Alapon

ইসলাম জ্ঞান অর্জন করাকে এতো বেশি গুরুত্ব দেয় কেন...?

দিন কয়েক আগে এক শায়খের মজলিসে বসেছিলাম। শায়খ বর্তমান তরুণ প্রজন্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে শায়খ বললেন- বর্তমান সময়ের তরুণরা আমল করার চেয়ে ইলমের (জ্ঞান) প্রতি বেশি আগ্রহী। অথচ, ইলম কাউকে জান্নাতে নিবে না, আমলই মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।

আলোচনা শেষে শায়খকে বললাম- ইলম ( জ্ঞান ) ছাড়া আমল শুদ্ধ হবে কী করে?
তাঁকে আরও বললাম- ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আমলের সাথে সাথে অবশ্যই ইলমকে গুরুত্ব দিতে হবে। ইলম না থাকলে আমল শুদ্ধ হচ্ছে না ভুল হচ্ছে তা বাছ-বিচার করব কী করে!

এ বিষয় শরীয়তের মতামত কী তা আমার জানা ছিল না। আমার যা মনে হয়েছে, যা বিশ্বাস করি তা অকপটে বলে এসেছি। বাসায় ফিরে এই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে বসে গেলাম। হাতের কাছে পেয়ে গেলাম আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভীর ‘ইসলামের ব্যাপকতা’ বইটি। পড়তে শুরু করলাম।

বইটি পড়তে গিয়ে এ বিষয়ে খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ- এর বক্তব্য পেলাম। তিনি বলেছেন- ‘ইলমবিহীণ আমলকারী যতোটুকু সংস্কার করে, তার চেয়ে বেশি ধ্বংস করে।’

ইমাম গাজালি রহ. বলেন- ‘আল্লাহর পথের পথিককে সর্বপ্রথম যে প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়, তা হলো জ্ঞানের প্রতিবন্ধকতা।’

ইমাম হাসান বসরি রহ. বলেন- ‘ইলমবিহীণ আমলকারী পথহারা মুসাফিরের মতো। সে যতটুকু নির্মাণ করে, তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে। তোমরা জ্ঞানার্জন করো, যাতে তোমাদের ইবাদত নষ্ট হয়ে না যায়। তোমরা ইবাদতে মগ্ন হও, যাতে তোমার ইলম নষ্ট না হয়।
একটি গোষ্ঠি ইলম ত্যাগ করে ইবাদতে মগ্ন হয়েছিল। অতঃপর তাদের তরবারি উম্মতে মুহাম্মাদির ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। আফসোস, যদি তারা জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করত, তাদের জ্ঞান কখনও এ গর্হিত কাজের অনুমতি দিতো না।’

আল্লাহর রাসূলের সাহাবি মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. বলেছেন- ‘ইলম হলো আমলের ইমাম। আমল তার অনুসারী।’

একবার আল্লাহর রাসূলের সামনে দুজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হলো। একজন আবিদ (ইবাদাতকারী), অপরজন আলিম ( জ্ঞানী )। তখন আল্লাহর রাসূল সা. বললেন- ‘আবিদের ওপর আলিমের মর্যাদা, তোমাদের মাঝে আমার মর্যাদার মতো।’

অন্যদিকে কতক আলিম জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরতে বলেছেন- ‘ মানুষের জন্য খাবার পানীর চেয়ে জ্ঞান বেশি জরুরি। কারণ, খাবার পানি ছাড়া শরীর ধ্বংস হয়ে যায়। আর জ্ঞান ছাড়া আত্ম ধ্বংস হয়ে যায়।’

প্রশ্ন আসতে পারে, ইসলাম জ্ঞান অর্জনকে এতোটা গুরুত্বারোপ প্রদান করল কেন?

মূলত চারটি কারণে ইসলাম জ্ঞান অর্জনকে এতোটা গুরুত্ব প্রদান করেছে।

প্রথমত, আকিদায় হক-বাতিল ও চিন্তায় ভুল-শুদ্ধ নিরূপনের জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন।

দ্বিতীয়ত, আমলের মাঝে বৈধ-অবৈধ পার্থক্য করার একমাত্র মাধ্যম হলো জ্ঞান। জ্ঞান ছাড়া কোনো কিছু যাচাই করার সুযোগ থাকবে না। অন্ধের মত অনুসরণ করে যেতে হবে। ফলে, বিদয়াতে জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরী হয়।

তৃতীয়ত, জ্ঞান শরীয়তি আমলের মর্যাদা নিরুপণ করে। অর্থাৎ কোন আমলটি ফরজ, কোনটি সুন্নত, কোনটি নফল, কোনটি ফরজে কেফায়া বা ফরজে আইন তা নিরূপনের জন্য জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

চতুর্থত, জ্ঞানী ব্যক্তি সামাজিক জীবনে ন্যায়বিচার, বিভিন্ন ঘটনা ও প্রেক্ষাপটের যথাযথ মূল্যায়নের একমাত্র মাধ্যম।

সবকথার শেষ কথা, জ্ঞান মানুষকে শুদ্ধ করে। আর শুদ্ধ মানুষের আমলই শুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যার ফলে তার ইবাদত কবুল হওয়ার সম্ভাবনাও ঢের বেশি। একারণেই আমলকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, অনুরূপভাবে জ্ঞান অর্জনেও গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। তবেই ভারসাম্য নিশ্চিত হবে।

পঠিত : ১২৩৮ বার

মন্তব্য: ০