Alapon

নবীজি ﷺ যেভাবে চরিত্র রক্ষার পাঠদান দিতেন...


টিনএজ বয়সটা ছেলে-মেয়ে দুজনের জন্যই বেশ অস্থির একটা সময়৷ নিজের শরীর এবং বিপরীত লিঙ্গের শরীর প্রতি এ-বয়সে প্রথম তারা আকর্ষণ বোধ করে৷ এগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায় না৷ আপনার সুবোধ-সুশীলা ছেলে বা মেয়েকে এখনো ছোট্টটি মনে করার কারণ নেই৷ করলে পরে পস্তাবেন আপনিই৷

নবিজির সময়েও এ-বয়সী ছেলে-মেয়েরা ছিল৷ তারা সবসময় নিজেদের দৃষ্টি সংযত করতে পারেনি৷ এটা মানুষের সহজাত স্বভাব৷ কিন্তু নবিজি এ-রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন৷ তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন৷

একবার হাজ্জের সময় নবিজি আর তার চাচাতো ভাই ফাদ্‌ল বিন আব্বাস যাচ্ছিলেন এক সওয়ারিতে চড়ে৷ ফাদ্‌ল ছিলেন বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ বিন আব্বাসের ছোট ভাই৷ আমরা ধারণা করতে পারি, নবিজির চাচাতো ভাই যেহেতু, তারা দুজনই সুদর্শন ছিলেন৷ বিশেষ করে নবিজির দাদার বংশের সব চাচা এবং চাচাতো ভাইয়েরা সুন্দর সুঠাম হয়ে থাকবেন৷

তো পথে খাসাম গোত্রের এক তরুণী নবিজির সামনে এসে দাঁড়ালেন৷ তরুণী তাকিয়ে আছেন ফাদ্‌লের দিকে৷ ফাদ্‌ল তাকিয়ে আছেন তরুণীর দিকে৷ এর ফাঁকেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আমার বাবার উপর হাজ্জ করার বাধ্যবাধকতা চেপেছে৷ কিন্তু তিনি খুবই বয়স্ক৷ কোনো কিছুতে সওয়ার হতে পারেন না৷ আমি কি তার হয়ে হাজ্জ করতে পারব?” “হ্যাঁ৷” নবিজি বললেন৷ (সহিহ বুখারি)

আপনি-আমি হলে তো আমাদের মূল নজর থাকত প্রশ্নকর্তার দিকে৷ কিন্তু নবিজির একটা চোখ কিন্তু ছিল ফাদ্‌লের উপরও৷ তিনি জানতেন, ওদের যা বয়স, একজন আরেকজনের দিকে তাকাবেই৷ আর সেজন্য প্রশ্ন-উত্তর সময়টাতে বার তিনেক ফাদ্‌লের মুখ তিনি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন৷ তরুণীটিকে উত্তর দেয়া শেষ হলে নবিজি তার চাচাতো ভাইকে বললেন, “আজ এমন এক দিন, যে-তার দৃষ্টি সংযত রাখবে, লজ্জাস্থান ও জবান সুরক্ষিত রাখবে, তাকে মাফ করে দেয়া হবে৷” (ইবনু খুজাইমা)

ঘটনাটির আরও বেশ কিছু মজার দিক আছে৷

ঘটনাটি ঘটেছিল নবিজির বিদায় হাজ্জের সময় কাবা ঘরের আশেপাশে কোথাও৷ এ-থেকে বোঝা যায়, মানুষের চরিত্রের কিছু কিছু দিক সবসময় এক৷ মানুষ যেমন মরণশীল, মানুষ যেমন ভুল করে, তেমনি নারী-পুরুষের আকর্ষণ সহজ ও স্বাভাবিক বিষয়৷ একে অস্বীকার করা বোকামি৷ কথা হচ্ছে, কীভাবে সেই আকর্ষণ আমরা বৈধভাবে সামলাব সেটা৷

নবি ﷺ তাঁর চাচাতো ভাইকে ধমকের সুরে কিছু বলেননি৷ কিংবা শাস্তিমূলক কিছু বলেননি৷ সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছেন আগামীর জন্য৷ আজ হয়তো শাস্তির ভয়ে কিংবা নবিজির সামনে মুখ ফিরিয়ে থাকল৷ কিন্তু পরে যখন তিনি থাকবেন না, তখন কী হবে? এজন্য এমন সুন্দরভাবে কথাগুলো বললেন, যেন সেটা হৃদয়ের গভীরে দাগ কাটে৷ এর রেশ যেন থাকে আজীবন৷ ফাদ্‌ল তো শুধু তাকিয়েই ছিলেন কেবল৷ কিন্তু নবিজি তাকে লজ্জাস্থান সুরক্ষিত রাখার কথা বললেন কেন? আচ্ছা, তা নাহয় বললেন, কিন্তু জবান?

প্রথম দেখাতে আসলেই ভালোবাসা হয় কি না জানি না, তবে প্রথম দেখা থেকে ভালো লাগা, ভালো লাগা থেকে কথাবার্তা, ডেটিং, এরপর অনেক কিছু হয়ে যায়৷ নবিজি এজন্য শুরুতেই গোড়া কেটে দিয়ে আকর্ষণ বাড়ার পথ রোধ করে দিলেন৷ এটা ছিল যৌনতা বিষয়ে নবিজির শিক্ষা৷

আজকাল আমরা শুনি অবৈধ এবং বিয়ে-বহির্ভূত যৌন-সম্বন্ধ থেকে যদি গর্ভে বাচ্চা না আসে, তা হলে নাকি সব ঠিক৷ আজকাল যৌনশিক্ষা মানে ইমার্জেন্সি পিল, কনডম — যার পোশাকি নাম ‘নিরাপদ দৈহিক মিলন’৷ কিন্তু নবিজির শিক্ষা ছিল আদর্শমুখী৷ এর মূলে ছিল আল্লাহর প্রতি সচেতনতা৷ দৃষ্টি সংযত করো, লজ্জাস্থান ও মুখ সুরক্ষিত রাখো, আল্লাহর ক্ষমা অর্জন করো৷

ছোটবেলা থেকে যদি আপনি বাবা-মা’র ঘরে ঢোকার আগে অনুমতি নেন, আপনি ছেলে হন কি মেয়ে — ঘরের ভেতর যদি নিজের পর্দা রক্ষা করে চলেন, সালাতের সময়ে ঠিকঠাকভাবে পোশাক পড়েন, তা হলে ঘরের বাইরে আপনার পথ চলা সহজ হবে৷

[নবীজি ﷺ যেভাবে সন্তান মানুষ করেছেন, হিশাম আওয়াদির Children Around The Prophet অবলম্বনে লিখেছে...]

লেখাঃ মাসুদ শরীফ (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

পঠিত : ১২৭০ বার

মন্তব্য: ০