Alapon

বিজেপি'র বিরুদ্ধে উত্তাল কলকাতার রাজপথ



যারা মিছিল ডেকেছিলেন, তারাও বোধ হয় ভাবেননি এই জায়গায় পৌঁছাবে মিছিলটা। রাজপথ ভরানোর ইতিহাস তাদের নতুন নয়। তবু, মাত্র এক রাতের ব্যবধানে, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ডাকে যে এভাবে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষকে পথে নামাবে মিছিলের আহ্বান, তা ভাবতে পারার কথা কী! গতকাল শুক্রবার এভাবেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে উত্তাল হয় কলকাতায় রাজপথ।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে গতকাল দুপুর থেকে শেষ সন্ধ্যা পর্যন্ত বহু ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, শিক্ষিকা, প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এ প্রতিবাদ মিছিলে যোগ। এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টির এবিভিপি উইং আয়োজিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এলে, বিক্ষোভ-প্রতিবাদে সামিল হন ছাত্রছাত্রীরা। তখন থেকেই শুরু ঝামেলার।

ভারতের কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে এ ঘটনার শিকার হন তিনি। বিজেপির ছাত্রসংগঠন ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ’ আয়োজিত নবীনবরণ উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে তাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন সুপ্রিয়। তাঁর সঙ্গে এ সময় বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালও ছিলেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে থাকে ‘গো ব্যাক বাবুল সুপ্রিয়’।

কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এককাট্টা হয়ে ঘোষণা দেন, বাবুল সুপ্রিয়সহ বিজেপির কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

অভিযোগ ওঠে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছে শিক্ষার্থীরা। তার জামা ছিঁড়ে দিয়েছে,তাকে গালিগালাজ করেছে। শিক্ষার্থীদের পাল্টা অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে ইচ্ছে করে অশান্তির আগুন ছড়িয়েছেন বাবুল। বাবুলের দেহরক্ষীরা পড়ুয়াদের গায়ে হাত তুললে তারা সর্ব শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করেন, তার পরেই ধস্তাধস্তি, হাতাহাতিতে গড়ায় গোটা পরিস্থিতি।

তবে কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি, এর জেরে দাউদাউ আগুন জ্বলবে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের বাইরে, পুড়ে যাবে ছাত্রদের ব্যাগ, জুতো, সাইকেল! ভাঙচুর হয়ে যাবে ইউনিয়ন রুম। যাদবপুর চত্বর জুড়ে ঘুরে বেড়ানো লাঠি হাতে, হেলমেট মাথায় প্রশিক্ষিত সাদা পোশাকের বিজেপি ‘কর্মী’রা এলোপাথাড়ি মেরে হাসপাতালে পাঠাবে একাধিক ছাত্রকে!

ভেতরে তখন শুয়ে রয়েছেন বাবুল। উপাচার্যের সঙ্গে উত্তেজিত কথোপকথনের পরে ফোন করেছেন রাজ্যপালকে, অনুরোধ জানিয়েছেন তাকে নিয়ে যেতে। বাবুলকে ঘিরে তখন ‘যাদবপুরের গান’ গাইছে কয়েকশো ছাত্রছাত্রী। রাতের দিকে বাবুল বেরিয়ে যান, শান্ত হয় পরিস্থিতি। কিন্তু শান্ত হলেও, এ আগ্রাসী আক্রমণের জের যে এখানে শেষ হবে না, তা বলাই বাহুল্য ছিল। বস্তুত, বরাবরই স্বতন্ত্র ও সংগঠিত ছাত্রঐক্যের ঘাঁটি বলে পরিচিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

তাই প্রত্যাশিত ভাবেই মিছিল ডাকে যাদবপুর। শুক্রবার বিকেলে জমায়েতের আহ্বান জানায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। বিকেল থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করে। বাড়তে বাড়তে ভরে যায় কলকাতার রাজপথ। যাদবপুর থেকে গোলপার্ক– এমাথা ওমাথা দেখা যায় না। বিকেল ফুরিয়ে আসার মুখে, লালচে আকাশের নীচে, জনজোয়ারে ভেসে যায় রাস্তা। ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, শিক্ষিকা, প্রাক্তনদের জমায়েত তখন উপচে পড়ছে পথ জুড়ে। জেলা থেকে এসে যোগ দিয়েছেন বহু প্রাক্তন। এমনকী ভারতের হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই থেকে সকালের ফ্লাইটে কলকাতা এসে বিকেলের মিছিলে হাঁটলেন বহু প্রাক্তন!

পঠিত : ৭২১ বার

মন্তব্য: ০