Alapon

তালিবান সংক্রান্ত মিথগুলি থেকে বের হয়ে তাদের নিয়ে অব্জেক্টিভ স্টাডি করার সময় এসেছে।


গতকাল আফগানিস্তানে এক আঙ্গুর বাগানে ড্রোন হামলায় অন্তত ৩০ জন চাষী/শ্রমিক শাহাদত বরন করেছেন। (বিভিন্ন সোর্স সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছে, সর্বোচ্চ সংখ্যাটা ৭০)।

২০০৯ সালের দিকে মনে পড়ে, ক্লাস টেনে থাকতে ইংলিশ প্রাইভেট ব্যাচে আমার সাথে আমার এক বন্ধুর বিতর্ক হত এই সশস্ত্র পন্থা আসলে কতটা কার্যকর তা নিয়ে। তার ধারনা ছিল, টেকনোলজি ক্যান উইন এভরিথিং। আমেরিকার সাথে লড়ে লাভ নাই, কারন সে আপনাকে ঘরের মধ্যেই দূর থেকে মেরে দিতে পারে।
আমি বলতাম, গ্রাউন্ডে না জিতে কেউ কোন যুদ্ধ জিততে পারে না। বিমান থেকে বোম্বিং করে মানুষ মেরে কোন জায়গায় কেবল তখনই জেতা সম্ভব যখন আপনি সেখানকার সব মানুষ মেরে ফেলবেন।
যদি সেটা না পারেন বা করতে না চান তাহলে আপনাকে ল্যান্ডফোর্স নামাতেই হবে। এন্ড অফ দ্যা ডে যুদ্ধের ফায়সালা হয় যমীনের ওপর। এরিয়াল সুপিরিয়রিটি আপনাকে যমীনের জঙ্গে নামার আগেই শত্রুর কোমর ভেঙ্গে দিতে সাহায্য করবে, স্টিল ডিসাইসিভ ভিক্টরি পেতে গেলে আপনাকে যমীনে মুকাবিলা করতে হবে।

এই যে ড্রোন হামলাগুলি করে নিরপরাধ মানুষ খুন, এটা আমেরিকা আজকে বছরের পর বছর ধরে করে যাচ্ছে ২০০১ সালে তিন হাজার মানুষ হত্যার প্রতিকারে নেমে ন্যাশনাল সিকিউরিটি এনশিওর করার নামে।
প্রতিটি ড্রোন হামলা থেকে যে কয়টা নিরপরাধ লাশ পড়ে, ঠিক সে কয়টা পরিবার আমেরিকানদের রক্তপানের শপথ নেয়। এভাবে, আফগান তালিবানের শক্তি প্রতিটা ড্রোন হামলায় আসলে বাড়ে। প্রাথমিকভাবে কিছু বোঝা না গেলেও এখন বুঝা যাচ্ছে, আমেরিকা কর্তৃক ড্রোন টেকনোলজির অবাধ ব্যবহার তালিবানকে প্রচুর নিউ এইচআর গিফট করছে, আর তারা এটাকে ক্যাপিটালাইজ করে এমন লেভেলে নিজেদের শক্তিকে নিয়ে গেছে যে তাদের আর ঠেকানোই যাচ্ছে না। (খেয়াল করবেন, আমি বলি নি এটাই তালিবানের প্রধান শক্তি)

তালিবান শব্দটা বাংলাদেশের মিডিয়া আরবান মিডল ক্লাস ও হায়ার ক্লাসের কাছে এক প্রকার গালিতে পরিণত করেছে। কিন্তু দিনশেষে তারা এখন একটা রিজিওনাল ফোর্স। ইন্ডিয়া-ইরান-ইউএসএ-চায়না-রাশিয়া-পাকিস্তান-সউদী সবাই তাদের সাথে বসতে বাধ্য।
নির্বিচার বোম্বিং করে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া একটা দেশের ভেতর কিভাবে এমন এক শক্তির উত্থান হয় তার জবাব মিডিয়ার কাছে আছে কি??

তালিবান সংক্রান্ত মিথগুলি থেকে বের হয়ে তাদের নিয়ে অব্জেক্টিভ স্টাডি করার সময় এসেছে।
শত্রুপরিবেষ্টিত একটা স্বাধীনতাকামী শক্তি কিভাবে ছাই থেকে পুনরুত্থিত হতে পারে তার একটা উদাহরন হিসেবে তালিবানকে পাঠ করা যেতে পারে।
লিমিটেড ফিন্যানশিয়াল ও টেকনোলজিক্যাল রিসোর্স নিয়ে কিভাবে আনলিমিটেড রিসোর্সফুল কোন মিলিটারির সাথে লড়াই করে টিকে থাকা যায় তার উদাহরন হিসেবে তালিবানকে পাঠ করা যেতে পারে।
আইডিওলজির স্ট্র‍্যাটেজিক রিশেইপিংয়ের একটা উদাহরন হিসেবে তাদের পাঠ করা যেতে পারে।

আফগান মডেলকে মিলিটারিলি স্টাডি করা প্রয়োজন কেননা জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে আমাদের দরকার এমন বাহিনী ও স্ট্র‍্যাটেজি, যারা লিমিটেড রিসোর্স নিয়ে টেকনোলজিক্যালি এডভান্সড কোন মিলিটারিকে প্রোলংড ওয়রফেয়ারে হারিয়ে দিতে পারে।

লিখেছেন: মুহাম্মাদ সজল

পঠিত : ৪৫৫ বার

মন্তব্য: ০