Alapon

বুয়েটের আবরারকে হত্যার বৈধতা দেওয়া হয়েছে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর...


২০০৬ সালের অক্টোবর মাস, আর ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের মাঝে কি কোনো মিল খুঁজে পান? ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসের কথা কি আপনাদের মনে আছে? মনে না থাকলেও একটু গুগলকে জিজ্ঞেস করুন! গুগল মামা নিশ্চয়ই আপনাদের সেই ঘৃণ্য ইতিহাস মনে করিয়ে দিতে ভুল করবে না।

২০০৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে বিরোধী মতের মানুষদের প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হত্যা করার বৈধতা প্রদান করা হয়েছে।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ছিল ততকালীণ চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন। সেই উপলক্ষ্যে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে সমাবেশের আয়োজন করে জোট সরকারের অন্যতম শরীক দল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। জামায়াতের সমাবেশ শুরু হলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে আওয়ামিলীগের সমাবেশ শুরু হয়।

এক পর্যায়ে আওয়ামিলীগ সমাবেশ উত্তর মিছিল শুরু করে এবং সেই মিছিল থেকে জামায়াত কর্মীদের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এরপর মতিয়া চৌধুরী এবং ডা. ইকবালদের নেতৃত্বে আওয়ামিলীগের সন্ত্রাসীরা জামায়াতের কর্মী‍দের উপর ককটেল চার্জ করা শুরু করে। এভাবে এক পর্যায়ে পল্টন চত্ত্বর রণক্ষেত্রে রূপ ধারণ করে।

আওয়ামিলীগের সমাবেশের আগের দিন আওয়ামিলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘কেউ খালি হাতে আসবেন না। যার হাতে যা কিছু থাকবে তা-ই নিয়ে সমাবেশে উপস্থিত হবেন।’

সভানেত্রীর আহব্বানে লীগের সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকায় আগমন করে। তারপর সেই লগি-বৈঠা নিয়ে জামায়াত কর্মীদের উপর হামলা চালানো হয়।

সেদিন শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের মানুষ দেখেছে আওয়ামিলীগের তান্ডবলীলা। সেইদিন আওয়ামিলীগ প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করার জঘণ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন। সেদিন আওয়ামিলীগের সন্ত্রাসীরা ৫ জন মানুষকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

কিন্তু সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও হয়নি। এমনকি সেই ঘটনার মামলাও ফাইলিং হয়নি। আর সেই ঘটনায় সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ায় ছিল নীরব সদস্যের মত। মানুষ কষ্ট পেয়েছে ঠিকই কিন্তু প্রতিবাদ করেনি। আর প্রতিবাদ না হওয়াটাই বৈধতা দান করা।

আর সেই ২০০৬ সালে অক্টোবরের দ্বায় বুয়েটের আবরারকেও পরিশোধ করতে হল। অথচ সাধারণ মানুষ যদি ২০০৬ সালের অক্টোবরের সেই ঘটনার প্রতিবাদ করত, অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করত তাহলে হয়ত আজ আবরারকে জীবন দিতে হতো না।

অন্যায় অন্যায়ই। হত্যাকাণ্ড হত্যাকাণ্ডই। হত্যাকাণ্ডের কোনো ধর্ম নেই, বর্ণ নেই আছে রাহাজানি। আছে স্বজন হারানোর ব্যাথা। যার স্বজন হারায় সেই বোঝে বিচ্ছেদে কত্তটা যন্ত্রনা। ২০০৬ সালে আওয়ামিলীগের হাতে নিহত জামায়াত কর্মীর বাবা-মায়ের বেদনা, আর বুয়েটের আবরারে বাবা-মায়ের বেদনার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তাই সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত।

সবার আগে ২০০৬ সালের অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। তারপর একে একে রাজনৈতিক দলের ব্যানারে যত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সবগুলোর বিচার হওয়া উচিত। তাহলে আর কোনো দলই এরূপ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর সাহস করবে না। আর কোনো আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করার মত ঘটনা ঘটবে না। তাহলেই এরূপ হত্যাকাণ্ডগুলো নির্মূল করা সম্ভব হবে। তাছাড়া এই ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটতেই থাকবে। আসুন সচেতন হই।

পঠিত : ১০৪৫ বার

মন্তব্য: ০