Alapon

আল্লামা ইকবাল : ঘরোয়া জীবনের উজ্জ্বল কিছু দিক...


প্রাচ্যের কবি আল্লামা ইকবাল সম্পর্কে অনেক লেখালেখি হয়েছে। ১৯৫১ সনে আল্লামা ইকবালের এক বন্ধু ফকীর সাইয়্যেদ ওহীদুদ্দীন ‘রোযগারে ফকীর’ নামে এক কিতাব প্রকাশ করেন, যাতে তিনি আল্লামা ইকবালের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক সর্বপ্রথম জনসমক্ষে তুলে ধরেন। প্রকৃতপক্ষে এ দিকগুলো যে কোনো মুসলমানের মধ্যেই থাকা উচিত।

ফকীর সাইয়্যেদ ওহীদুদ্দীন লিখেছেন, আল্লামা ইকবাল অধিকাংশ সময়ই চুপচাপ থাকতেন। যখনই আমি তাকে দেখেছি মনে হয়েছে, যেন তিনি কোন কিছু নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছেন। নিজের থেকে আগে বেড়ে তার সাথে কথা বলার সাহস হতো না কারো। প্রায় সময়ই তিনি নিবিষ্টচিত্তে চুপচাপ বসে থাকতেন। যদি কেউ কোন কিছু জিজ্ঞাসা করতো তাহলে তার জবাব সংক্ষেপে দিতেন। তারপর আবার চুপ হয়ে যেতেন। হ্যাঁ যখন কোন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন তখন ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতেন। মনে হত যেন জ্ঞানের সাগরে জোয়ার এসেছে।

সাদামাটা পোশাক পরতে ভালবাসতেনঃ

আল্লামা ইকবাল প্রয়োজন হলেই কেবল জামা বানাতেন। অতিরিক্ত জামাকাপড় রাখতেন না। নতুন নতুন ডিজাইনের জামা পরার আগ্রহ ছিল না তার। যখন কাপড় ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে যেত তখন নিজের পুরানো কর্মচারী আলী বখশকে বলতেন। কর্মচারী পছন্দ করে দর্জির কাছে কাপড় দিয়ে আসতেন। কখনো দর্জির কাছে থাকা কাপড় দিয়েই জামা বানিয়ে ফেলার জন্য বলতেন। দর্জির কাছে আগে থেকেই মাপ থাকত। জামা বানানোর পর তিনি কখনো অভিযোগ করতেন না, কোনো সমালোচনা করতেন না।

বিশিষ্ট সাধারণ সবার জন্য দুয়ার খোলাঃ

আল্লামা ইকবালকে যারা দেখেছেন তারা জানেন পৃথিবীর বিখ্যাত একজন কবি- তিনি না দামি কোন সোফা চেয়ারে বসতেন, না তার ঘরে দামি কোন আসবাবপত্র ছিল। তার ঘরের আসবাবপত্র ছিল একেবারেই সাদামাটা। সব ধরনের আড়ম্বরতা থেকে মুক্ত ছিল। সেখানে কর্মচারী দারোয়ানদের কোনো ভিড় ছিল না। ছিল না তার সাথে দেখা করার জন্য ভিন্ন কোনো নিয়ম নীতি। দেখা সাক্ষাতের ব্যাপারে আল্লামা ইকবাল ধনী-গরীব শিক্ষিত-অশিক্ষিত কোন পার্থক্য করতেন না। একবার এক ধোপা আসলো আল্লামা ইকবালকে দেখার জন্যে। কর্মচারী আলী বখশকে বললেন,আমি আল্লামা ইকবালের সাথে দেখা করতে চাই। তখন আল্লামা ইকবাল লুঙ্গি পড়ে বারান্দায় বসে ছিলেন। কর্মচারী আল্লামা ইকবালকে দেখিয়ে দিলেন। কর্মচারীর কথা বিশ্বাস হলো না ধোপার। ধোপা এসে আল্লামা ইকবালকে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লামা ইকবাল কোথায় থাকেন। আমি তাকে দেখতে চাই। আল্লামা ইকবাল বললেন, আমি তো ইকবাল।

নবীনদের প্রতি আল্লামা ইকবালের উপদেশঃ

নবীনদেরকে আল্লামা ইকবাল শরীরচর্চার উপদেশ দিতেন। একবার একজন পাহলোয়ান তার সাথে দেখা করতে আসলেন। আল্লামা ইকবাল তার ভাতিজাকে তার কাছে পাঠিয়ে দিলেন তার থেকে শরীরচর্চা শিখার জন্য।

আল্লামা ইকবাল বলতেন, যতটুকু সম্ভব জীবনকে বিন্যস্ত কর। সাদাসিধা জীবন যাপনের চেষ্টা করো। তিনি আরো বলতেন, যৌবনের শক্তি থেকে উপকৃত হও। যৌবনকে কাজে লাগাও। তাহলে তোমার স্বাস্থ্য অনেকদিন পর্যন্ত থাকবে। শারীরিক এবং আত্মিক সুস্থতার জন্য ধর্মীয় জীবন যাপনের বিকল্প নেই।

তিনি যুবকদেরকে আল্লাহওয়ালাদের মজলিসে বসার জন্যে বলতেন। তিনি বলতেন,আল্লাহওয়ালাদের সংস্পর্শ পরশ পাথরের মত।পরশ পাথর যেভাবে মাটিকে সোনা বানিয়ে দেয়, ঠিক তাদের সংস্পর্শ মাটির মানুষকে সোনার মানুষে পরিণত করে।

আল্লামা ইকবাল এবং মেসওয়াক এর আগ্রহঃ

আল্লামা ইকবাল ইসলামী বিধি-বিধান মোতাবেক জীবন যাপন করতে অনেক পছন্দ করতেন। একবার তিনি ঘরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কথা বলছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইসলাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপরে কতই না গুরুত্ব দিয়েছে। তারপর তিনি দাঁত পরিষ্কার রাখার জন্য মেসওয়াকের উপকারিতা উল্লেখ করেন।

এর কিছুদিন পর এক চিঠিতে তার ভাতিজা এজাজ আহমদ জিজ্ঞাসা করলেন, এখন তো কত সুন্দর সুন্দর ব্রাশ পাওয়া যায়। ব্রাশ কি এই মেসওয়াকের উত্তম বিকল্প নয়? আল্লামা ইকবাল লিখলেন,মিসওয়াক দ্বারা আমার উদ্দেশ্য ইংরেজদের ব্রাশ টুথপেস্ট নয়।

আল্লামা ইকবাল বলতেন, ইউরোপের আবিষ্কৃত অনেক জিনিস দেখতে অনেক সুন্দর। কিন্তু তাতে অনেক বিষাক্ত জিনিস গোপন থাকে, যা তাৎক্ষণিকভাবে টের পাওয়া যায় না।

আল্লামা ইকবালের গোসলখানায় সবসময়ই একটা দেশি মেসওয়াক থাকতো।

আল্লামা ইকবাল এবং সন্তান লাভের আকুতিঃ

আল্লামা ইকবাল তৃতীয় বিবাহ করার পরও অনেক লম্বা একটা সময় পর্যন্ত নিঃসন্তান ছিলেন। একবার তিনি মোজাদ্দেদে আলফে সানীর কবরে গিয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে সন্তান লাভের জন্য দোয়া করেছিলেন। এই দোয়া করার পর পাঁচ ছয় বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। কোন সন্তান হচ্ছিল না। একবার সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে দেখেন তার স্ত্রী একটি পাখির ছানাকে পরম যত্মে পাশে বসিয়ে ফল খাওয়াচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে আল্লামা ইকবালের মুখ থেকে অনিচ্ছাতেই বের হয়ে গেল- আল্লাহ এই মেয়ের মাঝে মাতৃত্ব-স্নেহ জেগে উঠেছে। এবার তাকে সন্তান দান কর। তার এ দোয়া কবুল হয়েছিল। পরের বছরই জাবেদ নামে তার এক সন্তান জন্ম লাভ করেন।

সূত্র: দৈনিক জং, ইসলাম টাইমস

পঠিত : ১৬৯৫ বার

মন্তব্য: ০