Alapon

সিরিয়া নিয়ে একটি পর্যালোচনা



সিরিয়ার মানবিজ এখন আসাদ বাহিনীর কন্ট্রোলে। মানবিজের উপকণ্ঠের কন্ট্রোলে আছে তুর্কি সাপোর্টেড আরব মিলিশিয়া বাহিনী। আর মাঝখানে উভয় পক্ষের গোলাগুলি এড়াতে এই মুহূর্তে টহল দিচ্ছে রাশিয়ান সেনারা। তাদের সাথে তুর্কি বাহিনীর যোগাযোগ হচ্ছে।


এর আগে মানবিজের কন্ট্রোলে ছিল কুর্দি এসডিএফ বাহিনী, শহরের উপকন্ঠে ছিল সেইম তুর্কি সাপোর্টেড আরব মিলিশিয়া বাহিনী, আর উভয় পক্ষের গোলাগুলি এড়াতে মাঝখানে টহল দিত আমেরিকান সেনারা।


তুরস্কের জায়গায় তুরস্ক আছে, বাকি সব খেলোয়াড় বদলে গেছে।


স্ট্র্যাটেজিক্যালি খুব ইম্পরট্যান্ট মানবিজের ক্ষমতা এই নিয়ে গত সাত বছরে রদবদল হয়েছে ৪ বার। এখানেই শেষ হবে তার কোন গ্যারান্টি নাই।


মানবিজের জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ। জাতিগতভাবে আরবেরা এখানে সংখ্যাগুরু আর কুর্দি সহ চেচেন আর আর্মেনিয়ানরা সংখ্যালঘু। ধর্মীয়ভাবে এই শহরে সুন্নিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।


২০১২ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে শহরটি আসাদ বিদ্রোহীদের কন্ট্রোলে আসে। এরপর তারা লোকাল নির্বাচনের মাধ্যমে শহরের কাউন্সিল নিয়োগ দেয়। বেশীরভাগ কাউন্সিল মেম্বার ছিল সুন্নি আরব।


২০১৪ সালে আইসিস আসাদ বিদ্রোহিদের হটিয়ে মানবিজ দখল করে।
আইসিস তাদের খেলাফতের জন্য বেশীরভাগ সময় সুন্নি মেজরিটি এলাকাগুলোই দখল করেছিল।


২০১৬ সালে ২ মাস যুদ্ধ করার পর কুর্দি বাহিনী এসডিএফ শহরটি আইসিস মুক্ত করে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত শহরটি আমেরিকার সাপোর্টেড এসডিএফ এর মানবিজ মিলিটারি কাউন্সিলের কন্ট্রোলে। তারা লোকাল সরকার চালাতে যেসব কমিটি গঠন করে তার ৬০% আরব আর ৩৩% কুর্দি। বাদবাকি আদার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক।


শহরের ইতিহাস প্রমাণ করে মানবিজ মুলত সুন্নি আরব মেজরিটি শহর। মানবিজের দখল দারির যুদ্ধে বারবার সাফার করেছে এখানে বসবাসকারী সুন্নি আরবেরা। এবারও করবে। আসাদ তার সমালচনাকারিদের, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারিদের, বা বিদ্রোহীদের সাপোর্টারদের চরম শাস্তি দেয়। এই শহরে আসাদের কখনও সাপোর্ট ছিল না। যার কারনে মানবিয গত ৭ বছর আসাদের কন্ট্রোলে আসে নাই। শহরটি অবশেষে আসাদের দখলে।


ট্রাম্প এরদোয়ানকে অপারেশান পিস স্প্রিং এর গ্রিম সিগন্যাল দেয়ার পর ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে দাড়িয়েছে। গত রাতে তুরস্কের উপর আমেরিকা তাদের এনার্জি আর ডিফেন্স সেক্টরের উপর অনেকগুলো স্যাঙ্কশান আরোপ করেছে। ন্যাটো মেম্বার তুরস্ককে আমেরিকা এনেমি স্টেট হসাবে ট্রীট করছে। আমেরিকা আর তুরস্কের সম্পর্ক সহজে আর তরল হবে না। তুরস্ক গত ৩ বছর ধরে ধীরে ধীরে ইরনা-রাশিয়া বলয়ে ঢুকছিল, এবার তা ত্বরান্বিত হবে।


ট্রাম্প আমেরিকার ফরেইন পলিসির অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলল। প্রথমে ইরানের নিউক্লিয়ার ডিল থেকে সরে আসল, এরপর কুর্দিদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। বিশ্বের আর কোন দেশ আমেরিকাকে আর সহজে মিত্র হিসাবে নিবে না। নিলেও তা হবে স্বল্প মেয়াদী মিউচুয়াল লাভের হিসাবে। ট্র্যাম্পের 'মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন' হতে যাচ্ছে 'মেইক আমেরিকা এলোন'।


আমেরিকাকে ফের যে কোন বিরাট মিলিটারি চুক্তির (অস্ত্র কেনাবেচার চুক্তি না) জন্য কত কাঠখড় কত বছর পোড়াতে হবে কে জানে। আর এখন যারা মিত্র যেমন সৌদি আরব , আরব আমিরাত পর্যন্ত নিজেদের সব এগ আমেরিকার বাস্কেটে দিয়ে চুক্তি করবে না। এখন থেকে সবার চুক্তি হবে বেইসড অন 'ডিসট্রাস্ট' আর স্বল্প মেয়াদী। পুরা বিশ্ব এখন বুঝে গেছে ডেমোক্র্যাট থেকে সরকার পরিবর্তন হয়ে রিপাব্লিকান হলেই দেয়ার ইজ নো গ্যারান্টি আমেরিকা আগের সরকারের চুক্তিকে সম্মান জানাবে।


তুরস্কের নিজেদের সীমান্ত রক্ষার অধিকার অবশ্যই আছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব তাকে সেই অধিকার দিতে নারাজ। এই ব্যাপারে তাদের দ্বিচারিতা বেশ নগ্ন। সোউদি আরবের ইয়েমেন আক্রমনে তারা যে কেবল মেনে নিয়েছে তা নয়, বরং সৌদিকে সামরিক সাহায্য পর্যন্ত করছে, কোন স্যানকশান তো দূর কি বাত। জামাল খাশোগজির হত্যাকাণ্ডের পর রিএক্সশানের কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।


পশ্চিমা দেশগুলোর নিজেদের নগ্ন স্বার্থের এই খেলার মাশুল কি হয় কে জানে। তুরস্কের ইন্সার্ক্লিক বিমান ঘাটিতে এখনও ন্যাটর নিউক্লিয়ার অয়েপন্স মজুত আছে, যার মাঝে এটলিস্ট দুইটা তুর্কিদের কন্ট্রোলে। এরদোয়ান কি এসব নিউক্লিয়ার অয়েপন্সকে হস্টেজ করে বারগেইন করবে না?


আজকের সবশেষ পয়েন্ট। আসাদের সকল মুভের প্ল্যান দাতা ইরানের কুডস ফোর্স কম্যান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এখন সামরিক দাবার গুটি খুব দ্রুত চালছেন তাতে সন্দেহ নাই। আমেরিকাকে সিরিয়া ছেড়ে চলে যেতে দেখে সোলাইমানি হয়ত হুক্কায় টান দিতে দিতে হাসছেন।

-সাবিনা আহমেদের ফেসবুকের ওয়াল থেকে

পঠিত : ৭৮৩ বার

মন্তব্য: ০