Alapon

শেখ হাসিনার ভারত সফরে প্রাপ্তি কী...?


শেখ হাসিনার চলমান ভারত সফরে যে কয়টি চুক্তি হয়েছে তাতে প্রথমেই যে চুক্তিটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজরে এসেছে হেডলাইন হিসেবে তা হচ্ছে, ”ফেনী নদীর পানি নেবে ভারত, সমঝোতা সই”। এরপরেই অন্যান্য চুক্তির বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে; কিন্তু অন্যান্য বারের মতো এবারেও কোন চুক্তির বিষয়েই খোলাসা করে জাতিকে জানার কোন ব্যবস্থাই নেই।

এই সফরে উল্টো ” একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করবে ভারত৷ ওই পানি তারা ত্রিপুরা সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে”। এছাড়া আমাদের উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার বিষয়ে সই হয়েছে, যা কিনা যৌথ মনিটরিং; কিন্তু ভারতের উপকূলের কাছেও বাংলাদেশীদের কোন কিছু নাই। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহণের বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং চুক্তি হয়েছে, এটিও ভারতের লাভ।

সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিনিময় নবায়ন এবং যুব উন্নয়নে সহযোগিতা নিয়ে সই হয়েছে দুটি সমঝোতা স্মারক। এতে আমাদের সংস্কৃতি বা যুবরা কতটুকু লাভবান হবে তা জাতির কেউ জানে না; তবে তাদের দ্বারা ফেন্সিডিল দেয়ায় জাতির অধঃপতন এখনো দৃশ্যমান। এর বাইরে আর যেগুলো হয়েছে সেগুল হচ্ছে কাসুন্দি। পেঁয়াজ নিয়ে জাতি তোলপাড় হলেও শেখ হাসিনা মোদীর সামনে সে বিষয় তুলতেই পারেন নাই। ইলিশ ঠিকই দিয়েছেন, লাগলে আরও দেবেন। বাকি সব কিছুতেই জাতি অন্ধকারে।

তবে জাতি যত অন্ধকারেই থাকুক না কেন বিষয়গুলো কোন না কোন ভাবে ঠিকই প্রকাশ হয়ে পড়ে। বিশাল তড়িঘড়ি করে ভারত সফরে জাতি ভেবেছিল একটা কিছু হবে, যেমন আসামে বাঙালি খেদাও এর নামে বিজেপি যা করছে সে বিষয়ে বা তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে হয়তো কিছু একটা সাহসি ভুমিকা শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দেখার জন্য জাতি উদগ্রীব হয়েছিল; কারন ইতিমধ্যেই নিজের সরকারকে সশস্ত্রবাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্য নিজ দলের অপদার্থ সামান্যকিছু ৩য় শ্রেনির লুটেরার বিরুদ্ধে গ্রেফতার রিমান্ড দেখিয়ে জাতিকে কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করায় জাতি ভেবেছিল ভারতের অপকর্মের বিরুদ্ধেও হয়তো কিছু একটা দেখাবেন তিনি।

কিন্তু জাতি হতাশ; এই হতাশাকে বিন্দুমাত্র যদিও কেয়ার করার অবস্থায় নেই শেখ হাসিনার সরকার। তাই অনেকেই তার বর্তমান সফরকে সরকার রক্ষার সফর বলে অভিহিত করছেন। কারন ইতিমধ্যেই দল ও সরকারে একাধিক কোটারি সৃষ্টি হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এটা অনেকটাই আগেরকার রাজা বাদশাহ আমলের ক্ষমতার উত্তরাধিকারের লড়াই বলে ভাবছেন। শেখ হাসিনা যেমন শেখ মুজিবর রহমানের উত্তরাধিকার তেমনি সমান উত্তরাধিকার হচ্ছেন শেখ রেহানা। কিন্তু শেখ হাসিনার পরে শেখ রেহানার বংশধরেরা ছিটকে পড়ছে রাষ্ট্রের ক্ষমতার বাইরে। এ থেকেই দ্বন্দ্ব।

এর বাইরেও শেখ মুজিবর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা রাজনৈতিক ক্ষমতার সম্বল ছিল ‘শেখ মনি” যে তার ভাগ্নে। সেই শেখ মনির উত্তরাধিকার যারা শেখ সেলিম বা শেখ মনির সন্তান শেখ তাপস, এদেরকে সব সময়েই ধীরে ধীরে ক্ষমতার বাইরে রেখেছেন বা বের করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক রক্তধারার উত্তরাধিকার হচ্ছেন শেখ হেলাল; যাকে সব সময়েই ক্ষমতার কেন্দ্রের বাইরেই রাখা হয়েছে।

শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শিক সন্তান যারা আওয়ামী লীগে রয়েছেন, যাদের কারনেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরতে পেরেছেন বা ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন তাদেরকেও ঝেটিয়ে দূর করেছেন ক্ষমতার বলয় থেকে।

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এই সকল কোটারি শক্তির মক্কা হচ্ছে ‘দিল্লী’, যে কারনে এইবারের সফর ও চুক্তি সবই হচ্ছে দেয়ার; পাওয়া কিছুই নাই কেবলমাত্র নিজের ক্ষমতার মসনদের নিশ্চয়তা ছাড়া। তবে উত্তরাধিকারের বিষয়ে দিল্লী শেখ হাসিনাকে কোন নিশ্চয়তা দেয়নি বিধায়, কোন কিছু নিয়েই দিল্লী জয়ের কোন উৎসব এবার পালিত হবে না।

সংগৃহিত...

পঠিত : ১৫৪৫ বার

মন্তব্য: ০