Alapon

ভারত ও বাংলাদেশের দাম্পত্য সম্পর্ক এবং কিছু না বলা কথা...


আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের মাঝে অনেক ইস্যুই চাপা পড়ে গেছে। তবে এখন যে ঘটনা নিয়ে লিখতে বসেছি, সেই ঘটনা আর আবরার হত্যাকাণ্ডের মূল বিষয় একই। অর্থাৎ ভারতীয় আধিপত্যবাদ।

আবরারকে হত্যা করা হয়েছে, মূলত ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য। আবরার ফাহাদের সর্বশেষ ফেসবুক পোস্ট তা-ই প্রমাণ করে। অন্যদিকে ভারতীয় সীমান্তর রক্ষাবাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর র‌্যাবের ৩ জন সদস্যসহ ৫ জন বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করে।

উপরের ছবি দেখে নিশ্চয়ই তা বুঝতে পারছেন। মূল ঘটনা হলো, র‌্যাব তার সোর্সের তথ্যমতে সীমান্তবর্তি এলাকায় আসামী ধরতে যায়। কিন্তু আসামীর বাড়ি যে ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে, তা আর র‌্যাবের সদস্যরা খেয়াল করেনি। ফলে র‌্যাবের সদস্যরা যখন আসামীকে ধরতে তার বাড়িতে যায়, তখন আসামী চিৎকার করে ওঠে। আর তার চিৎকার শুনে এগিয়ে আসে ভারতের সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিএসএফ। তারপর বিএসএফ র‌্যাবের তিনজন সদস্য এবং তাদের ২ সোর্সকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের ধরার পর দিনব্যাপী নির্যাতন করা হয়। আর নির্যাতনের প্রমাণ এই ছবিগুলো।

কিন্তু এতবড় একটি ঘটনা ঘটে যাওয়া পরও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য পাওয়া গেল না। সরকারের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে- ‘এ আর এমন কি ঘটনা! এমন দুই একটা ঘটনা ঘটতেই পারে।’

কিন্তু আমার বিশ্বাস যে কোনো আত্মসম্মান বোধ সম্পন্ন সরকার এই ঘটনার জন্য হাইকমিশনারকে তলব করত এবং জবাব চাই তো। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হাইকমিশনরাকে তলব করে জবাব চাওয়ার বিষয়টি তো আরও পরের কথা, এখন পর্যন্ত সরকার এই বিষয় নিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি। হায় আফসোস!

অথচ এই বাংলাদেশই বিভিন্ন সময়ে ভারতের কাছে বিভিন্ন ইস্যুতে জবাব চেয়েছিল এবং ভারত জবাব দিতে বাধ্য ছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়েছিল ভিন্ন কোনো সরকারের সময়ে, আওয়ামিলীগ সরকারের আমলে নয়।

আওয়ামিলীগ সরকারের এই নীরবতার কারণ কি?
কৃতজ্ঞতা! ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং বিরোধীমত দমনে আওয়ামিলীগ সরকার ভারতের যতোটা সহায়তা পেয়েছে, আর কোনো দেশের কাছে এমন সহায়তা পায়নি। আর সেই কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে আওয়ামিলীগ ভারতকে কিছু বলতে পারে না। আর এভাবে ক্রমান্বয়ে চলতে চলতে সরকারের বোধটাই নষ্ট হয়ে গেছে। বোধ থাকলে অবশ্যই বুঝতে পারতো, র‌্যাব সদস্যদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা কোনো যেন তেন ঘটনা নয়। এটি মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত। দেশের একজন সাধারণ নাগরিককে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা, আর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা এক বিষয় নয়। এই নির্যাতন মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার উপর নির্যাতন। কিন্তু আফসোস, ভারতের তাবেদারি করতে গিয়ে তা অনুধাবন করতে পারছে না।

আমার এই কথার যুক্তির পিছনে খুব বেশি কিছু বলব না। শুধু বলব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে কী কী চুক্তি করেছেন এবং সফর পরবর্তি‍ সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা ভারত সম্পর্কে যা বলেছেন, সেগুলো একটু পড়ে দেখুন। পত্রিকার পাতা খুঁজলে কিংবা ইউটিউবে সার্চ দিলেই প্রধানমন্ত্রীর সেই সংবাদ সম্মেলনে বলা কথা কিংবা বক্তব্য পেয়ে যাবেন।

দ্বিতীয়ত, ধরে নিলাম ভারত সরকার বাংলাদেশকে তাদের অঙ্গরাজ্য মনে করে। তাই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ধরে নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় সংবিধাননুসারে কেন্দ্র যদি কোনো অঙ্গরাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়, তাহলে তা অঙ্গরাজ্য সরকারকে অবিহিত করতে হবে। অঙ্গরাজ্য সরকারের কাছে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না পেলে সুপ্রীম কোর্টে রয়েছে, সেখানে মামলা দায়ের করতে হবে। কোর্ট অনুমতি দিলে তবেই গ্রেফতার করতে পারবে।

কিন্তু বাংলাদেশ ভারতের অঘোষিত অঙ্গরাজ্য বলেই কিনা ভারত এই সামান্য প্রটোকল মেইনটেইন করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি। তবে ভারতের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা কি এক অঙ্গরাজ্যের চেয়েও কম?‍

পঠিত : ৬৫১ বার

মন্তব্য: ০