Alapon

মাওলানা মওদূদীর ব্যাপারে দেওবন্দিদের অবস্থান অপরবর্তিত থাকার নেপথ্য কারণ...


দেশ যখন ক্যাসিনো নিয়ে ব্যস্ত, তখন একদল ইসলামপন্থিরা মাওলানা মওদূদী সাহেবকে নিয়ে ব্যস্ত! বরাবর মওদূদী সাহেবর ব্যাপারে কওমিপন্থিরা অভিযোগ করেছেন, এখনও তা-ই করছেন। পার্থক্য কেবল ভাষার দিক থেকে!

আগে তাদের ভাষা ছিল আক্রমনাত্মক ও বিদ্বেষপূর্ণ। বর্তমানে, আপাতদৃষ্টিতে তাদের ভাষায় কিছুটা কোমলতা পরিলক্ষিত করা গেলেও, বাস্তবে কোমল নয়। এর কারণ, তারা নিজেদের মানসপটে এখনও মওদূদী সাহেবের ব্যাপারে ঘৃণা কিংবা বিদ্বেষ লালন করে।

এই কথার পিছনে ছোট্ট একটি উদাহারণ দেই। কিছুদিন আগে, ড. আলি সাল্লাবির একটি অনুবাদ বই পড়ছিলাম। বইটি প্রকাশ করেছে কওমিপন্থি একটি প্রকাশনী। ড. আলি সাল্লাবির পরিচয়ের ব্যাপারে এখনও যারা জানেন না, তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, ড. আলি সাল্লাবি ইখওয়ানের চিন্তা লালন করেন। শুধু লালনই করেন না, তিনি লিবিয়া ভিত্তিক ইখওয়ানের দায়িত্বও পালন করেছেন।

ড. সাল্লাবির বইয়ে প্রায়ই ইখওয়ানের মরহুম উস্তাদদের বিভিন্ন আলোচনা ও বইয়ের উদ্ধৃতি পাওয়া যায়। আমি যে বই পড়েছি সেখানেও শহীদ হাসানুল বান্না, সাইয়্যেদ কুতুব শহীদের উদ্ধৃতি ছিল। সেইসাথে সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী সাহেবেরও উদ্ধৃতি ছিল। কওমিপন্থি উদার মানসিকতার এই প্রকাশনীটি শহীদ হাসানুল বান্না ও সাইয়্যেদ কুতুব শহীদের নামের পূর্বে ‘উস্তাদ’ ব্যবহার করলেও, মওদূদী সাহেবের নামের পূর্বে ‘জনাব’ বসিয়ে দিয়েছে।

ড. সাল্লাবির ব্যাপারে যতোটুকু পড়াশুনা করেছি, তাতে বুঝেছি তিনি সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী সাহেবকে উস্তাদ বলে মান্য করেন। কিন্তু আমাদের কওমিপন্থি কতক উদার ভাই তো তাকে উস্তাদ মান্য করেন না; কিংবা তার নামের পিছনে এমন বিশেষণ ব্যবহৃত হোক তাও মানতে পারেন না। অতএব বইয়ের মূল লেখক তাকে উস্তাদ বলে সম্বোধণ করুক না কেন, তাদের বইয়ে মওদূদী সাহেবের নামের পূর্বে মিস্টার মওদূদী অথবা জনাব মওদূদীই থাকবে! এই হল আমার উদার মানসিকতা লালনকারী ভাইটির প্রকাশনীর বইয়ের অবস্থা!

আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এতো বছর পরেও মওদূদী সাহেবকে ভ্রান্ত প্রমাণ করা নিয়ে কওমিপন্থি ভাইদের এত ব্যস্ততা কেন?

ছোট্ট একটা ঘটনা বলি। এই ঘটনার মাঝেই উত্তর খুঁজে পাবেন।

আজ আপনারা যে আল্লামা ইকবালকে চেনেন, তিনি কিন্তু এক সময় কাফির ছিলেন! অবাক হচ্ছেন?

তাহলে শুনুন! মহাকবি ইকবাল আল্লাহকে প্রশ্ন করে ‘শিকওয়া’ নামে এক দির্ঘ কবিতা রচনা করলেন। তাঁর এই কবিতা পৌঁছে গেল দেওবন্দি আলেমদের হাতে। দেওবন্দিরা আলেমরা সিদ্ধান্ত নিলেন, মহাকবির ‘শিকওয়া’ কবিতার জবাব তারাই দিবেন। কিন্তু দেওবন্দিরা আলেমরা জবাব খুঁজতে গিয়ে বিরাট বিপদে পড়ে গেলেন। মহাকবি যেসব বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন, সেসব বিষয়ে উত্তর খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। যখন উত্তর খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন দেওবন্দি আলেমরা মহাকবি ইকবালকে ‘কাফের’ বলে ঘোষণা করলেন!

এর কিছুদিন পর মহাকবি ইকবাল ‘শিকওয়া’ কবিতার জবাব নিয়ে রচনা করলেন, ‘জবাবে শিকওয়া’ কবিতা। এইবার তাঁর ‘জবাবে শিকওয়া’ কবিতা পড়ে দেওবন্দি আলেমরা তাঁকে ‘আল্লামা’ উপাধি প্রদান করলেন। সেই থেকে তিনি ‘আল্লামা ইকবাল’ নামে পরিচিত।

কিন্তু দেওবন্দি আলেমরা যদি আল্লামা ইকবালের ব্যাপারে কোনো ফয়সালা দিয়ে না যেত, আমার বিশ্বাস, তাহলে কওমিপন্থিরা আজও তাঁকে ‘কাফের’ বলেই গন্য করত!

অনুরূপভাবে, মাওলানা মওদূদীর ক্ষেত্রে দেওবন্দি আলেমরা পরবর্তিতে কোনো চূড়ান্ত ফয়সালা না করায়, আজও তাঁকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে।

কিন্তু আজই যদি দেওবন্দ থেকে মাওলানা মওদূদীর ব্যাপারে ইতবাচক কোনো ফয়সালা করা হয়, তাহলে আমাদের উদার চেতনার ভাইয়েরা এরূপ নরম-সরম ভাষায় মওদূদী সাহেবকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার ইমানি দায়িত্ব থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিবেন বলে- আমার বিশ্বাস!

পঠিত : ৭৬৯ বার

মন্তব্য: ০