Alapon

পশ্চিমকে এত বেশী বেহায়া হতে এর আগে কখনো দেখা যায়নি...


এক সময় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, ওআইসি, আরবলীগ'সহ বড় বড় ফোরামগুলোতে 'ফিলিস্তিন' নামটি বেশ গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হতো। এসব উল্লেখের বড় কোন ফল হয়েছে সেটা হয়তো বলা যাবে না; তবে একটি মজলুম জাতির আওয়াজ অন্তত অনুরিত হতো। পৃথিবীর গত ১০০ বছরের ইতিহাসে সবচে' বড় সমস্যা কোনটা সেটার উপর ফোকাস দেয়া হতো। কিন্তু সময় অনেক দ্রুত পাল্টেছে এবং আরো বেশী দ্রুত গতিতে পাল্টাচ্ছে। এখন ফিলিস্তিন আর কারো আগ্রহের কেন্দ্রতে নেই। দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এখন আর 'ফিলিস্তিনে'র নাম উচ্চারিত হয় না। আরব লীগ আর ওআইসির মিটিংও ডাকা হয় সৌদি আরবের তেলস্থাপনায় হুথীরা হামলা করলে। আল আকসায় ইহুদীরা হামলা করলে এরা কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার প্রয়োজনবোধ করে না। মাত্র এক সপ্তাহ আগে একজন ফিলিস্তিনি মহিলাকে সবার চোখের সামনে পাষন্ড জায়োনিষ্ট সৈন্যটি গুলি করে হত্যা করলো। কারো মুখে টু'শব্দটাও শোনা গেলো না। ফিলিস্তিনের নাম উচ্চারণ করাকে এখন কৌতুক হিসেবে দেখা হয়। স্বয়ং মুসলমানরাই এখন এটাকে মনোযোগ আকর্ষণের অপকৌশল সাব্যস্ত করে ঠাট্টা মশকরা করে থাকে। গতকাল এরদোয়ান যখন ফিলিস্তিনের মানচিত্র দেখিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন, কিভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় জায়োনিষ্ট সন্ত্রাসীরা কুরে কুরে ফিলিস্তিনকে গিলে খেয়ে সাবাড় করে ছেড়েছে তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন, কিভাবে এই বর্বর জায়োনিষ্ট দখলদার সম্প্রদায়টি গাজায় নতুন হলোকষ্ট তৈরি করছে তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন দর্শক সারীতে একজন সাদা চুলের মহিলা হেসে উঠলেন। এরদোয়ান যখন ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ শেষ করলেন তখন পরিষদে কোন রকম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেলো না। কোন একটি মুসলিম দেশের প্রতিনিধীও কোন রকম সমর্থনমূলক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন না। স্বয়ং ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিও নিরস ভঙ্গিতে দু'টি হাত তালি দিলেন কেবল। ঠিক এই জায়গাটাতে যখন নেতানিয়াহু হামাস-হিজবুল্লাহর "সন্ত্রাসে"র নিন্দা জিনিয়ে ভাষণ দেন, ইরানের নিউক্লিয়ার প্রজেক্টের মানচিত্র দেখিয়ে দুনিয়াকে ভয় দেখান, গণতন্ত্রের জন্য ইসরাইলের ত্যাগ এবং অবদানের কথা তুলে ধরেন, তখন পরিষদের বৃহৎ উপস্থিতি এক সাথে দাঁড়িয়ে বিপুল করতালির মাধ্যমে সমর্থন ব্যাক্ত করে থাকে।

তবে, এরদোয়ানের গতকালের বলা কথাগুলো মুসলমানদের মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে না পারলেও ইসরাইলে বেশ ভালোভাবেই আগুন ধরিয়েছে। সেটা ইসরাইলের সংবাদ মাধ্যমগুলোর রিপোর্ট দেখলে বোঝা যাচ্ছে।

তিনি তার ৩৫ মিনিটের ভাষণে কেবল মুসলিম জাতির কথাই বলেছেন। নিপীড়িত জাতিসমূহের কথা বলেছেন। সিরিয়ার দুর্ভাগা জনগণের কথা বলেছেন। সিরিয়ান শরনার্থীদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। কাশ্মীর সমস্যার কথা বলেছেন। গোটা দুনিয়ার ভাগ্য অন্যায়ভাবে ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন ৫টি রাষ্ট্রর হাতে ঝুলে থাকার কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার চেয়েছেন। পরমানু অস্ত্রের সংরক্ষন এবং তৈরিকরণ প্রশ্নে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন। 'পরমানু অস্ত্র থাকলে সবার থাকবে, আর না থাকলে কারো কাছেই থাকবে না" -- এই কথা বলে পরমানু অস্ত্রের অধাকারী হওয়া প্রশ্নে সকল রাষ্ট্রের মধ্যে সমতা বিধান করার দাবী জানিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতি ও ভন্ডামির সমালোচনা করেছেন। ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের সাথে মিলিয়ে ফেলার পশ্চিমা চক্রান্তের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। ইসলামোফোবিয়া থেকে পাশ্চাত্যকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যান্য মুসলিম লিডাররা আমেরিকায় গিয়ে মুসলমানদেরকে দু'টি গালি দিয়ে আরো কিছুদিনের জন্য তাদের গদির রসদ জোগাড় করে। পশ্চিমাদের 'ওয়ার অন টেররে'র প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন ব্যক্ত করে। তাদের দেশের জনগণের মুক্তির আন্দোলনকে ইসলামিষ্টদের চক্রান্ত আখ্যা দিয়ে পলিটিক্যাল ইসলামকে মধ্যপ্রাচ্যের সকল অশান্তির কারণ বলে চিহ্নিত করে এবং একে নির্মূল না করলে এই এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলে হুঁশিয়ারী ব্যক্ত করে।

দুনিয়া খুব দ্রুত গতিতে কৃষ্ণগহ্বরে ঢুকছে। মানবতা এবং সুশাসনের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এক সময়ের লোক দেখানো দায়বদ্ধতাও লোপ পেয়ছে। এখন তারা সুশাসন নয়; বরং স্থিতিশীলতা চায়, যে স্থিতিশীলতা কোন রকম দুশ্চিন্তা ছাড়া তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে সহায়ক হবে। তাই তারা এখন প্রকাশ্যভাবে, কোন রকম রাখঢাক না রেখেই স্বৈরাচারদের পক্ষে সাফাই গায়। ট্রাম্প এখন সিসিকে পরিচয় করিয়ে দেন: আমার 'প্রিয় ডিক্টেটর ফ্রেন্ড' এবং 'গ্রেট ইজিপশিয়ান লিডার' হিসেবে, যখন মিসরের জনগণ লোকটার বিরুদ্ধে আক্রেশে ফেটে পড়ছে। উগ্র ধর্মীয় সন্ত্রাসী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে সহাস্যমুখে জনসভায় গিয়ে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। পশ্চিমকে এত বেশী বেহায়া হতে এর আগে কখনো দেখা যায়নি।

লিখেছেন: নুসায়ের তানজিম

পঠিত : ৮২৩ বার

মন্তব্য: ০