Alapon

মডারেট মুসলিম ও কিছু কথা...


একালের ভয়ঙ্কর এক ফিতনার নাম হল মডারেট মুসলিম। মুসলিমরা যখন গ্রীক, পারস্য, মিসরীয়, চৈনিক ও ভারতীয় দর্শনের সাথে পরিচিত হয় তখন মুসলিমদের এক শ্রেণী অত্যাধিক জোশের সাথে নতুন দর্শনের শিক্ষা-গবেষণা ও সংস্কৃতি চর্চা করা শুরু করে। তারা নতুন নতুন দার্শনিক ব্যাখ্যা দিয়ে সমাজের শিক্ষিত শ্রেণী ও সংস্কৃতিমনাদের আকৃষ্ট করে। এভাবে তৈরি হয় মু'তাযিলা ফিরকা। বৈদেশিক ও বিধর্মীদের দর্শন জানার অত্যাধিক আকাঙ্ক্ষা থেকে এরা চর্চা শুরু করে, অতঃপর ইসলামকে ঐ ফালতু ডাইস দিয়ে ব্যাখ্যা করে গুমরাহ হয়। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশে গিয়ে বা তাদের আমদানি করা দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কুর'আন ও সুন্নাহকে ঐ দর্শনের সাথে খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে আধুনিক যুগের মু'তাযিলাদের উৎপত্তি হয়।

মু'তাযিলারা মনে করত বিবেক ওহীর চেয়ে বেশী গ্রহনযোগ্য। মানুষের বিবেক এবং ওহীর মধ্যে অসঙ্গতি দেখা দিলে তখন বিবেকের তথা আকল ও দর্শন ব্যবহার করে ওহীকে ব্যাখ্যা করতে হবে। তাই যুক্তি দিয়ে তারা কুর'আন বুঝতে চাইত। বর্তমান কালেও এটাই হয়, কোনো মুজেযা বুঝে না আসলে, কোনো আয়াত বিজ্ঞানের সাথে না মিললে তারা বিবেককে কাজে লাগায় এবং যুক্তি দিয়ে আয়াত অস্বীকার করে বা ভুল ব্যাখ্যা করে।

পূর্বের মু'তাযিলারা সুন্দর জীবন, ভোগ-বিলাসীতা, দুনিয়াবী অর্জন, নিরাপদ-সুখী জীবন পাওয়ার লোভে ধর্মের নতুন নতুন ব্যাখ্যার পথ ধরেনি, কিন্তু আজকের মু'তাযিলারা ইউরোপ আমেরিকায় সুখ- শান্তিতে, সুদ-যিনাহ-কুফুর ইত্যাদির সাথে মিলে মিশে থাকার জন্য নিত্য নতুন ব্যাখ্যা দিচ্ছে। আর ইসলামের বিধানগুলোর বিকৃতি করছে। হারাম সুদী ব্যাংকের স্থলে আরাম ইসলামি সুদী ব্যাংকের মাধ্যমে লাইফ ইঞ্জয় করতে চায় তারা। মুখ ঢাকতে হয় না, ফ্রি মিক্সিং করলে সমস্যা নেই। দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব না। গান-মিউজিক হারাম না। গণতন্ত্র, সাম্য, সেকুলারিজম হল ইসলামের বিধান। মেয়েরা ঘরে বসে থাকবে না। ছেলে মেয়ে মিলে মিশে দুনিয়া জয় করবে, বিয়ার উইস্কি খেলে সমস্যা নেই- ইত্যাদি - ইত্যাদি রিকন্সট্রাক্সন অফ ইসলামি থট- করে আরামে বসবাস করার জন্য তারা গুমরাহ হয়েছে। অর্থাৎ নফস এদেরকে পথভ্রষ্ট করছে।

তাই ফুটবল খেলা হারাম না দেখে এরা দেখবে অজিল গোল দিয়ে সিজদা করেছে। জুয়ার আসর ক্রিকেট হারাম না বলে এরা বলবে হাশিম আমলা রোজা রেখে ব্যাটিং করছে। এক ফাসেক শাসক হারাম ফুটবল খেলায় ভালো পারফর্মেন্স করায় মুহাম্মাদ সালাহকে বায়তুল্লাহর পাশে জমি হাদিয়া করেছে। এদের আরেকজন গুরু হল রাশান মুসলিম ফাইটার খাবিব। মডারেটরা চরম পর্যায়ের ভীতু প্রকৃতির। এতই ভীতু যে কোথাও ঠাডা পড়লেও ভাবে কোনো এক্সট্রিমিস্ট মুসলিম এই ঠাডা ফেলেছে। আর দৌড়ে গিয়ে কাফিরের পায়ে সিজদাহ করে, অম শান্তি শান্তি বলে।

যাইহোক, এদের কারণে সবচে ভয়ঙ্কর বিষয় হল আজ বিশাল দাঁড়ি টুপি ওয়ালা টাখনুর উপর পেন্ট পড়া ব্যক্তি ব্যাংকের ম্যানাজার। ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারী, সারাদিন ইসলামের কথা বলা ব্যক্তি ফ্রি মিক্সিং পার্টি করছে, কোনো হারাম পণ্যের ব্যবসায় করছে বা ফুটবল ক্ল্যাবের মালিক বনে আছে। মেয়েদের গায়ে হাত দিয়ে কথাও বলতে এদের দেখা যায়। হাবে ভাবে মনে হয় কতই না সূফী তারা। এরা আমল টূকটাক করলেও আকিদা ঠিক রাখে না। আর হারাম থেকে দূরে থাকে না। কারণ এদের কাছে সুদ-মদ-যিনাহ হারাম নয়, ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে তা হালাল।

মডারেট উস্তাদের কিছু ফ্যান বয়কে দেখতাম ক্লাসে মেয়েদের সাথে কত অন্তরঙ্গ ঠাট্টা মশকরা করছে, গায়ে স্পর্শ করে কথা বলছে। অথচ মুখে দাঁড়িও আছে পেন্ট টাখনুর উপরেও আছে। প্রত্যেক মুসলিম হারাম থেকে দূরে থাকবে চাই দাঁড়ি থাকুক বা না থাকুক, কিন্তু বুঝার বিষয় হল এ থেকে সমাজে একটি নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠছে যারা মনে করে নামাজ ঠিক রেখে, পেন্ট টাখনুর উপরে পরে, আর ফ্যাশনেবল হিজাব পরে সব করা যায়। ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান-হিন্দুদের মত সবই করা যায়। এক বন্ধু বাংলাদেশে একটি মডারেট মুসলিম স্কুলের একটি প্রোগ্রামের কিছু পিকচার শেয়ার করেন, তা দেখে আমি অবাক হই। এরা পুরো মডারেট ধারার অনুসরণ করছে। ছেলে মেয়ে ফ্রি মিক্সিং, মেয়েরা মুখ খোলা রেখে, আটা ময়দা সুজি লাগিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। ছেলেরা গ্রাজুয়েশন গাউন পরে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে কিছু শায়খরা খুব গর্বের সাথে বসে আছেন। আল্লাহ মাফ করুন।

দিন শেষে এই মডারেটরা কিছু মডারেট শাইখদের লেকচার শুনবে। অতপর নিজেকে ভাববে, 'কত বড় আল্লাহ ওয়ালা হয়ে গেছি। ইসলাম কত সহজ। ওয়াও।' এদের কারণে আজ মানুষ কাফির দেশে যেতে চায়, ভাবে সেখানে কত আরামে কত ভালো করে দ্বীন পালন করা যাচ্ছে।

দুঃখের বিষয় হল এদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে, কে চাইবে না এত আরামের একটি ইসলাম ধর্ম পালন করতে? ঐ দিন দূর নেই যখন এরা মুত'আ বিয়েকে ইসলামের একটি সুন্দর বিধান বলে প্রচার ও প্রয়োগ করবে। তখন নফসের সব চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি ইসলাম পালন করার এক অদ্ভুত দর্শন বা ধর্ম এদের হাতে প্রতিষ্ঠা পাবে। হ্যাঁ সবার অবস্থা এক নয় কেউ শুধু ইসলামি ব্যাংকে আটকে আছে আর কেউ ফ্রি মিক্সিং মসজিদে নারী ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছে।

ইসলামের শত শত বিঁধানকে এরা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অস্বীকার করে। কাফিররা যে ফ্রেমে ইসলাম দেখতে চায় তারা সাথে সাথে ইসলামকে ঐ ফ্রেমে আটানোর চেষ্টা করে। কাফিররা আজ যদি বলে ইসলামের অমুক বিধান অমানবিক এই মডারেটররা সাথে সাথে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে ইসলামের ঐ বিঁধানকে মানসুখ করার চেষ্টা করবে বা অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিবে।

সংগৃহিত...

পঠিত : ১১০২ বার

মন্তব্য: ০