Alapon

শাপলা চত্তর থেকে ভোলার চরফ্যাসন, একই সূত্রে গাথাঁ।


ভোলার নবী প্রেমিক হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানানোর ভাষা নেই কিন্তু বাকরুদ্ধ হলেও বিবেকরুদ্ধ হতে পারছি না বলে দুঃখিত। তাই কিছু তিক্ত কথা পেশ করছি। মনে পড়ে শাহবাদের গণ জাগরণ মঞ্চের শুরুর দিককার কথা। মুহাম্মদ স এর তার পুতপর্বিত পত্নীদের চরিত্র নিয়ে দিনের পর দিন খিস্তি করা নাস্তিকরা যখন যুদ্ধাপরাধ ইস্যূতে মাঠ গরম করে মিডিয়ার সার্কাস চালু করলো, তখন মাহমুদুর রহমান সহ কয়েকজন দেশ প্রেমিক এগুলোর ভয়াবহত পত্রিকায় প্রকাশ করতে শুরু করলো।

এরপরেও ওলামাদের দৃষ্টিতে আসতে লাগলো বিষয়গুলো। মুরব্বিরা ওলামারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় না থাকায় সেগুলো প্রথম থেকে দেখতে পাননি কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরে তাদের টনক নড়ে। তারা গঠন করেন হেফাজত ইসলাম নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠণ যার কাজ হবে নবীর স দুশমনদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা রাখা।

এই সংগঠন করার প্রাক্কালে উদ্যোক্তোদের কয়েকজন প্রস্তাব করলেন সকল দল ও গোষ্টিকে সাথে নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু করার জন্য। নেতৃত্ব নির্বাচন থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের শ্রেনী বিন্যাসে বিভিন্ন ধারার অভিজ্ঞ দল ও গোষ্টিকে সামনে আনতে হবে। যেহেতু ওলামাদের রাজনৈতিক বা আন্দোলন কেন্দ্রিক কোন অভিজ্ঞতা নেই সেহেতু তারা নেতৃত্বের ওপরের লেভেলে থেকে পজিশান ঠিক রাখলেই হবে।

এসব প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে আমাদের কিছু হক্কানী ভদ্রলোকরা আপত্তি জানালেন। তারা জামায়াত শিবিরকে কাছ আনতে নারাজি দিলেন এই যুক্তিতে যে, সরকার এটাকে বিতর্কিত করে দেবে। তাছাড়া জাাময়াত শিবির থাকলে মাঠে নামাও কঠিন হবে। সারাক্ষন নবী প্রেমের দাবিদার আহলে সুন্নীদের কাছে আনতে বাধা দিয়েছে এই দাবিতে যে, ওরা বেদয়াতী, ওদের কাছে আনার দরকার নেই। ফুরফুরা, ছারছিনাদেরও কাছে রাখা হয়নি, তাদের পরামর্শ নিয়ে হেফাজত ইসলামকে মুসলিমদের, নবী প্রেমীদের সার্বজনিন সংগঠনের রূপদান করার প্রাথমিক প্রম্তাবনাগুলোকে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।

পরবর্তিতে জামায়াত শিবিরের তাদের রক্তের দোষের কারণেই হেফাজতের কার্যক্রমে সক্রিয অংশ নেয়, কারণ ওরা যে কোন ইসলামী সংগঠনের দ্বীনি খেদমতে অংশ নিতে ইতস্ত করেনি। এছাড়া শাহবাগের বিরুদ্ধে হেফাজতের ভূমিকা তাদের জন্য আবে হায়াত হিসেবেই প্রমানিত হয়েছিলো। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য একটি অপুর্ব নেয়ামত সাবেত হয়েছিলো। কিন্তু অন্য সব সংগঠন এর থেকে স্বযত্নে দুরে চলে যায়।

আহলে সুন্নীরা প্রকাশ্যে হেফাজতকে নিয়ে কুৎসা রটায় এবং সেটাকে মিডিয়া দিয়ে হাইলাইট করায়। ছারছিনা,ফুরফুরা সহ অন্যসব দরবারগুলো এই কাজে সক্রিয় অংশ গ্রহণ থেকে দুরত্ব বজায় রাখে ইগো কেন্দ্রিক জটিলতা। তারা দেখতে পেয়েছিলো যে, হেফাজতের সকল স্তরের নেতৃত্ব বিশেষ একটি সম্প্রদায় বগল দাবা করে নিয়েছে। এর সততাও ছিলো, কিছু সংগঠন এবং পরিবারের ভিতরেই হেফাজতের নেতৃত্ব সীমাবদ্ধ হয়ে যায় যে কারণে পরবর্তিতে হেফাজতের ইমেজ বিক্রি করে বহু লোক দুনিয়া কামানোর সুযোগ পেয়েছিলো।

খোদ কওমী ঘরানার পরিচিত চরমোনাইও এই হেফাজত ইস্যূতে ভিন্ন পথ অবলম্বন করে এবং প্যারালাল কর্মসূচী দিয়ে কওমী অঙ্গনে হেফাজত ইস্যূতে বিভক্তির চিহ্ন একেঁ দেয়। এক প্রকার বিভক্তির মধ্য দিয়েই নবী প্রেমের স্বার্থে জন্ম নেওয়া একটি সংগঠন সরকারের প্রাথমিক সমীহ আদায় করে নিতে সক্ষম হলেও ধীরে ধীরে এর ভিতরের দুর্বলতাগুলো স্পষ্ট হতে থাকে। যেটা সরকার ভালো ভাবে স্টাডি করে ফেলে। ফলে পাচঁ মে কোন প্রকার হিনমন্যতা ছাড়াই গণহত্যা চালানোর সাহস করে সরকার।

তাদের স্টাডি শতভাগ সত্য ছিলো তার অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে, গণহত্যা পরবর্তি হেফাজতের নেতৃত্ব প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এবং সরকারের ক্রেকডাউন পরবর্তি তাদের ক্ষয়ক্ষতি, নেতাকর্মীদের অবস্থান এবং দিনে রাতে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা পর্যন্ত পেশ করতে ব্যর্থ হয়েছিলো। এর অন্যতম কারণ হলো নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের রাজনৈতিক দুরদর্শিতা এবং প্যারালাল নেতৃত্ব তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়া।

এরকম ভয়াবহ ক্রেকডাউন চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের নেওয়ার সক্ষমতা সরকারকে আরো বেপরোয়া হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ফলে বাংলাদেশের ওলামাদের পক্ষে ভবিষ্যতে যে কোন ইস্যূতে সত্যিকারের কার্যকর কোন গণ আন্দোলন সৃষ্টির জন্য কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভবপর নয়। কারণ, এ অঞ্চলের মুসলিম শক্তির সব থেকে বড় সমস্যা তারা নিজেদের মধ্যকার সামান্য মতবিরোধকে দ্বীনের রং দেওয়ার চিরাচাতির খাসালতকে অত্যান্ত নেকের কাজ মনে করে লালন করে চলছে পাশাপাশি নিজ নিজ স্বার্থ বুঝে সমকালিন শাষকদের মনোতুষ্ট করে পথ চলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এরা বন্ধুত্ব নির্বাচনে অন্যের খায়েশ দেখে, আল্লাহর সন্তুষ্টি নয়। এরকম চরিত্রের লোকেরা কখনো সাহস ও হিম্মতের সাথে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়ানোর সাহস করে না। এরা বিভক্তিতে প্রশান্তি খোজে।

আজকে ভোলার ঘটনাই শুধু নয়, সারা বাংলাদেশের কোথাও হিন্দুদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস ইসকনের বলয়ে আষ্টেপিষ্টে ঢুবে থাকা সরকারের নেই। ওরা ঐক্যবদ্ধ এক ইস্যূতে, আমরা বিভক্ত এক ইস্যূতে। এই বিভক্তির অনঢ় যতদিন জ্বলবে, ততদিন বহু শুভ রায়ের জন্ম হবে, সাহস হবে ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে বসে তাদের কলিজায় আঘাত করতে। অতঃপর, বহু মুসলিম নিজেদের বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদে জীবন হারাবে।

রকম নবী প্রেমীদের রক্ত দ্বারােই অনেকের প্রসাদের দেয়ালের রং আরো আলোকিত হবে। স্বার্থপর ব্যক্তি ও গোষ্টিরা নবী প্রেমীদের এই আবেগকে বার বার ব্যবহার করতে থাকবে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে দেশের ইসলামপন্থীদের নুন্যতম ইস্যূতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রত্যেকে রাজনৈতিক রং ও ঢং কে বেমালুম ভুলে গিয়ে দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান সমীহ করার পর্যায়ে নিতে হবে। এ পর্যায়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি ঈমানী তাগিদও জরুরী।

Apu Ahmed

পঠিত : ১৩৮১ বার

মন্তব্য: ০