Alapon

চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে

গত রোববার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানে জিরো পয়েন্টে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) 'চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে' শীর্ষক দেশব্যাপী সচেতনতা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।
সেসময় র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন: ‘মাদকের বিরুদ্ধে জাতিগত যুদ্ধ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছি। এবারও আশা করি এর একটা ভালো ফলাফল পাব, মানুষ বিজয়ী হবে। মাদকের খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে ডিলার সে যেই হোক, তাকে এ পেশা ছাড়তে হবে ‘

কিন্তু মাদকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে প্রশ্নের জবাবে বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন: ওই সব হাত থেকে আইনের হাত অনেক বড়। দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হলে যে কোন অপশক্তি পরাজিত করার ক্ষমতা আমাদের আছে।

দেশে মাদক আর ইয়াবার নাম নিলেই যে নামটি মানুষের মুখে চলে আসে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান বদি। গণমাধ্যমে তিনি ইয়াবা সম্রাট নামেই বেশি পরিচিত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সম্প্রতি দেশের মাদক গডফাদারদের একটি তালিকা প্রণয়ন করে। দেশজুড়ে যার সংখ্যা ১৪১ জন। এতে ক্ষমতাধর অনেক রাজনীতিকের ভয়ংকর কুৎসিত চেহারা বেরিয়ে আসে। 

সেখানে বলা হয়েছে, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি দেশের ইয়াবা জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী। তার ইশারার বাইরে কিছুই হয় না। দেশের ইয়াবা আগ্রাসন বন্ধের জন্য তার ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।’

তালিকায় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি বলা হয়েছে। অথচ সেই বদি আজ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে- ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’।

বিভিন্ন সংস্থার একের পর এক তৈরি করা তালিকায় নাম উঠলেও শীর্ষ মাদক কারবারিরা থেকে গেছে আড়ালেই। ধরা পড়ছে শুধু মাদকসেবী ও খুচরা বিক্রেতারা। এখন দেশে মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চলছে। গত ১৭ দিনের অভিযানে সহস্রাধিক গ্রেপ্তার ও ১৮ জন নিহত হয়েছে। অথচ অদৃশ্য কারণে এই তালিকায় নেই শীর্ষ কোনো ইয়াবা বা ফেনসিডিল কারবারির নাম!

গত ৩ মে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা র‌্যাবকে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতোই মাদক নির্মূলে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এরপর ৪ মে থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে র‌্যাব। ওই দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত ১৭ দিনে সারা দেশে র‌্যাবের ৪৯৬টি মাদকবিরোধী অভিযানে ‘গুলিবিনিময়ে’ ১৪ মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ৫২৩ জন। ২০ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই হাজার ২৮৭ জন মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশও। তাদের অভিযানে দুই দিনে ৫৫৩ জন মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হয়েছে। নিহত হয়েছে চারজন। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে ইয়াবার গডফাদাররা। 

ক্ষমতার কাছে থাকায় ইয়াবা ব্যবসার বদি ও তার লোকজন সব সময়ই থাকে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বার বার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিজিবি, কোস্টগার্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নাম এলেও তারা প্রকাশ্যেই ইয়াবার রাজ্যে দাপিয়ে বেড়ান। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এতটাই প্রভাবশালী যে, জেলা আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে বিষয়টি তোলার কেউ সাহস করেন না।

খোদ রাজধানীতেই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর পুত্র রনি চৌধুরীর রয়েছে অন্তত তিনটি ইয়াবা তৈরীর কারখানা। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এক মন্ত্রীর ভাই নাঈম ও ভাগ্নে সারোয়ার এবং রনি চৌধুরী মিলে ইয়াবা কারখানা বসিয়েছেন রাজধানীর গুলশানে। গুলশান-২ এর ৪৩ নম্বর সড়কে ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ‘সিসা হাউজ’।

তাই দেখা যাক এবার মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষিত যুদ্ধটা কোথায় গিয়ে শেষ হয়। যদি আগের মতই চুনোপুঁটি মেরে রাঘববোয়ালদের রাস্তা পরিস্কার করার উদ্দেশ্য থাকে তাতেও সাক্ষী হয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

পঠিত : ১২২৭ বার

মন্তব্য: ০