Alapon

আবরার হত্যা নিয়ে দুটা প্রশ্ন ও কিছু কথা...


ছাত্র সমাজের মধ্যে হিংসাত্মক মনোভাব কেন হলো এবং তা দূর করার উপায় কী?

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে কি অন্যায় করেছে? উত্তর হলো, না। বরং যদি আমরা ১৯৪৭ এ স্বাধীন না হতাম, ১৯৭১ সালে স্বাধীন না হতাম তাহলে সরকারের বিভিন্ন স্তরে বড় বড় পজিশান পেতাম না, ব্যবসায় পিছিয়ে থাকতাম, রাজনীতিতে মার খেতাম এবং ভারত বর্ষে আমরা স্বাভাবিক ভাবেই পেছনের সারিতে থাকতাম।

এর বড় প্রমান আমরা মুসলিম প্রধান হয়েও বাংলাদেশের সর্বত্র আমরা পেছনে পড়তেছি। মাড়োয়ার ও পাঠানদের কাছে সারা দুনিয়ায় পাল্লা দিয়ে আমরা বেশ পেছনে আছি।
এখন এ দুই স্বাধীনতা নিয়েই আমাদের যত রাজনীতি। ৪৭ এর স্বাধীনতাপন্থীরা আজো ভারতের মারাত্মক শত্রু এবং দেশের ভারতপন্থীদের জানি-দুষমন। আর ৭১ মুক্তিযোদ্ধারা মারাত্মক প্রো-ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানের ব্যাপারে হিংসাত্মক এবং ৪৭ পন্থীদের ব্যাপারে এতটাই অসহনশীল যে তাদের মারতে পারলে যেন শাপ মারার মত আনন্দ পায়।

আমাদের ৪৭ প্রজন্ম ও ৭১ প্রজন্ম আজো দেশে আছেন, এবং এদের অনুসারীরা এ দুই বলয়ে মারাত্মক ভাবে খাবি খাচ্ছে।
আমাদের যারা ৭১ এর পরে জন্ম, তারা ঐ দুই ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ঐ জংলি মানসিকতার উর্ধে ওঠে দেশ নিয়ে ভাবতে হবে।

দেখুন, আমি দুনিয়ার সব মহাদেশে যেয়ে বাংলাদেশীদের বেশ অবদান দেখতে পেয়েছি। কিন্তু আমাদের এই মেধা গুলোও ঘুরপাক খাচ্ছে ঐ নোংরা রাজনীতির গোলক ধাঁধাঁয়। এ থেকে তারা বের হয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে ঐক্যমত হতে পারছেনা।

আরেকটা জিনিষ হলো, একটা জাতির উন্নত ন্যরিটিভ তৈরি করে বুদ্ধিজীবী শ্রেণী, বিজ্ঞান মনস্ক জেনারেশান, উচ্চ শিক্ষার পীটস্থানগুলো, সমন্বিত সরকারী আধা সরকারী সংস্থাসমূহ এবং গবেষণাগার অথবা থিংকট্যাংক সমূহ। বড় দু:খ জনক ভাবে আমরা দেখছি এই সব যায়গা গুলো ও হিংসাত্মক রাজনীতির লেজুড়ে পরিনত হয়েছে। ফলে এদের ন্যারিটিভ ও অনাকাংক্ষিত ভাবে শত্রুতার বিষে বিষাক্ত।

ছাত্র সমাজ সব সময় আবেগময়, বিবেকতাড়িত, অনুকরণপ্রিয় এবং স্বাপ্নিক হয়ে থাকে। আমাদের দেশে তাদের বানানো হচ্ছে লড়াই করার পদাতিক বাহিনী কিংবা ঢাল তলোয়ার হাতে নেয়া দুন্দভীর নিনাদে গর্জে ওঠা লাঠিয়াল। ফলে তারাও হয়েছে তাদের স্যারগণের মত অস্থির ও সুযোগসন্ধানী। কাজেই কেও কাওকে সহ্য করতে পারেনা।

আমার মনে হয় এই যায়গা গুলোতে হাত দিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ার কাজে একদল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে এই মারমুখো ভাব কমবে।

ইসলামে আবরার হত্যার মত অপরাধের শাস্তি কী?

ইসলামে এ ধরণের হত্যাকান্ড হলে দুইটা বিষয় সামনে রাখতে বলে:
এক: মানুষ সমাজের যাকেই আইন বহির্ভূত হত্যা করা হয়, সেই নিহত ব্যক্তির ব্যাপারে দৃষ্টি রাখা হয়, “সে একজন মানুষ”। হোক সে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ বা খৃস্টান। হোক সে লীগের, দলের, ইউনিয়নের বা শিবিরের। কুরআন বলে অন্যায় ভাবে একব্যক্তিকে হত্যা করার মানে তুমি মানবতাকে হত্যা করলে।

দুই: একজন মানুষকে হত্যা করা হলে তার আত্মীয়দের আল্লাহ সুযোগ দেন এই হত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার। এই ক্ষেত্রে সরকার থাকে নিউট্রাল। হত্যাকারীরাও সরকারের উপর দায় দায়িত্ব দেয় সঠিক অনুসন্ধান দ্বারা হত্যার আসল কারণ ও হত্যাকারীর সংশ্লিষ্টতার পরিমান নির্ধারণ করা। নিহত ব্যক্তির আত্মীয়রা আশা করে সরকার তাদের হক আদায়ে নিষ্ঠার পরিচয় দেবে।
সরকার যখন ন্যায়বিচার করে হাতের বদলে হাত, চোখের বদলে চোখ, পায়ের বদলে পা, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান এমনকি জানের বদলে জান নেবে তখন আল্লাহ বলে দেন এই “ক্বিসাস” নেয়ার মাঝেই বাঁচতে পারে অযুত নিযুত মানব জীবন মনুষ্য প্রাণ। যে দেশে এই ক্বিসাসে যত নিষ্ঠার পরিচয় দেয়া হয় সেই দেশের হত্যার পরিমান ও কমে যায়।

লিখেছেন: আব্দুস সালাম আজাদী

পঠিত : ১২৬২ বার

মন্তব্য: ০