Alapon

নারীদের নামাজের সুযোগ নেই বাংলাদেশের মসজিদে!

৯৫ শতাংশ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশেই নেই মসজিদে নারীদের নামাজের সুযোগ বা স্থান! শুনতে অবাক লাগলেও এটিই সত্যি। অথচ মসজিদে প্রবেশ কিংবা নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ইসলাম নারী পুরুষকে আলাদা করেনি। মসজিদে গিয়ে নারীদের নামাজ আদায়ের প্রসঙ্গ এলেই, একশ্রেণির তথাকথিত আলেম ফতোয়া দেন যে এটা ঠিক নয়। কিন্তু এটি আসলে কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা আলোচনার দাবি রাখে।
হাদীস কি বলছে?
  • রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহর বান্দিদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। (বোখারি : ৯০০)। 
  • রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যদি তোমাদের কারও স্ত্রী মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায় তবে তাদের নিষেধ করো না।’ (মুসলিম : ১০১৬)। 
  • রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘তোমাদের নারীদেরকে রাতের বেলায় মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেবে।’ (বোখারি : ৮৯৯)।

হাদীসে নিষেধ নাকি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে?
> রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের নারীদের মসজিদে যাতায়াতে বাধা দিও না। তবে তাদের ঘরই তাদের (নামাজের জন্য) উত্তম স্থান।’ (আবু দাউদ : ৫৬৭)।
> উম্মুল মুমিনিন হজরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা করেন যে, ‘নারীর জন্য নামাজ পড়ার সর্বোত্তম স্থান হলো তাদের বাড়ির গোপন প্রকোষ্ঠ।’ (ইবনে খুজাইমা : ১৬৮৪)।
> আবদুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল আনসারী (রা.) তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদির স্ত্রী রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয় আমি আপনার সঙ্গে নামাজ পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সঙ্গে নামাজ পড়তে পছন্দ করো। অথচ তোমার একান্ত রুমে নামাজ পড়া উত্তম তোমার বসবাসের গৃহে নামাজ পড়ার চেয়ে। তোমার বসবাসের গৃহে নামাজ পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামাজ পড়ার চেয়ে। তোমার বাড়িতে নামাজ পড়া উত্তম তোমার মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে। তোমার মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়া উত্তম আমার মসজিদে (মসজিদে নববিতে) নামাজ পড়ার চেয়ে।’ (ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং-১৬৮৯)।

উপরোক্ত হাদীস থেকে আমরা কি বুঝতে পারছি? এক কথায় বললে এভাবে বলা যায় যে, নারীরা মসজিদে নামাজ পড়তে চাইলে তাদের বাধা দেয়া যাবে না। তবে নামাজের জন্য নারীদের জন্য গৃহই উত্তম।

বাধ্য হলে নারীরা যাবে কোথায়?
বাংলাদেশের নারীরা বাড়িতেই নামাজ পড়ে। কিন্তু যখন ঘরের বাইরে কোন কাজে বের হতে হয় তখন তাদের করণীয় কি? বাড়ির বাইরে গেলে তো তাদের নামাজ মাফ করে দেয়া হয়নি। কিংবা এমন নয় যে নারীরা বাড়ির বাইরে যেতেই পারবে না! যদি তাই হয় তাহলে নারীরা নামাজ পড়বে কোথায়? সেজন্য প্রতিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় মসজিদগুলোতে অন্তত নারীদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। যেমন: বড় মার্কেট বা বাজার, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, লঞ্চঘাট, হাসপাতাল, বড় সরকারি প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানা, পর্যটনকেন্দ্র ইত্যাদি। এসব স্থানে আমাদের দেশে পুরুষের পাশাপাশি প্রচুর নারীও চলাচল করে, জীবিকা নির্বাহ করে। চলাচল কিংবা জীবিকা নির্বাহের ফাঁকে নামাজের ওয়াক্ত হলে পুরুষ ঠিকই নামাজের জায়গা পাচ্ছে। সুযোগের অভাবে প্রতিদিন নামাজ কাযা হচ্ছে লাখো নারীর। এসব জনবহুল স্থানে যদি মসজিদগুলোতে নারীদের নামাজের বিশেষ কোন ব্যবস্থা নাই থাকে, তবে নারীরা নামাজের জন্য যাবে কোথায়? সুযোগের অভাবে কারো নামাজ কাযা হয়ে গেলে তার দায় দায়িত্ব কি পুরো জাতির উপরে পড়বে না?

শুধু বাংলাদেশের মসজিদেই কেন জায়গা নেই?
নামাজে অংশগ্রহণের জন্য নারীরা মসজিদে যাবে কি যাবে না, তাদের নামাজের সুযোগ থাকবে কি থাকবে না এ নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই ঠেলাঠেলি চাপাচাপি পরিলক্ষিত হয়। অথচ পাশ্ববর্তী হিন্দু প্রধান রাষ্ট্র ভারতেও বড় বড় মসজিদগুলোতে নারীদের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। মুসলমানদের প্রাণের নগরী মক্কাতুল মুকাররামা ও মদীনাতুল মুনাওয়ারার প্রত্যেকটি মসজিদে নারীদের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। কুয়েত, কাতার, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, মিশর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মরক্কো এসব দেশের কোথাও মুসলমান হিসেবে নারীদের আলাদা করে দেখা হয়না। সবদেশেই অন্তত গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলোতে নারীদের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে মসজিদ নেই শুধু নামাজের স্থান রয়েছে, সেখানেও পুরুষের পাশাপাশি নারীদের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। সমস্যা শুধুই বাংলাদেশে। এখানে মুসলিম নারীরা যেন অদ্ভূত জাতের কোন প্রাণী। মসজিদে এদের নামাজ তো দূরের কথা, দাঁড়াবারও স্থান নেই!

করণীয় কি?
নারীদের জামায়াতের সঙ্গে নামাজ পড়াটা জরুরি নয়। কিন্তু যথাসময়ে নামাজ পড়াটা তো জরুরি। তাই যেখানেই মসজিদ থাকবে নারীরা সেখানেই যথাসময়ে নামাজ পড়ে নেবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা পোশাক ও পর্দার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক হবেন। 

আজকাল বিভিন্ন কাজে মহিলারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন সময়ে-অসময়ে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনেও। তাদের নামাজের প্রতি যত্নশীল হতে অভ্যস্থ করাতে হবে। এটা তখনই সম্ভব যখন গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলোতে নারীদের নামাজের সুব্যবস্থা থাকবে। যারা বাইরে নামাজ না পড়ে গিবত-পরচর্চা করে সময় কাটান তাদের একটা সময় এমন আসবে যারা নামাজ পড়ে তাদের দেখে চক্ষুলজ্জায় হলেও মসজিদে নামাজের জন্য যেতে মন চাইবে। এতে করে দেশের নারীসমাজ আদর্শ মা হিসেবে গড়ে উঠবে। আর একজন আদর্শ মা গড়ে দিতে পারেন একটি আদর্শ জাতি। 

পরিশেষে বলতে চাই, নারীরা অবশ্যই বাড়িতে নামাজ আদায় করবেন। কিন্তু তারা যদি শালীনভাবে পর্দার সাথে মসজিদে এসে নামাজ পড়তে চান, তবে তাদের বাধা দেয়া যাবে না। বরং তাদের নির্বিঘ্নে নিরাপত্তা ও বিশেষ সুবিধার সাথে নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা করে দেয়া সমাজের দায়িত্বশীলদের কর্তব্য। এই কর্তব্যের অবহেলাকারীরা অবশ্যই পরকালে জিজ্ঞাসিত হবেন। মসজিদে জুময়ার খুতবা, ঈদের খুতবা শুনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও হিদায়াতের পথে চলতে আগ্রহী হবেন। অন্তত কাজের প্রয়োজনে যেসব নারী বাড়ি থেকে বের হয়েছেন, তাদের নামাজের ব্যবস্থা করে দেয়াটা আমাদের সবারই দায়িত্ব। 

শাইখ কামাল উদ্দিন জাফরীর এই ৩ মিনিটের ভিডিওটি দেখুন, বুঝার চেষ্টা করুন-

পঠিত : ১১১৫ বার

মন্তব্য: ০