Alapon

জর্জ বুশের ইরাক আক্রমন এবং কিছু কথা...


জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক আক্রমণ ছিল একদম পূর্বপরিকল্পিত। তথ্য উপাত্ত হাতিয়ে মনে হচ্ছে, নির্বাচনে আসার আগেই ইরাক আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল সে। ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসেই বুশ তার মনের ইচ্ছার কথা প্রথম জানান দেয়। এতটুকুন পড়েই অবাক হয়ে যাওয়ার কারণ নেই। আসল কথা তো বলাই হয়নি। চলুন রহস্যাবৃত ইতিহাসের পথ ধরে ধীরেধীরে হাঁটি।

পল হেনরি ও' নেইল—যিনি বুশ প্রশাসনের ট্রেজারি সেক্রেটারি ছিলেন—ইরাক আক্রমণ নিয়ে খুল্লাম খুল্লা মন্তব্য করেছেন। তা প্রকাশ করেন রন সুসকিন্ড তার লিখিত বই The Price of Layalty-এ। ও' নেইল বলেন, “২০০১ সালের জানুয়ারিতে বুশ ক্ষমতায় এসেই সর্বপ্রথম মিটিং করে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাথে। সেই মিটিং-এ আমিও ছিলাম। তখন তিনি উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলেন, সাদ্দামকে উৎখাত করার একটা উপযুক্ত পথ বের করতে হবে। এ কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। মনেমনে শুধু বললাম, বলে কি?”

জাতিসংঘ গোপনে এবং প্রকাশ্যে অন্তত ৪০০ বার অনুসন্ধান করেও ৯/১১ এর সাথে সাদ্দাম হুসেনের সংশ্লিষ্টতা পায়নি। বুশকে যখন একথা জানানো হয় তখন সে উত্তরে বলে, “লুক ইনটু সাদ্দাম, ইরাক।”

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (CIA), ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (DIA) এবং যুক্তরাজ্যের M16 গভীর অনুসন্ধান করেও সাদ্দাম হুসেনের সাথে টুইনটাওয়ার হামলার কোন লিঙ্ক দাঁড় করাতে পারেনি। বুশ প্রশাসনকে তারা দৃঢ়ভাবে জানায়, আসলে সাদ্দামকে যতটুকুন শক্তিশালী মনে করা হচ্ছে তিনি তার অর্ধেক শক্তিরও অধিকারী নন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র বা এর আশপাশের রাষ্ট্রের জন্য হুমকি নন। তার কাছে গণ বিধ্বংসী অস্ত্র নেই। নতুন করে বানানোর সক্ষমতাও নেই। ৯/১১-এর সাথে তার যোগসাজশ নেই। এসব রিপোর্ট পড়ে বুশ গম্ভীর গলায় বলে, "ফাইন্ড এ ওয়ে" (যে করেই হোক একটি পথ খুঁজো)।

তবুও কেন ইরাকে আক্রমণ হল?-এমন একটি প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক।

খুব সহজ উত্তর হচ্ছে, আমেরিকা তার বৈশ্বিক কর্তৃত্ব ধরে রাখা এবং পতনোন্মুখ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্যই ইরাকে আক্রমণ করে। যুদ্ধের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল হাইড্রোকার্বনে একচ্ছত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা।ইরাকে আছে তেলের ভাণ্ডার। সেই তেলের রিজার্ভে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার একটাই পথ ছিল—যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আমেরিকা ২ লাখ ৫৫ হাজার সৈন্য মোতায়েন করে। যা ছিল অবাক করার মতো। ইউএস সেনাবাহিনী ইরাকে এসেই প্রিপ্লান মতো তেল ভাণ্ডারের চাবি হাতে তুলে নেয়। তারপর চলে আইওয়াশিং সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ। বিরোধীদের ধরো আর মারো।

এখানেই ক্ষান্ত হয়নি, বিশ্ব তেল বাজারে ইউএস ডলারকে একমাত্র বিনিময় যোগ্য কারেন্সিতে রূপান্তর করে। একেই বলে পেট্রোডলার। তেল কিনতে হলে ডলার দিতে হবে। দারুণ না!

উইলিয়াম রিচার্ড ক্লার্কের লেখা "Patrodollar Warfare" বইটি সবেমাত্র পড়া শুরু করলাম। যতই পড়ছি ততই মানবতাবাদের মুখোশ পড়া এই পশ্চিমা শাসকদের রাক্ষুসে চেহারাটা উন্মুক্ত হচ্ছে। খেলাটা এখনো চলছে সেই আগের মতোই। হয়ত আমরা অন্যকিছু ভেবে নিচ্ছি। আসলে ওরা যেখানেই হাত বাড়াচ্ছে সেখান থেকে কিছু কেড়ে নিচ্ছে। দুঃখ লাগে, ইতিহাস পড়ার লোক থাকলেও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার লোক নেই বললেই চলে।

সংগৃহিত...

পঠিত : ৮০৭ বার

মন্তব্য: ০