Alapon

আতিউর রহমান; রাখাল বালক থেকে অর্থ পাচারের কারিগর...

দেশের প্রিন্ট মিডিয়া জগতে ‘প্রথম আলো’ যে একক আধিপত্য করে যাচ্ছে এ কথা যে কেউ স্বীকার করতে বাধ্য। তারা নিজেদের মান ধরে রাখতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে বিদেশি কোম্পানীর দ্বারা নিজেদের কাজ রিভিউ করে। যখন কোনো কাজের পুনঃমূল্যায়ণ হয় তখন সেই কাজের মান পড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে কম; বরং মান উন্নয়ন হয়।

সম্বভত, প্রথম আলো রিভিউ কমিটির ইতিবাচক দিকটি বেশি পেয়েছে। যার কারণে, তারা এখনো দেশের সেরা প্রিন্ট মিডিয়া হিসেবে পরিচিত। আর তার সুবাদে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নজনকে নিয়ে ফিচার রিপোর্ট প্রকাশ করে জাতির সামনে হিরো বানিয়েছে। পরবর্তিতে দেখা গেছে, এই হিরোরাই দেশের মুখে ছড় বসিয়ে দিয়েছে।

তেমনই একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। ‘প্রথম আলো’ তাকে নিয়ে ফিচার রিপোর্ট করল। কী করে আতিউর রহমান রাখাল বালক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হল, তা প্রকাশ করল। প্রথম আলোর রসিয়ে রসিয়ে করা রিপোর্ট পড়ে দেশের মানুষ তার প্রতি সিম্প্যাথি অনুভব করতে লাগল। কেউ কেউ তাকে আইকন ভাবতে শুরু করল। আবার কতক অভিভাবক তার সন্তানকে আতিউর রহমানের গল্প শুনিয়ে বলতে লাগল- ‘দেখছো কত কষ্ট করে পড়াশুনা করে আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর! তুমিও যদি পড়াশুনা কর, তাহলে তার মত তুমিও এতো বড় অফিসার হতে পারবে।’

চারদিকে যখন আতিউর রহমানের জয়জয়কার তখনই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটল। ৮১০ কোটি টাকা চুরি হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর গভর্নর সাহেব স্বাভাবিক সময়ের মত ভারত সফরে যান। সেখানে শান্তিনিকেতনে প্রথম সাংবাদিকদের কাছে ব্যাংক রিজার্ভ চুরির ঘটনা স্বীকার করেন। এরপর পাবলিকের অগোচরে ঘটে যায় অনেক ঘটনা। সেসব ঘটনার সিংহভাগই আমরা আম পাবলিকরা জানি না।

তারপর আচমকা কোনো তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা ছাড়াই ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। প্রথম আলো তখনও তাকে নিয়ে সিম্প্যাথি মূলক রিপোর্ট প্রকাশ করে, তার প্রতি সাধারণ মানুষের মন গলিয়ে তুলল। সাধারণ মানুষও হায় হায় করে উঠল। কেউ কেউ বলল, ‘আতিউর রহমানকে বলির পাঠা করা হলো। রাখাল বালক থেকে ব্যাংকের গভর্নর হওয়া আতিউর রহমান এই কাজ করতেই পারে না। রাখাল বালক বলে কথা!’

কিন্তু অনেকদিন পরে হলেও জানা গেল, রিজার্ভ চুরির বিষয়টি গভর্নর আতিউর রহমান সাহেব ২৪ দিন পর্যন্ত গোপন রাখেন। পত্রিকার ভাষ্যনুসারে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম তথ্য গোপনের বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, ৪ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার রাতে চুরি হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তা ধরা পড়ে ৬ ফেব্রুয়ারি, শনিবার। অর্থ চুরির ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পরে শনিবার দুপুরে তিনি বিষয়টি গভর্নর আতিউর রহমানকে জানান এবং থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে জিডির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে পাঠানোর জন্য তিনি বলেন। কিন্তু গভর্নর তাঁকে জানান, জিডি করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা হয়রানির শিকার হবেন এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন। আর অর্থমন্ত্রী কোথায় কী বলে ফেলেন ঠিক নেই। এমনকি অভ্যন্তরীণ তদন্তও গোপনে করার জন্য তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।’

এ বিষয়ে আতিউর রহমান বলেন, ‘তাঁর বন্ধু ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আমান্দো এম তেরেঙ্গার সঙ্গে তিনি টেলিফোনে কথা বলেছেন। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর তাঁকে বলেছেন, জানাজানি হলে অপকর্মকারীরা পালিয়ে যাবে; বরং গোপন থাকলে সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে।’

আর একারণে তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেও জানাননি। তথ্য গোপনের বিষয়টি ফৌজদারি অপরাধ। আর ২৪ দিন পর্যন্ত তথ্য গোপন করার কারণে, অর্থ পাচারকারিরা নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত ও নিরাপদ করার সুযোগ পেয়েছে। আর এই সুযোগ করে দিয়েছে রাখাল বালক আতিউর রহমান।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রাখালবালক আতিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করা হলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। কিন্তু তাকে আদৌ কি গ্রেফতার করা হবে?

সে কথা সময়ই বলে দিবে। কিন্তু যে আতিউর রহমানকে প্রথম আলো জাতির সামনে হিরো বানালো, সেই প্রথম আলো কি আবার ফিচার রিপোর্ট করবে. ‘আতিউর রহমান; রাখাল বালক থেকে অর্থ পাচারের কারিগর’!

পঠিত : ১৫০২ বার

মন্তব্য: ০