Alapon

মিশর, মোহাম্মদ মোর্সি, ডিপ স্টেট, ক্যুঃ পর্ব ১


হোয়াট ইজ ডিপ স্টেট? সাধারনত সরকারের কিছু প্রভাবশালী সদস্য বা সেনাবাহিনীর একেবারে উঁচু র‍্যাঙ্কের অফিসার, সমাজের ব্যবসায়ি এবং প্রভাবশালী কিছু সদস্য যারা গোপনীয় ভাবে নিজেদের স্বার্থে সরকারের বিভিন্ন নিয়ম নীতি নিয়ন্ত্রণ করে, এদের কে সম্মিলিত ভাবে এবং এক কথায় ডিপ স্টেট বলে। সরকারের উত্থান পতনে এরা অন্যতম প্রধান সহায়ক।

মিশরের ডিপ ষ্টেট হচ্ছে তাদের মিলিটারি তথা মিলিটারির একেবারে উপরের লেভেলের বেশ কিছু অফিসার। যাদের আমেরিকা পুরাপুরি নিয়ন্ত্রণ না করলেও প্রভাবিত করে। মিসরীয় মিলিটারি আমেরিকা থেকে প্রচুর এইড অর্থাৎ শর্ত সাপেক্ষে বিভিন্ন খাতে ডলার, অস্ত্র, মিলিটারি ট্রেইনিং, ইত্যাদি পায়। এটা আমেরিকার ফরেইন পলিসির অংশ। এজ এ ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট রাশিয়া চীন সব দেশেরই এই ধরনের ফরেইন পলিসি আছে। কেউ মিলিটারি খাতে টাকা ঢালে, কেউ অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে অর্থ বিনিয়োগ করে সেই দেশের পলিসি নিয়ন্ত্রনে বিশেষ ভুমিকা রাখে। মিশরের ক্ষমতায় টিকতে হলে সরকার প্রধানের এই ডিপ স্টেটের সমর্থন লাগে।

আমেরিকা ইয়োরোপের জন্য মিশরের ইম্পরটেন্স সৌদি আরবের কাছাকাছি, সৌদি থেকে তারা তেল কিনে, আর মিশরের সুয়েজ ক্যানাল দিয়ে সেই তেলবাহী জাহাজ আমেরিকা-ইয়োরোপ আসে। মিশরের সরকার সুয়েজ ক্যানাল কন্ট্রোল করে। সুয়েজ ক্যানাল দিয়ে নিরাপদে আর নির্বিঘ্নে তেলবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হলে, জাহাজগুলোকে আফ্রিকা ঘুরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হিবে। এতে করে ট্রান্সপোর্টেশান কস্ট বেড়ে যাবে, বিশ্ব বাজার তেলের মুল্যের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাবে, এবং সারা বিশ্বকে তাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল চাকা ঘুরাতে অত্যন্ত বিপাকে পড়তে হবে।

২০১১ সালে মিশরের আরব বসন্তে জনগন মিশরীয় পুলিশের বর্বরতা, জরুরি অবস্থা সম্পর্কিত আইন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, নাগরিক স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, দুর্নীতি, উচ্চ বেকারত্ব দূরীকরণের দাবী নিয়ে মাঠে নামলে আর তা দিন দিন চরম আকার ধারন করলে ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক আল্টিমেটলি আমেরিকা এবং মিসরীয় মিলিটারির সমর্থন হারালে ক্ষমতা ছেড়ে নেমে যেতে বাধ্য হন। মনে রাখা দরকার এর আগে জনগনের সব দাবী দাওয়া পুলিসের বুটের আর লাঠির আঘাতে শেষ হয়েছিল। ৩০ বছরে এই প্রথম মিশরীয়দের দাবির কাছে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য হলেও মিশরের সরকার আর ডিপ ষ্টেট উভয়ে নতি স্বীকার করেছে। ।

এর পর পুরাপুরি স্বচ্ছ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের মোহাম্মদ মোর্সি ক্ষমতায় বসেন। কিন্তু তিনি মিসরের অত্যন্ত পাওয়ারফুল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ এবং সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট সামরিক বিভাগকে নিয়ন্ত্রনে আনতে ব্যর্থ হন।

মোর্সি মিসরের সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্টকে দুইটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে নিজের হাত শক্তপোক্ত বানানোর প্রয়াস নেন। এক, পরবর্তী আট বছরের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নিয়োগ, দুই মিসরের সামরিক আদালতের সমালোচনা করার অধিকার। এর আগে সামরিক আদালত একেবারে আন্টাচেবল ছিল আর এই আদালত দিয়ে ডিপ স্টেট তাদের শত্রু মিত্র কন্ট্রোল করত। একই সাথে এই নতুন সংবিধান মিসরের সামরিক বাহিনীর অনেক অর্থনৈতিক ব্যবসা বানিজ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যার মধ্যে আছে তাদের বেকারি থেকে শুরু করে গাড়ির ব্যবসা,হোটেল ব্যবসা ইত্যাদি। বিভিন্ন অনুমান অনুযায়ী মিশরের জিডিপির ৮ থেকে ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে মিলিটারির বিভিন্ন ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক।

আবার একই সংগে নতুন সংবিধান মিশরে সংখ্যালঘু অধিকার, লিঙ্গ সমতা প্রদান করে এবং "ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ , এবং জায়গা" ভিত্তিক দলগুলিকে নিষিদ্ধ করে দেয়। যা সাধারন মিশরিয়দের কাছে জনপ্রিয়তা পায়।

কিন্তু মোর্সি মিলিটারির অর্থনৈতিক থলিকে নিয়ন্ত্রণ করে আল্টিমেটলি মিশরের ডিপ স্টেটকে বিলুপ্ত করার যে প্রয়াস হাতে নেন তা মোর্সির জন্য অভিশাপ ডেকে আনে। যেহেতু জনগনের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে মোর্সি ব্যর্থ হন, জনগনের মাঝে আবারও অসন্তোষ দেখা দেয়, এই সুযোগে, বা এই ব্যর্থতাকে হাইলাইট করে ডিপ স্টেট পিছন থেকে গুটি চালতে থাকে। জনগন আবারও রাস্তায় নেমে আসে, এবার তারা মোর্সির পতন চায়। মিলিটারি জনগনকে সাপোর্ট দেখিয়ে সামরিক অভ্যুথান ঘটায়।

আউট হন মিশরের ইতিহাসের প্রথম স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, এবং ডেমোক্রেটিক্যালি নির্বাচিত মিশরিয় প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোর্সি, আর ক্ষমতায় বসেন স্বৈরাচারী সামরিক বাহিনী প্রধান জেনারেল সিসি ।

নোট ১ঃ হোসনি মোবারকের সময় যত নির্বাচন হয়েছে সবগুলা ছিল সাজানো, রেজাল্ট পূর্ব নির্ধারিত, ফার্সিক্যাল।

লিখেছেন: সাবিনা আহমেদ

পঠিত : ৭৩৯ বার

মন্তব্য: ০