Alapon

কে জিতল, তুরস্ক নাকি আমেরিকা...?


এক.
তুর্কী জিতলো না ইউএস??

এই প্রশ্নের আসলে কোন সরল উত্তর নাই। কারন যুদ্ধটা তুর্কীর সাথে ইউএসএর না, কুর্দিদের সাথেও তুর্কীদের না। এতকাল যাই থাক, এখন যুদ্ধটা মূলত এখানে ইজরায়েলের সাথে তুর্কীর এবং আলাউই সিরিয়ান বাথ পার্টির সাথে ইখওয়ানের। এখানে এসডিএফ, এনএসএ হেনতেন এরা সব প্রক্সি ফাইটার।

ইজরায়েলের দাড়ায়ে থাকার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে মিডল ইস্টে কোন সুন্নী মুসলিম ইম্পেরিয়াল পাওয়ার/দাউলাহ, যার ট্রান্সন্যাশনাল হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাকে দাড়াইতে না দেওয়া।
মিডল ইস্টে মার্কিন এক্সিস্টিং হেজিমনি টিকে আছে পোস্ট ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ওয়ার অর্ডার এবং সাইকস-পিকট এগ্রিমেন্টের আফটারম্যাথে ভর করে।
এই হেজিমনির এগেইন্সটে প্রথম মেজর চ্যালেঞ্জ ছিল গামাল আবদেল নাসের। সে প্রথম একটা ট্রান্সন্যাশনাল পলিটিক্যাল এনটিটি তৈরি করতে চেষ্টা করে সেক্যুলার আরব ন্যাশনালিজমের ওপর ভর করে। কিন্তু ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধে এবং পরেরবার ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে সেক্যুলার আরব ন্যাশনালিজম জবাই হয়ে যায়।
এই মুহুর্তে ইজরায়েলকে ইরান যতটা চিন্তায় রেখেছে তারচেয়ে অনেক বেশি চিন্তায় রেখেছে নিওঅটোমানিজম।

নিওঅটোমানিজম অনেকগুলি কারনে ইরানী ইসলামী বিপ্লব এবং ইখওয়ানের ইসলামিক ডেমোক্রেসি ব্র‍্যান্ডের চাইতে ইজরায়েলের জন্য বেশি বিপজ্জনক। এরদোয়ান নিওঅটোমানিজমকে উপস্থাপন করেছেন কনজারভেটিভ ডেমোক্রেসির ব্র‍্যান্ডে, যাকে ওয়ার অন টেররের এক্সিস্টিং কনসেপচুয়াল ফ্রেমওয়ার্কের ভেতরে ফেলা যায় না।

তার চাইতেও অনেক বড় সমস্যা, তুর্কীর ওপর ন্যাটো স্ট্র‍্যাটেজিক্যালি, ট্যাকটিক্যালি এবং অপারেশনালি ডিপেন্ডেন্ট।

ভূমধ্যসাগর থেকে কৃষ্ণসাগরে ঢোকার একমাত্র জলপথ তুর্কী জলসীমার অধীনে অবস্থিত। পাশাপাশি, কোন কারনে রাশিয়া যদি বলকান/কার্পেথিয়ান অঞ্চলে হামলে পড়ে, যা ঐ অঞ্চলের জনমিতিক কারনে খুবই সম্ভব তবে তা ঠেকাতে ন্যাটোকে প্রথম যার দরজায় কড়া নাড়তে হবে সে হচ্ছে তুর্কী।
গোটা পঞ্চাশের স্ট্র‍্যাটেজিক নিউক মজুদ রাখা, এবং ইউরোপের সবচেয়ে অপারেশনাল মিলিটারির অধিকারী হওয়া, এগুলি সবই তুর্কীর এডভান্টেজ।

এর বাইরে তুর্কী যে বিপুল রেফিউজিকে ইউরোপে প্রবেশদ্বার বসফরাসে নামা থেকে আটকে রেখেছে তাদের ছেড়ে দেয়া হলে লিবারেল সরকারগুলির পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।

দুই.

রাশিয়ার সাথে বারগেইন করার জন্য তুর্কীর হাতে কার্ডের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
তুর্কী এস-৪০০ কিনেছে, এবং ইরানের ওপর আমেরিকান অবরোধকে বাইপাস করতে তুর্কী একটা কী কম্পোনেন্ট। এর বাইরে, তুর্কীর বড় রকম কোন লেভারেজ রাশিয়ার ওপর নাই।
সবদিক থেকেই স্ট্র‍্যাটেজিক্যালি তুর্কী রাশিয়ার শত্রু।

তাই, রাশিয়া-তুর্কীকে এবং তুর্কী রাশিয়াকে একদমই বিশ্বাস করে না।
মূলত রাশিয়ার দিক থেকে নিশ্চিন্ত হয়েই এরদোয়ান অপারেশন শুরু করেছিলেন। কিন্তু আমেরিকা পথ থেকে সরে দাড়ানোমাত্রই রাশিয়া আমেরিকার মতই, বরঞ্চ আরো কঠিন বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।

এরদোয়ানের জন্য ইদলিব বিশাল এক দুশ্চিন্তার নাম।
ইদলিব নিয়ে রাশিয়ার সাথে দরকষাকষি করতে এরদোয়ানের আইন আল আরব তথা কোবানি, অথবা মানবিজ, এ দুটো শহরের একটা প্রয়োজন।
দুটো শহরই এখন আসাদের নিয়ন্ত্রনে।
২২শে অক্টোবর, যেদিন এই যুদ্ধবিরতি শেষ হবে, সেদিনই এরদোয়ান পুতিনের সাথে দেখা করতে সোচি যাবেন।

তিন.

ট্রাম্প এই মুহুর্তে যে বিভিন্নমুখী চাপে আছেন তা কোনক্রমেই কমবে না।
তিনি সিরিয়া নিয়ে টেনশন ছুড়ে ফেলতে চেয়েও পারছেন না। আমেরিকান ইজরায়েলী লবী রাশিয়াকে বিশ্বাস করে না বলেই, আমেরিকাকে তারা সিরিয়া ছাড়তে দিতে চায় না।

ট্রাম্প সিরিয়া ছেড়ে দিয়ে একে রাশিয়ার খেলার মাঠ বানিয়েছেন, এবং তুর্কী যদি দৃশ্যপট থেকে সরে যায়, আসাদের রাইফেল এসডিএফের ওপরেই উঠবে।

এই যুদ্ধবিরতিকে তাই তুর্কী রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসাদকে এসডিএফের ওপর লেলিয়ে দিতেও ব্যবহার করতে চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার বাধায় যদি সেটা না হয়, তবে তুর্কীর আবারও অপারেশন শুরু করতে হবে।

চার.

Mostafa Faisal Parvez ভাই যথার্থই বলেছেন, ন্যাটোকে প্রত্যাখ্যান করলে রাশিয়া তুর্কীকে এককভাবে ডমিনেট করতে শুরু করবে।

এক্ষেত্রে তাই তুর্কীর স্ট্র‍্যাটেজি হবে টেরর করিডোরের মানবিজ থেকে এসডিএফকে সরিয়ে নিতে রাশিয়া-ন্যাটোর সম্মতি আদায় করা। এরপর সেইফ জোনে রেফিউজিদের পুশ করে তাদের ভেতর প্রচুর প্রক্সি ফাইটার তৈরি করে সিরিয়ার উত্তরে এমন এক ডেটারেন্ট তৈরি করা, যা তাকে সিরিয়ায় নতুন লেভারেজ এনে দেবে।
উত্তর সিরিয়ায় এই ৩৬ লাখ রেফিউজির সাথে যদি অন্তত ৪০ হাজার মিলিশিয়া তুর্কী তৈরি করতে পারে, এই মিলিশিয়া বাহিনী তুর্কীর দক্ষিণ সীমান্ত নিরাপদ রাখবে, এসডিএফকে দৌড়ের ওপর রাখবে এবং ইদলিব নিয়ে আসাদকে নয়া সমীকরন কষতে বাধ্য করবে।
ভবিষ্যতে সিরিয়া অভিমুখে যেকোন তুর্কী অভিযানে এই বাহিনীকে ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজে লাগানো যাবে।

তুর্কীকে কোন না কোনভাবে মানবিজ অথবা আইন আল আরবের যেকোন একটায় অবশ্যই রেফিউজিদের রিহ্যাবিলেট করতে হবে।

রাশিয়া সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে কিভাবে তুর্কীকে ন্যাটো থেকে আরো দুরে সরানো যায়।
এদিকে সিআইএ এবং ইজরায়েলী লবী চেষ্টা করবে ট্রাম্পের সাথে এরদোয়ানের সরাসরি ব্যক্তিগত বিরোধ তৈরির। চিঠি লিকের ঘটনা এই প্রক্রিয়ারই অংশ।
তুর্কী যত বেশি ন্যাটোর সাথে সদ্ভাব রেখে সিরিয়ান বর্ডারের ভেতর রেফিউজিদের ঠেলে দিতে পারবে, দীর্ঘমেয়াদে বাশার আল আসাদ ও ইজরায়েলবিরোধী স্ট্র‍্যাটেজিক ওয়ারফেয়ারে তারা সিরিয়ার মাটিতে ততটাই শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

লিখেছেন: মুহাম্মাদ সজল

পঠিত : ৮৮৩ বার

মন্তব্য: ০