Alapon

অমিতশাহ ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করতে গিয়ে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করতে যাচ্ছেন না তো?

অতি সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি এক বক্তব্যে বলেন, ‘এক দেশ এক ভাষা। হিন্দি ভাষার মাধ্যমেই দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব, তাই জাতীয় ভাষা হোক হিন্দি’।

অমিত শাহর এই মন্তব্য ভারতকে ১৯৬৫ সালের সময়ে নিয়ে গেছে। উল্লেখিত সময়ে, ভাষাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাডুতে এক ব্যাপক দাঙ্গা সংগঠিত হয়। উক্ত দাঙ্গায় ২ পুলিশসহ প্রায় ৭০ জন নিহত হয়।

এই ইতিহাস অনেকেই জানে না। আর না জানার দরুন আমরা দাবি করি, ভাষার জন্য একমাত্র বাংলাদেশি বাঙালিরাই শহিদ হয়েছে। এই তথ্য ভুল। তামিলনাডুর মানুষরাও ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। চলুন তাহলে সেই ইতিহাস জেনে নেওয়া যাক।

ভারতের স্বাধীনতার পূর্ব সময় থেকেই তামিলনাডুর মানুষদের মাঝে হিন্দি বিরোধী মনোভাব ছিল। ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের জন্য একক রাষ্ট্রিয় ভাষা নির্ধারণ করা সত্যিই বেশ কঠিন কাজ ছিল। যার কারণে ভারতের সংবিধানে বলা হয়, হিন্দি হবে ভারতের রাষ্ট্রভাষা। তবে পরবর্তি পনের বছর আধিকারী ভাষা হিসেবে ইংরেজিও ব্যবহার করা হবে। পনের বছর পর ভারতের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে হিন্দি। এই সংবিধান কার্যকর হয় ১৯৫০ সাল থেকে। ফলে ১৯৬৫ সাল থেকে ভারতের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে হিন্দি। এই সিদ্ধান্ত ভারতের অধিকাংশ রাজ্যের মানুষই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারেনি।

১৯৬৫ সালের ২৫ জানুয়ারী হিন্দিকে ভারতের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করার দিন ঘোষণা করা হয়। আর এই দিন কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ সমাবেশ গড়ে ওঠে। বিশেষ করে তামিলনাডুতে প্রতিবাদ সভা ছাত্র আন্দোলনে রূপ নেয়। আর সরকারীদল কংগ্রেস এই আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য পুলিশসহ দলীয় নেতাকর্মীদের রাজপথে নামায়। এক পর্যায়ে ছাত্রদের সাথে কংগ্রেস কর্মীদের বাকবিতন্ডা হলে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। সহিংসতা থেকে তা দাঙ্গায় রূপ ধারণ করে। এই দাঙ্গায় ২ পুলিশসহ প্রায় ৭০ জন নিহত হয়।

উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য ভারতের তৎকালীণ প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী বলেন, অ-হিন্দি প্রধান রাজ্যগুলো যতদিন চাইবে ততদিন আধিকারী ভাষা হিসেবে ইংরেজি ব্যবহার করতে পারবে। এই ঘোষণার সাথে সাথে তামিলনাডুতে দাঙ্গা বন্ধ হয় এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

এরপর থেকে ভারতে ভাষা নিয়ে আর কোনো সরকারকে বাড়াবাড়ি করতে দেয়া যায়নি। কিন্তু বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও সেই ভাষা নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিজেপি বিশ্বাস করে, ‘কেবল হিন্দিই পারে, ভারতকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে।’

কিন্তু বিজেপির এই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছুদিন থেকেই প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ হচ্ছে। কিন্তু সেখানে এর খুব একটা প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছিল না। কারণ, এক জরিপে দেখা গেছে ভারতের অ-হিন্দি ভাষাভাষি রাজ্যগুলোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যে হিন্দি প্রীতি উল্লেখযোগ্য হারে লক্ষ্য করা যায়। আর তাদের হিন্দিপ্রীতি বা নিজ ভাষার প্রতি অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ তাদের সাম্প্রতিককালের সিনেমাগুলোর দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

এ ক্ষেত্রে তামিলনাডু ব্যাতিক্রম। তারা তাদের সংস্কৃতি এবং সিনেমাতেও নিজস্ব সংস্কৃতি, স্বকিয়তা ও ভাষা বজায় রেখেছে। তাদের সিনেমাগুলোতে অহেতুক ইংরেজির ব্যবহারও দেখা যায় না; হিন্দি তো দূর কি বাত!

সেই তামিলনাডু আবারও হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। ভারতের তুমল জনপ্রিয় তামিল তারকা রজনীকান্ত বলেছেন, ‘কোনো ভাষা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না’। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “কোনো ভাষা জোর করে আরোপ করা যাবে না। দক্ষিণ ও উত্তরের রাজ্যগুলো তাদের ভাষা বাদ দিয়ে কিছুতেই হিন্দি ভাষা গ্রহণ করবে না।”

এটি শুধু রজনীকান্তের একক মতামত নয়। এটি তামিলনাডুর প্রত্যেকটি মানুষের মতামত।

বিজেপির হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রবনতা পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে মিলে যাচ্ছে। যার কারণে বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আর সেই ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপরেখা তৈরীতে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছিল। তাই বোদ্ধামহলে গুঞ্জন উঠেছে, অমিতশাহ ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করতে গিয়ে আবার ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করতে যাচ্ছেন না তো?

পঠিত : ৬৭৬ বার

মন্তব্য: ০

২০১৯-০৯-২০ ১৭:২৪

User
খালেদ বিন ওয়ালিদ

হয়তো তাই হতে যাচ্ছে

submit