Alapon

এক আবরার নিজের জীবন দিয়ে হাজারো বুয়েটিয়ানের জীবন রক্ষা করল।


আবরার ফাহাদ মারা গেছে! দুঃখিত নিহত হয়েছে। কিন্তু আবরার ফাহাদ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচিয়ে গেল।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। খুব সম্ভবত ২০১১ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আবিদকে পিটিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ এই কর্মসূচির সূচনা করে। আবিদ হত্যাকাণ্ডের যেমন বিচার হয়নি, তেমনি নির্যাতনও থেমে থাকেনি। নির্যাতন চলতে চলতে তা এতোটাই ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে যে, এখন পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।

বুয়েটের হলগুলোতে ছাত্রলীগের তাণ্ডবলীলা শুরু হয় আরও পরে; ২০১৪ সাল থেকে। তারপর থেকে যাকেই বিরোধী মত মনে হয়েছে, যাকেই শিবির মনে হয়েছে, তাকেই ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেছে। সেই নির্যাতনের মাত্রা এতোটাই ভয়ানক ছিল যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আর বুয়েটেই পড়াশুনা করতে পারেনি। প্রায় সকলকে দেশ ত্যাগ করে বহিঃদেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে।

যেগুলো স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পেয়েছে তা তো সকলেই জানে। কিন্তু এমন অনেক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যার কথা ভিক্টিমের পরিবারও জানে না। সেই ঘটনাগুলো এখন প্রকাশ পাচ্ছে। এক জরিপে জানা গেছে, আওয়ামিলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বুয়েটে এমন নির্যাতনের ঘটনা প্রায় ৬৩ বার ঘটেছে। কিন্তু কখনোই কোনো ঘটনার প্রতিকার হয়নি। উলটো ভিক্টিমকে পুলিশের হয়রানি পোহাতে হয়েছে। ভিক্টিমকেই জেল খাটতে হয়েছে, অন্যদিকে নির্যাতনকারীরা ক্যাম্পাসে বুক ফুলিয়ে হেটেছে।

আবরার হত্যাকাণ্ডের পর হয়ত এরূপ ঘটনা কিছুটা হলেও বন্ধ হবে।

জনৈক মনিষী বলেছিলে, ‘তাবত ঘটনারই ইতিবাচক দিক থাকে।’

আবরার হত্যাকাণ্ডের ইতিবাচক দিক খুঁজতে গিয়ে দুটি দিক পেলাম। প্রথমটা বলতে পারেন কিছুটা শান্তনারও বাণী। আবরারকে যে পরিমান টর্চার করা হয়েছে, বেঁচে থাকলে হয়তো কখনোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত না। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হতো। আবরারের যেখানে পরিবারের অ্যাসেট হওয়ার কথা ছিল, সেখানে সে বোঝায় পরিণত হত। এই অবস্থা মেনে নেওয়া আবরার এবং আবরারের পরিবার কারও জন্যই মেনে নেওয়া সম্ভব হতো না। আবার মেনে না নিয়েও উপায় থাকত না। তখন আবরারের বাবা-মাকে নীরবে-নিভৃতে আবরারের নিস্প্রাণ ঝরে যাওয়া দেখতে হতো এবং একসময় আবরারও হতাশায় পর্যবস্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত।

দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হল, আবরার নিজের জীবন দিয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন রক্ষা করে গেল। যে ঘটনাগুলো কখনো সাধারণ মানুষ জানতেও পারত না, আজ আবরারের কারণে শুধু দেশবাসীই নয়, সারাবিশ্বের মানুষ জানে। ইতোমধ্যেই আলজাজিরা, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকার মত আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এই ঘটনা প্রধান সংবাদ হিসেবে প্রচার হয়েছে।

এই ঘটনার ফলে বুয়েট প্রশাসনে যেমন একটা ভূমিকম্প দেখা যাচ্ছে, তেমনি সরকারও কিছুটা সচেতন হবে বলে আমার বিশ্বাস। বুয়েট প্রশাসন এতোদিন সবই জানত কিন্তু না জানার ভান করে থাকত। যার ফলে কোনো ঘটনারই প্রতিকার পাওয়া যেত না। উলটো বুয়েট প্রশাসন কতৃক ভিক্টিমকে অসহযোগিতা করার বহু রেকর্ড ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। আবরার হত্যার কারণে বুয়েট প্রশাসনের এরূপ দালালি কিছুটা হলেও বন্ধ হবে আমার বিশ্বাস।

অন্যদিকে বুয়েটের অন্য যেসব হলে এতোদিন টর্চার খেলা খেলত, তা পরবর্তি দির্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। যার ফলে ছাত্রলীগের এরূপ পশুসুলভ আচরণ থেকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী রেহাই পাবে।

আজ ছাত্রলীগের নির্যাতনের বিরুদ্ধে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের যে আপোসহীণ প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে, তার কারণ এই আবরার ফাহাদই। এক আবরার জীবন দিয়ে হাজারো বুয়েটিয়ানকে জাগিয়ে তুলেছে। এক আবরার নিজের জীবন দিয়ে হাজারো বুয়েটিয়ানের জীবন রক্ষা করল।

পঠিত : ৮৭২ বার

মন্তব্য: ০