Alapon

আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রন। (বই রিভিউ)

প্রথমে নাম দেখে ভেবেছিলাম হবে হয়তো কোনো রোমান্টিক উপন্যাস। কিন্তু পরে দেখলাম ১৩ টা গল্প নিয়ে এই বই।


*মিস মানোয়ারা
শারমিনের রোজ বিকেলেই গা ম্যাজম্যাজ করে। সে তার স্বামী ইমনকে এই ব্যাপারে বলেছে। শারমিনের মেজো খালা রুবির কথা মতন শারমিন সব করে। এক কথায় রুবি খালা যা করে,শারমিনও তাই করতে চায়। রুবি খালা প্রতি সপ্তাহে ম্যাসাজ নেন।মিস মনোয়ারা নামের এক মহিলা বাসায় এসে ম্যাসাজ দিয়ে যান। শারমিনও মিস মনোয়ারাকে দিয়েই এই কাজ করাতে চায়। এর কদিন পরই মিস মনোয়ারাকে নিয়ে সংবাদ পত্রে নিউজ আসে। অবশেষে কী হয়? কী রহস্য লুকোনো থাকে মিস মনোয়ারার মধ্যে?


*কাকারু
আশরাফুদ্দিন তার মেয়ে সুমির জন্মদিনে কাক উপহার দেবে। সে কাটাবনে পাখির দোকানে কাক কিনতে গিয়েছে।কিন্তু কোনো পাখির দোকানেই কাক বিক্রি করেনা।তাহলে আশরাফুদ্দিন কি মেয়ের ইচ্ছা পুরণ করতে পেরেছিলেন শেষপর্যন্ত?


*পঙ্গু হামিদ
পঙ্গু হামিদের বয়স ষাটের কাছাকাছি। সে হাটতে চলতে পারেনা,হুইল চেয়ার নিয়ে ঘোরাফেরা করে। অনেকেই জানে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধে সে পা হারিয়েছে। কিন্তু এটাই কি আসল সত্য?


*ফোর্টি নাইন
যে কোনো জীবই বয়স বাড়ার সাথে সাথে বড় হয়।কিন্তু আসাদুজ্জামান চৌধুরী দিন দিন ছোট হচ্ছেন।তিনি এসেছেন অর্থপেডিক সার্জন মাসুম রহমানের কাছে। এ কেমন রোগ? কী কারণই বা থাকতে পারে এর পেছনে?


*সগিরন বুয়া
সগিরন তিন নম্বর রোডের একটা ফ্ল্যাটে কাজ পেয়েছে। বাচ্চা রাখার কাজ। সগিরন বুয়া বাচ্চাটাকে খুব আদর করে,তার স্বামীর কাছে খুব গল্প করে বাচ্চাটার বিষয়ে। সাধারণ এই গল্পেই আছে অসাধারণ এক রহস্য।


*নয়া রিকশা
জাহেদা তার ছেলের নাম রেখেছে জাহেদুর রহমান।ছেলের বাবা কুদ্দুস ভাড়ায় রিকশা চালায়। তার খুব ইচ্ছা নিজের একটা রিকশার।পাশের বাড়ির রিকশাওয়ালা ছুলেমানের ছেলে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে বলে ছুলেমানকে নতুন রিকশা দিয়েছে পত্রিকাওয়ালারা। জাহেদুরও পেরেছিলো তার বাবাকে নতুন রিকশার মালিক বানাতে।তবে জিপিএ ফাইভ না পেয়েই।কীভাবে পেরেছিলো সে?


*আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ
মাসের প্রথম শুক্রবার আফতাব সাহেব নিজে বাজার করেন।মীরা সেদিন তার বাবার সাথে বাজারে গেল,অনেক ধরনের মাছ কিনে আনলো।
মীরা আজকে শওকতকে খেতে বলেছে। এদিকে সুজিতের সাথে বিয়ের কথা চলছে মীরার। মীরার মা এই কথা শুনে বলেছে,শওকতকে না করে দিতে। দুপুরে নিমন্ত্রণ এর কী হবে তাহলে!


*আনোভা
মকবুল আমেরিকায় টেক্সি চালায়। তার সাথে একবার এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিলো।একবার এক মেয়েকে নিয়ে তার মা উঠেছিলো তার টেক্সিতে কিন্তু মাঝ রাস্তায় তার মা উধাও হয়ে গিয়েছিলো।কী এক অদ্ভুতুড়ে গল্প!


*তিনি
ভদ্রলোকের বয়স ষাটের কাছাকাছি। তিনি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন।কিছু মনে করতে পারছেন না।পাঞ্জাবীর পকেটে হাত দিয়ে তিনি দেখলেন একটা চিরকুটে লেখা রসমালাই। তবুও তার কিছু মনে পরছে না।
কী তার পরিচয়?


*আলাউদ্দিনের ফাঁসি
নুরুল হক সাহেব ডিস্ট্রিক্ট দায়রা জজ।
তার এক কলমের খোঁচাতেই হয়ে যেতে পারে কোনো আসামীর ফাঁসি।কী হবে আলাউদ্দিনের?
সে কি সত্যিই নির্দোষ?


*ভালোবাসা
সুইটি বিয়ের পর স্বামীর সাথে ঢাকা এসেছে। তার স্বামী সারাদিন শুয়ে বসে কাটায়। সুইটি জিজ্ঞেস করলে আবুল কাশেম শুধু বলে ব্যাবসা করে। সুইটির স্বামী খুবই খারাপ এক কাজের সাথে যুক্ত।এই কথা জানার পর সুইটির স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসা কি থাকবে?


*টিকটিকি
জহিরের স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তার স্ত্রীর আত্মহত্যার বিষয়ে। তার স্ত্রী কি সত্যিই আত্মহত্যা করেছিলো?


*ভূত
ইসলামুদ্দিন সুটকেসে কিছু কাপড়চোপড়, টুথপেস্ট-টুথব্রাশ আর সাবান নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি ধুপখালির দিকে রওনা দিলেন।
তবে তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখলেন,দশ বারো বছরের একটি ছেলে তার ঘরদোর সব পরিষ্কার করে রেখেছে। তবে এই ছেলে কখনো কিছু খায়না,লেখা পড়া করেনা,আবার আগুন দেখলে ভয় পায়।


পাঠ প্রতিক্রিয়া : প্রত্যেকটা গল্প কী অদ্ভুত ভাবে শেষ হয়ে গেল,তবে রয়ে গেল মুগ্ধতার রেশ। মাত্র কয়েকটা পৃষ্ঠায় কী সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রত্যেকটা গল্প। তবে 'ফোর্টি নাইন' গল্পটাতে আমি 'সায়েন্স ফিকশন গল্প সমগ্র' থেকে পড়া 'তাহারা' গল্পটার কেমন যেন মিল পেয়েছি। মনে হয় যেন একই ছাঁচে গড়া শুধু রংটা আলাদা। প্রত্যেকটা গল্পই খুব সুন্দর তবে 'নয়া রিকশা' 'পঙ্গু হামিদ' দুইটা গল্পের শেষ অসম্ভব ভালো লেগেছে আমার।

পঠিত : ১১৮১ বার

মন্তব্য: ০