Alapon

বিচি দা

আমাদের নিরু দা, সেদিন আমাদের সবাইকে দাওয়াত করলো।দাওয়াতের উদ্দেশ্য হয়তো ওনি ঢাকা চলে যাবেন,সে উপলক্ষে কিছু খাওয়াবেন।

সুমন সেদিন টাক হয়েছে।এখনো গজায় নি চুল।নিয়মিত সরিষার তেল ৩ বেলা মেখে চলেছে চান্দিতে।যেনো দ্রুত চুল উঠে।সে চান্দিতে হাত রেখে,মুড়ি মাখার মতো করতে করতে বলতে লাগলাম,নিরু দা চলে গেলে আমাদের অনেক খারাপ লাগবে, নারে?

এই কথা শুনে, বাকি সকলের মন খারাপ হয়ে গেলো।বাকিরা বলতে আদিল আর নোমান।আমরা সবাই একই এলাকায় থাকি।আমাদের আড্ডাটা জমে ওই নিরুদার সাথেই।নিরুদা আমাদের দুই ক্লাস উপরে ক্লাস টেনে পড়লেও আমাদের সাথে বেশ সখ্যতা তার।এই নিরুদাই আমাদের সিগারেট ধরিয়েছেন।রাতের আঁধারে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে,আর সেদিন যদি জোসনা থাকে।ঠিক সেদিন এক প্যাকেট গোল্ডলিফ সিগারেটের প্যাকেট থেকে ২-৩ টি সিগারেট ফুঁ দিয়ে ভাসিয়ে দি জোসনা মাখা আমার প্রিয় গ্রামের বাতাসে।

হাঁটতে হাঁটতে পৌছে গেলাম,নিরুদার বাড়িতে।নিরুদা আমাদের নাস্তার পাশাপাশি দোকান থেকে শিমের বিচি কিনে এনে খাওয়ালেন।আমাদের খাওয়া শেষ হলে, নিরুদার মুখটা চিপসের সদ্য খোলা প্যাকেটের মতো চুপসে গেছে।আর বিচি খেতে খেতে বলছে, তোদের ছেড়ে যেতে বেশ কষ্ট হচ্ছে রে।কাল থেকে আর দেখা নাও হতে পারে।ভালো থাকিস তোরা।সেদিন অনেক মন খারাপ নিয়ে আমরা বাসায় ফিরে এলাম।

পরেরদিন বিকালে নদীর ঘাটে গিয়ে দেখি নিরু দা বসে আছেন আমাদের আগেই।আমরা তো বেশ অবাক।জিজ্ঞাস করলাম কি হলো,নিরুদার কথা শুনে আমরা গড়াগড়ি খেতে খেতে নদীর পানিতে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।

শিমের বিচি নাকি বেশী খেয়ে ফেলেছেন।রাতে শুধু বদনা নিয়ে আসা যাওয়ার উপর ছিলেন।

সেদিন থেকে আমরা নিরুদাকে বিচি দা বলা শুরু করলাম।নিরুদা কোনো প্রতিবাদ করতো না।কারণ, তিনি জানেন প্রতিবাদ করে লাভ হবে না।আমরা আরো বেশী করে ডাকতে থাকবো।

কেমন করে যেনো গ্রামের আশেপাশের মানুষ ধীরে ধীরে জানতে পারলো নিরু দা আর নিরু দা নেই, বিচি দা হয়ে হয়ে গেছে।

বিচি দা তাতেও কোনো প্রতিবাদ করে নি।কিন্তু যখন সুমি আপুও তাকে রাস্তায় যাওয়ার সময়, তার বান্ধবীদের দেখিয়ে বলে, দেখ দেখ, ওই যে হাদারাম বিচি দা আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। তার বান্ধবীরা উচ্চ কন্ঠে বলতে লাগলো,বিচি দা, আপনার বিচি কয়টা? মাঝে মাঝে আমাদেরও আপনার বিচি খেতে দিয়েন!

বিচি দা তো লজ্জায় সেখান থেকে,দৌড়ে পালিয়েছে।কি অসভ্য মেয়েগুলা।কারো বিচি কি কেউ খেতে পারে !

বিচি দা'র যখন মাথা ঠান্ডা হলো তখন বুঝতে পারলো,আমাদের দেওয়া নামটা ছড়িয়ে গেছে গুজবের মতো।তার পছন্দের আপনজনও তাকে বিচি দা বলে ডাকা শুরু করেছে!

সুমি আপু ঠিকই বলেছে, বিচি দা একটা হাদারাম।শুধু দাঁড়িয়েই থাকতে পারে,কখনো তার পছন্দের কথা বলতে সাহস করতে পারে না।মেয়েরা কি ভীতু ছেলে পছন্দ করে?

বিচি দা নিজে নিজে একটা পরিকল্পনা করতে লাগলো, যেনো আমাদের একটা শিক্ষা হয়।
কিন্তু আমাদের বিচ্ছুদের কি এতো সহজে শিক্ষা দেওয়া যায়!

আমরা প্রায়ই নদীতে গোসল করতাম নিজেদের সব জামা কাপড় খুলে। যখন তখন নদীতে নেমে যাওয়া ছিলো আমাদের অভ্যাস।কিন্তু ভেজা কাপড় নিয়ে ঘরে গেলে,মায়ের বেতের বাড়ি খেতে হতো।তাই উদোম হয়ে আমাদের ইচ্ছা পূরণ করতাম।

বিচি দা ও একদিন বললো,নদীতে গোসল করবে।আমরাও খুব সর্তক থাকি,না জানি বিচি দা কেমন করে আমাদের ফাসিয়ে দেয়।

নোমান জ্বর ভাব দেখিয়ে নদীতে নামলো না।নদীতে আমি বিচিদা, সুমন আর আদিল সাঁতারের প্রতিযোগিতায় নামলাম।কিন্তু সাঁতারের কিছুক্ষণ পর দেখি বিচি দা পিছন দিকে সাঁতার কেটে পাড়ের দিকে যাচ্ছে।আমরা বুঝতে পারলাম,কোনো একটা ঝামেলা নিরুদার করতে যাচ্ছে।

নোমান হয়তো বুঝে গেছে বিচি দা ওদের ধরা খাওয়াতে চাচ্ছে।নোমান বিচি দা'র সহ আমাদের সবার কাপড় হাতে নিয়ে নিলো। বিচি দা যখন পাড়ে উঠে নিচে হাত দিয়ে পয়েন্ট ঢেকে নোমানের কাছে পেন্ট চাচ্ছিলো,ততক্ষণে আমরা পাড়ে উঠে গেছি।নোমানকে ইশারা করতেই আমাদের দিকে জামা-কাপড় ছুঁড়ে দিয়ে বিচি দা'র জামা কাপড় নিয়ে দিলো দৌড়।

বিচি দা পয়েন্ট ঢেকে আর কতোটুকু দৌড়াতে পারবে? আর ওদূরে সুমি আপুকে দেখা যাচ্ছে নদী পাড়ের দিকে আসতে!

বিচি দা উপায় না পেয়ে,আবার দৌড়ে নদীতে ঝাপ দিলো।

সুমি আপু যখন নদী পাড়ে পৌছে গেলো,আমরা সুমি আপুর পিছে এসে দাঁড়ালাম।আর বিচি দা'কে উপরে উঠে আসতে বললাম।

সুমি আপু নোমানের হাতে বিচি দা'র কাপড় দেখে বুঝে নিয়েছে,কি হয়েছে ! সুমি আপু বললো,তোমরা জামা-কাপড় রেখে চলে যাও,আমি দেখতাছি ব্যাপারটা।

আমরা হাসতে হাসতে নদী পাড় থেকে বাসায় ফিরে এলাম।

সেদিন বিচি দা'র কি হয়েছিলো,তা আমাদের জানা নেই। তবে কিছু হোক না হোক সেদিনের পর থেকে সুমি আপু বিচি দাকে দেখলেই,রাস্তায় আর ক্ষ্যাপায় না।তাদের মধ্যে
সখ্যতা বেড়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে দুটি মনের শহরের সেতু বন্ধন।

পঠিত : ১২০৩ বার

মন্তব্য: ০