Alapon

বাণিজ্য কথন!

টুয়েন্টি সিক্সটিন এর সর্বশেষ হিসাবানুযায়ী এই পৃথিবীর সর্বমোট জনসংখ্যা ৭,৪৩২,৬৬৩,২৭৫ জন যা সহজ ভাবে বললে- বলা যায় প্রায় ৭শত পঞ্চাশ কোটি।
তো, এই সাড়ে সাতশত কোটি মানুষের মধ্যে আমেরিকার জনসংখ্যা মাত্র ৩২৪,১১৮,৭৮৭ জন যা বিশ্বব্যাপী সর্বমোট জনসংখ্যার মাত্র ৫%। অথচ, এই মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের অর্থনীতি-ই এই বিশ্বের সবচে বড় অর্থনীতি যারা বাদবাকী পৃথিবীর নিয়ন্ত্রক।


কিভাবে সম্ভবপর করেছে একটা দেশ- এমন একটি বিষয়কে!
ঠান্ডা মাথায় কি কখনও একটু ভেবে দেখেছেন?
অথবা, বিষয়টা নিয়ে কোনদিন একটু চিন্তা করার চেষ্টা করেছেন?


সত্যি বলতে কি এই ‘কঠিন চিন্তাটা’ই আমাকে আমেরিকায় নিয়ে আসে। আমার ভীষণভাবে বোঝার ইচ্ছে ছিল- কিভাবে এটা সম্ভব হয়েছে। কিভাবে সম্ভব?


মাত্র ৩২ কোটি মানুষ কি এমন ‘রত্ন’ নিয়ে আছে যে তাদের হাতেই এই পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ!
তাদের হাতেই এই পৃথিবীর অর্থনীতি নির্ভর করে!
তাদের নিজস্ব কারেন্সী- সারা পৃথিবীর কারেন্সী হিসাবে ব্যবহৃত হয়!


আমি আগেও বলেছি, আমেরিকার একটাই মাত্র ‘প্রডাক্ট’ আর সেটা হলো ‘ব্রেইন’।
আমেরিকা বুদ্ধি বিক্রি করে চলে।


নাইনটিন নাইনটি ফোর এ আমি যখন আমার প্রথম ‘৮০৩৮৬ কমপিউটার’টি পার্সেস করি, তখন কোথায় যেন একটা আর্টিক্যাল পড়েছিলাম যে দশ কোটি ৮০৩৮৬ কমপিউটারের যতটুকু বুদ্ধি রয়েছে- তারচেও বেশী বুদ্ধি থাকে একজন সাধারণ মানুষের মাথায়।


আমি আসলে আমেরিকানদের ‘বুদ্ধি’ দেখতেই আমেরিকায় আসি। ওদের ‘বুদ্ধি’ দেখি আর প্রতিদিন একটু একটু করে ‘বিস্মিত’ হই। এভাবেই প্রতিদিন বিস্মিত হচ্ছি আর নিজের ‘ক্ষুদ্রতা’ অনুভব করছি।


তবে মজার একটা বিষয় হলো, আমি যে ‘অতি ক্ষুদ্র’ এজন্য আমি দায়ী নই খুব বেশী। এর সম্পূর্ণ দায় আমার পরিবার, পরিবেশ এবং বাংলাদেশ নামের একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। এবং ‘আমার পরিবার’ ও ‘পরিবেশ’ এর জন্যও কিন্তু সম্পূর্ণভাবেই দায়ী ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র ব্যবস্থা’টাই।


মানুষ কিভাবে বড় হয়?
অনেকেই অনেক কথা বলবে, অনেক যুক্তি দেখাবে। আমি যুক্তির মানুষ। যুক্তিকে ভালোবাসি। যুক্তিতেই চলি। যুুক্তির বাইরে যাবার চেষ্টা করি না।


বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থা যেখানটায় এসে দাঁড়িয়েছে- তাতে একজন মানুষ ততটাই বড়:
(১) যার নেটওয়ার্ক যত বড়।
(২) যার হাতে যত বেশী টাকা রয়েছে।


বর্তমান পুঁজিবাদী বিশ্ব-ব্যবস্থায় ‘বিশাল নেটওয়ার্ক’ এবং ‘বড় অংকের টাকা’ই বলে দেবে কে কত বড় মানুষ। আমার নিজেরও এতে দ্বিমত রয়েছে- কিন্তু আমি বাস্তবতা না মেনে পারি না। স্বীকার আমাকেও যে করতেই হয়।


আমেরিকার রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক।
তাদের নেটওয়ার্কে পুরো পৃথিবী আবদ্ধ। এই নেটওয়ার্কের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই কারো। বর্তমান বাস্তবতায় সেই নেটওয়ার্ককে বাদ দিয়ে নতুন নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করাটাও অসম্ভব।


নেটওয়ার্কটা যেমন যোগাযোগের, ঠিক তেমনি যতটা অর্থনীতির মুদ্রা ব্যবস্থাপনায়, যতটা কৌশলের, যতটা বাহাদুরীর, ততটা শক্তির এবং ততটা মেধারও।


এই সবকিছুর সমন্বয়েই আমেরিকার নেটওয়ার্ক তৈরী।
আর ‘মার্কিন ডলার’ এই পৃথিবীর বলতে গেলে একমাত্র ‘ইন্টান্যাশনাল কারেন্সী’।


কিন্তু কিভাবে ওরা এতটা এগুতে পেরেছে?
কিভাবে ওরা ‘আমেরিকা’ হতে পেরেছে?


উত্তরটাও সহজ।
আগেই বলেছি ওদের একমাত্র প্রোডাক্ট হলো ওদের ‘মেধা’ বা ‘বুদ্ধি’।


তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, আমাদের ততটা মেধা বা বুদ্ধি নেই। কিন্তু অতটুকু বুদ্ধিও কি আমাদের নেই- যা দিয়ে ওদের অনুসরণ করতে পারি?


এখানেই আমাদের ব্যর্থতা।
আমরা ব্যর্থ। আমরা ভালো-কে যে অনুসরণ করে ভালো হবে- সেই যোগ্যতাও নেই।


আমরা একটা সমস্যাকে ব্যাকাপ দিতে আরও একটা নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে যাচ্ছি।


আমি মুলতঃ অথনৈতিক কয়েকটা বিষয় নিয়ে বলতে চাচ্ছিলাম।
তারা যদি ৩২ কোটি মানুষ মিলে পৃথিবীর সবচে বড় অর্থনীতি হতে পারে- তাহলে ১৬ কোটি মানুষ নিয়ে আমাদের ‘এই হাল’ কেন?


আমি জানি আপনি বলবেন, আমেরিকা বিশাল দেশ, ওদের ন্যাচারাল রিসোর্স রয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
না, আপনি এখানেও ভুল করছেন। ভুলে ভুলেই বাংলাদেশটা আজ ধ্বংশপ্রাপ্ত দশা!


আমেরিকানরা যতটা নিজস্ব রিসোর্স ব্যবহার করে তারচে হাজারগুন বেশী বাইরে থেকে ইমপোর্ট করে চলে। ওদের প্রধান প্রয়োজনীয় দ্রব্য জ্বালানী তেল আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। জ্বালানী তেল ছাড়া অামেরিকা অচল। ২০১৪র সর্বশেষ হিসাবানুযায়ী আমেরিকায় প্রতি ১০০০ জন লোকের মধ্যে ৮০০ জনই নিজস্ব গাড়ীর মালিক। তাহলে বুঝুন এদের কি পরিমান জ্বালানী তেলের প্রয়োজন হয়। বিশাল দেশ। সামান্য বাজার করতেও গাড়ীর প্রয়োজন হয়। গাড়ী ছাড়া মার্কিন সমাজ চিন্তাই করা যায় না।


আসল বিষয়টা হলো ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা’।
আমেরিকাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠত্য পেতে নির্ভর করতে হয়েছে তাদের অত্যন্ত শক্তিশালি ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা’র উপর।


বিষয়টা কিন্তু খুবই সহজ।


আরও একটু সহজ ভাবে বোঝানোর জন্য আমি বাংলাদেশের অর্থ-ব্যবস্থপনা নিয়ে কয়েকটা উদাহরণ দিই।
আপনি ব্যাংকে টাকা জমা রাখুন- ব্যাংক আপনাকে ১২% পর্যন্ত ইন্টারেষ্ট দেবে। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি প্রথমেই একজন মানুষকে কর্মঠ হওয়া থেকে বিরত রাখছে। আপনি যদি ১ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রেখে গ্রামে গিয়ে বসবাস করেন- সেক্ষেত্রে মাসে আপনি ১ লক্ষ টাকা করে সুদ পাবেন। গ্রামের বাড়ীতে যদি ঘরে বসে কোন কাজ না করে ১ লক্ষ টাকা আয় হয়- তাহলে তো আপনি শুয়ে-বসে আর তরল চিন্তা করেই জীবন পার করে দেবেন। সংগে করবেন রাজনীতি। নেতা হবেন। বন্ধুক কিনবেন। সমাজের বাহাদুর হবেন। দেশের বারোটা বাজুক- আপনার কি?


যোগাযোগ ব্যবস্থা।
অর্থনীতির সবচে অগ্রাধিকার খাত হতে হবে- যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্ভর। ঢাকা থেকে চিটাগাং যেতে পোনে তিনশত কিলোমিটার দূরত্বে পৌছতে সময় লাগে ১০ ঘন্টা। তার মানে কোটি মানুষের কর্মঘন্টাগুলি নষ্ঠ হয়ে যাক- এতে কার কি এসে যায়? অথচ এই দূরত্বটুকু ২ ঘন্টারও না।


ফোন, ইন্টারনেট ও ডাক যোগাযোগ।
সেদিনও বাংলাদেশে ১ মিনিট মোবাইল কল করতে খরচ হতো ৭ টাকা। এখন যদিও তা ১ টাকার নীচে কিন্তু এটাও অনেক বেশী। বাংলাদেশ অত্যন্ত ছোট একটা ভুখন্ড। ‘ম্যান টু ম্যান’ যোগাযোগ ব্যবস্থা অতি সহজ হতে হবে যদি অর্থনীতিকে ত্বরিত করতে হয়।


আমেরিকার মতো অতি বিশাল দেশে মাত্র ১৫ ডলারেও সারামাস আনলিমিটেড কথা বলা যায়, ফ্রি টেক্সট করা যায়, ইন্টরনেট ব্যবহার করা যায়। সে হিসাবে বাংলাদেশে আনলিমিটেড মোবাইল এর মাসিক বিল সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, ফোর-জি এলটিই আনলিমিটেড স্পীড, ৫ জিবি পর্যন্ত ৩০০ টাকার মধ্যে রাখতে হবে; এসএমএস সম্পূর্ণ ফ্রি করে দিতে হবে। এবং টিএন্ডটি বা ল্যান্ড ফোন সার্ভিস বার্ষিক ১২০০ টাকা লাইন রেন্ট এবং সম্পূর্ণ ফ্রি কল এর ব্যবস্থা করতে হবে। অবৈধ ভিওআইপি বন্ধ করতে ভিওআইপির রেট বর্তমান ৩ সেন্ট থেকে কমিয়ে হাফ সেন্ট এ নিয়ে আসতে হবে। আপনি যদি ৮০০ টাকায় হাইস্পীড ইন্টারনেটসহ, আনলিমিটেড এসএমএস ও কথা বলতে পারেন- আপনার নিজের কাজের গতি বেড়ে যাবে কয়েক হাজার গুন। এই সামান্য একটা কাজে দেখা যাবে বাংলাদেশে কোটি কোটি আউটসোর্সিং ওয়ার্কার ছেলে-মেয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশের রিমোটে বসে লাখ লাখ ছেলে সিলিকন ভ্যালীর কাজ ডেলিভারী দিতে পারবে।


আমেরিকানরা অনলাইনে শপিং করে অভ্যস্ত। ছোট-খাটো কেনা-কাটা অনলাইনেই সবচে সুন্দর। আমেরিকানরা অনলাইন শপিং এর জন্য সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ‘ই-বে’ এবং ‘আমাজন’ এর উপর। এবং ওখানে কোন কিছু কিনতে গেলে আপনি দেখতে পাবেন- যেটা বাইরে রাস্তার উপরের গ্রোসারীতে ১৫ ডলার মুল্য রয়েছে- ঠিক সেই আইটেমটিই অনলাইনে চায়নিজ সাপ্লায়াররা আপনার ঘরে পৌছে দিচ্ছে মাত্র ১০ ডলারে; শিপিং কষ্ট ইনক্লুটেড।


বিষয়টা ভেবে দেখেছেন?
আপনি ঘরে বসে একটা স্কিন প্রটেকটার পাচ্ছেন মাত্র ১০ ডলারে যেটার বাজারে মূল্য ১৫ ডলার। প্রডাক্টটা আসবে চায়না থেকে। শিপিং কষ্ট এই ১০ ডলারের মধ্যেই।


হ্যাঁ। চায়নিজরা দেশপ্রেমী। চায়নিজরা ব্যবসায়ী। চায়নিজরা বুদ্ধিমানও।
আর সবচে বড় কথা হলো, চাইনিজ গভর্ণমেন্ট এর রয়েছে তার ১৩০ কোটি মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট। ব্যবসা দিয়ে টিকিয়ে রাখার কমিটমেন্ট। চায়না থেকে আমেরিকায় একটা ছোট্ট আইটেম শিপিং কষ্ট হাফ ডলারেরও নীচে- এমনকি যেটাতে ‘ট্রাকিং নাম্বার’ও দেয়া থাকে এবং সেই ট্রাকিং এর এপিআই সংযুক্ত রয়েছে ইউনাইটেড ষ্টেটস পোষ্টাল সার্ভিস এর সংগে।


অাপনি ভাবেন, প্রতিদিন কত লাখ লাখ প্রোডাক্ট চায়না থেকে আমেরিকায় ঢুকছে।


এবার আপনি বাংলাদেশ থেকে একটা ক্ষুদ্র কিছু আমেরিকায় পোষ্ট করতে যান- গিয়ে দেখে আসুন ‘কত ধানে কত চাল’!
দিক না বাংলাদেশ সরকার একটা টি-শার্ট আমেরিকায় পার্সেল করার সুযোগ ১ ডলারে। দেখেন কত কোটি কোটি পিস দেশে তৈরী টি-শার্ট আমেরিকা-ইওরোপে এক্সপোর্ট হয় প্রতি বছর তাও খুচরায়। কত লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে আয় রোজগারের সুযোগ পায় হালাল পথে।


বাংলাদেশ সরকার যদি শুধুমাত্র পোষ্টাল সার্ভসটাকেও আধুনিক, যুযোপযোগী করে দিতে পারতো- তবুও দেশের বেকার যুবকদের একটা গতি হতো।


আমি এরকম আরও হাজারটা ওয়ে আউট করে দিতে পারি- যা দিয়ে বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা ‘ইন্টারন্যাশনাল’ বিজনেস করে ছেলেরা মাসে লাখ টাকারও বেশী নেট আয় করতে পারবে।


কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সেগুলি কি বুঝে? বা বোঝার মতো দরদ কি রয়েছে?


একজন ছিল সাইফুর রহমান আর অন্যজন আবুল মাল। এরা নাকি মহা জ্ঞানী, মহা শিক্ষিত। বিশাল বিশাল ডিগ্রী নেয়া রয়েছে এদের। গরু যেমন শুধুমাত্র ঘাস খাওয়ার বুদ্ধিটা খুব ভালো রপ্ত করতে পারে তদ্রুপ এইসব অর্থমন্ত্রীরাও ঘাস খাওয়া গরুর মতোই বুদ্ধিমান। এরা বাইরে লেখা পড়াই শুধু শিখেছে- আশে পাশের জগৎটাও দেখার যোগ্যতা ওদের হয়নি। হাসিনা খালেদারা তো অর্থনীতির ‘অ’টুকু বুঝে না। তাদের এসব মাল অর্থমন্ত্রীরা যা করে তাতেই তারা হ্যা হ্যা করে যায়।


এই কথিত ‘মাল’গুলি আমেরিকায় এসে কি শিখে- অামার মাথায় তা ঢুকে না!


বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে দেয়া রয়েছে গুটি কয়েক ব্যাংক, লিজিং আর মোবাইল কোম্পানীর হাতে। আপনি নিজে কোন ব্যবসাই শুরু করতে পারবেন না ওদেশে। ব্যাংক ছাড়া ক্রেডিট কার্ড হয় না। ওয়েষ্টার্ণ ইউনিয়নও ব্যাংকেরই সম্পত্তি। এসএ পরিবহন বা সুন্দরবন পরিবহন যে ‘টাকা লেন-দেন’ করতো- সেটাও না কি অবৈধ। আপনি সাধারণ মানুষ- আপনার কিছু করার দরকার নেই। সব তো ব্যাংগুলিই করবে।


আর ১৬ কোটি ‘প্রাণী’ না খেয়ে মরুক। তাদের সৎ ও সঠিক শিক্ষারও দরকার নেই। বড়লোকের সন্তানেরা বিদেশ গিয়ে পড়ে আসুক। আপনি কে?


আমেরিকায় (এবং বর্তমান বিশ্বের উন্নত সবগুলি দেশেই) ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে ব্যাংক ১টি পয়সাও ইন্টারেষ্ট দেয় না। ইউএস গভর্ণমেন্ট কোন অবস্থাতেই ‘টাকা’ কে অলস পরে থাকতে দেবে না।


এবং এখানেই অর্থনীতির আসল সূত্র।


টাকা-কে সবসময় সচল রাখতে হবে।
টাকা-কে বসিয়ে রাখা যাবে না।


টাকা ‘অচল’ থাকা মানে- আপনি অচল হয়ে থাকা।


অচল টাকা যখন আপনাকে কোন খাবার দেবে না- ঠিক তখনই আপনি বাধ্য হয়ে আপনার গচ্ছিত টাকাগুলি কে ব্যবহার করে আয়ের সন্ধান করবেন। অর্থনীতি সচল হবে, চাঙ্গা হবে।


আর, সরকারের একমাত্র দায়িত্বতো আপনাকে শুধু সহযোগীতা করা- আপনার টাকার পাহাড়া দেয়া।


কিন্তু বাংলাদেশ সরকার নিজের আয়ের ধান্ধায় ব্যস্ত।


এরা টাকাকে কতটা ‘সচল’ রাখে তার একটা ছোট উদাহরণ দিই।
নিউ ইয়র্ক ষ্টেটে বসবাসকারী কোন মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না। সে যে-ই হোক। বৈধ না অবৈধ তাতে কিছুই আসে যায় না। আপনি মানুষ- এটাই আপনার পরিচয়।


এই চিকিৎসাটা তাহলে কিভাবে হবে?
এবং সরকার টাকাটাই বা আপনাকে কিভাবে দেবে?


নিউ ইয়র্ক ষ্টেট প্রত্যেককে একটা করে বেনিফিট কার্ড প্রদান করে। এরপর রয়েছে বেশ কয়েকটা হেলথ ইন্সুরেন্স কোম্পানী। এই ইন্সুরেন্স কোম্পানীগুলি সকলকে ডেকে ডেকে ইন্সুরেন্স সেবা নিতে বলে। আপনার বার্ষিক আয়ের উপর নির্ভর করে আপনার ইন্সুরেন্স এর প্রিমিয়াম নির্ধারণ হবে। আপনার পরিবারের বার্ষিক আয় যদি ২৭ হাজার ডলারের নীচে হয় তাহলে আপনার পুরো পরিবারের সকলেই ‘ফ্রি হেলথ ইন্সুরেন্স’ পাবে।


ইন্সুরেন্স কোম্পানী আপনাকে একটা কার্ড দেবে।
আপনার জন্য একজন নির্দিষ্ট ‘পিসিপি’ এপয়েন্ট করা থাকবে। আপনি তার মাধ্যমে আপনার যে-কোন চিকিৎসা এবং চিকিৎসা পরামর্শ পাবেন। এরপর আপনার যাবতীয় চিকিৎসা, টেষ্ট, ওষুধ সবই আপনি শুধুমাত্র ঐ কার্ডটি দেখিয়েই নিতে পারবেন। আপনাকে কোন টাকা পেমেন্ট করতে হবে না। আপনি হসপিটালে ভর্তি হলেও সেই কার্ডটিই শুধু আপনাকে দেখাতে হবে।


এরপর যত বিল আসবে- সেই ইন্সুরেন্স কোম্পানীই বিল প্রদান করে দেবে। যদি ঐ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর টাকায় টান পরে যায়- তাহলে সরকার ঐ কোম্পানীকে আরও বেশী ডোনেট করবে- চিকিৎসা সেবা সচল রাখার জন্য।


সরকার কিন্তু সরাসরি আপনাকে কোন টাকা দিচ্ছে না।
এতে কি হচ্ছে? টাকাগুলি অনেক বেশী হাত-বদল হচ্ছে। টাকা সচল থাকছে।
টাকা যত বেশী সচল- অর্থনীতি তত বেশী সমৃদ্ধ এবং বড়।


বাংলাদেশে এয়ার টিকেটিং ব্যবসা যারা করেন- তাদের না কি ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা জামানত দিয়ে রাখতে হয়। গ্রামীন ফোনের ‘টক-টাইম’ ডিষ্ট্রিবিউটরদের কোটি কোটি টাকা জামানত রেখে ব্যবসায় নামতে হয়।


আমেরিকায় চলে আসুন।
শুধু বলুন, আমি ব্যবসা করবো। পরদিনই শুরু করে দিন।
মাস শেষে আপনার কাছে আপনার ব্যবহৃত টাকার বিল চলে আসবে- আপনি অনটাইম পেমেন্ট করবেন। ব্যস। হয়ে গেল।


হবে না?
তাহলে দেশের সরকারের কাজটা কি! শুধু জনগণের ট্যাক্স খাওয়া?


বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন পথে ভারত যায়।
বেনাপোল বর্ডারে গিয়ে দেখবেন- বাংলাদেশ পারে কোন ‘ডলার কেনা-বেচা’র ব্যবসা নেই।
অথচ, ওপাড়ে হরিদাশপুর যান- দেখবেন শত শত দোকানদার রয়েছে, তারা ডলার কেনা-বেচা করছে। হাজার হাজার ছেলেদের আয় রোজগার হচ্ছে।


কিন্তু বাংলাদেশ সরকার আপনাকে ডলার কেনা-বেচার পার্মিশন দেবে না।


পার্মিশন পেলে আপনি যে ব্যবসা করতে পারবেন- দু’পয়সা আয় করবেন। তাহলে তো আপনার বুদ্ধি খুলে যাবে।


আপনি বুদ্ধিমান হলে হাসিনা-খালেদারা কিভাবে আপনার মাথায় কাঠাল ভেংগে খাবে?


আপনি বাংলাদেশ থেকে বিদেশ একটি টাকাও রেমিটেন্স করতে পারবেন না। টিউশন ফি ছাড়া কোন টাকাই পাঠাতে পারবেন না।


কিন্তু যতখুশী টাকা দেশে আনতে পারবেন।
মানেটা বুঝেছেন?
বাংলাদেশ সরকারকে যতখুশী টাকা দিন- তিনি নিবেন।
কিন্তু তিনি আপনাকে কোন টাকা ফেরত দেবে না। কারণ তিনি বাংলাদেশ।


বাংলাদেশের সংবিধানকে লাথি মারার সময় এসেছে।
আপনি যদি আপনার মানুষ্য অধিকার পেতে চান এবং একটা আধুনিক দেশ দেখতে চান- তাহলে ‘বাংলাদেশ সংবিধান’ আগুনে পুড়িয়ে ফেলুন।


তারপর আসুন নতুন করে আমরা একটু জনগণমুখী সংবিধান তৈরী করি।


এই সংবিধানের আওতায় ৩২ কোটি হাত ১৬ কোটি মুখের খাবার জোগাড় করতে ব্যর্থ।
এই সংবিধান ১৬ কোটি মাথা-কে ১৬ কোটি গরু বানিয়ে রেখেছে।


আপনার নিজের স্বার্থ যদি আপনি নিজে না বুঝেন- কেউ আপনাকে ‘খাইয়ে’ দিয়ে যাবে না।


অতটা সময় কারো নাই।
পৃথিবী অনেক এগিয়ে গিয়েছে। অনেক।


আপনি এখন মালদিভস, ভুটানের চেয়েও পেছনে!


পেছনেই যেতে থাকবেন।

পঠিত : ৯৬৪ বার

মন্তব্য: ০