ছিল নিজস্ব রাজ্য।পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তি ওসমান আলী খান ছিলেন এর নিজাম তথা শাসক। উসমানী খিলাফতের পতনের পর উসমানী খিলাফতের সর্বশেষ খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মাজিদ উনার কন্যা শাহজাদী নিলুফার সুলতানার সাথে ওসমান আলী খানের পুত্র মোয়াজ্জাম জাহের সাথে বিয়ে দেন যাতে এই দুইয়ের মিশ্রণ থেকে এমন লিডারশীপ তৈরী হয় যারা পুনরায় মুসলমানদের নেতৃত্ব দিতে পারে।কিন্তু ইতিহাসের নির্মম পরিহাস এই যে এটা আর সম্ভব হয় নি।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় অনেকগুলো দেশীয় করদ রাজ্য ছিল।হায়দ্রাবাদ তার মধ্যে অন্যতম। দেশীয় রাজ্যগুলোর ভাগ্য কিভাবে নির্ধারিত হবে তা রাজ্যগুলোর উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।কিন্তু বাস্তবতা এই যে অধিকাংশ রাজ্য ভারত তার সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসারে দখল করে নেয়।হায়দ্রাবাদ ১৯৪৭ সালে ভারত কিংবা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।পাকিস্তান ও হায়দ্রাবাদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয় এবং হায়দ্রাবাদকে জিন্নাহ আশ্বাস দেন যে, যখন হায়দ্রাবাদের পতন হবে তার পরবর্তী মিনিটে দিল্লির পতন হবে।কিন্তু ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে কায়েদে আযম মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ মাত্র এক বছরের মাথায় ইন্তেকাল করেন এবং ভারত সেই সময়টাকেই কাজে লাগায়।

১১ ই সেপ্টেম্বরে কায়েদের মৃত্যুর পর সমগ্র পাকিস্তান যখন শোকে নিমজ্জিত ঠিক সেই সময়ই মানে ১৩ ই সেপ্টেম্বর ভারত অপারেশন পোলো শুরু করে।শুরু হয় এক অসম যুদ্ধ।এই অসম যুদ্ধে ভারতের কনভেনশনাল ট্রেইনড মিলিটারির সনে হায়দ্রাবাদ দুর্বল হয়ে পড়ে।সেই সাথে ছিল সেনাপতি আল ইদরুসের গাদ্দারি। যার ফলে হায়দ্রাবাদের বাহিনী ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল জয়ন্ত নাথ চৌধুরীর নিকট আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।অসম এই যুদ্ধে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায় ও অনেক নারী ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়।এইভাবে আরেকটা রাজ্য তাদের স্বাধীনতা হারায়।ভারত যে যুক্তি দিয়ে হায়দ্রাবাদ দখল করে সে যুক্তি কিন্তু কাশ্মীরের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেনি।হায়দ্রাবাদ হিন্দু মেজরিটি বলে দখল করে নেয় অথচ সেই নিয়মানুসারে কাশ্মীর পাকিস্তানের হওয়ার কথা।এইভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদী আর্য সাম্রাজ্য ভারত দ্বিচারিতা অবলম্বন করে।

আজও হায়দ্রাবাদ,আওরাংগাবাদ,সেকেন্দ্রাবাদের অলিগলিতে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়।মানুষ ঘুরে ফিরে খুঁজে বেড়ায় তার সোনালী অতীত।হয়তো হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানীর মাঝেই হায়দ্রাবাদ রাজ্যের পরিচিতি খুঁজে বেড়ায় মানুষ।।

পঠিত : ২০৬২ বার

মন্তব্য: ০