Alapon

অনুগল্প: নামায।

আপু হুঁশ পেয়েই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।
আর বলতে থাকে আহারে আমি নামাজ পড়ব তো!!
ওযু করে জায়নামাজে বসে আবার ওখানেই পড়ে থাকে।কেউ উঠাতে গেলে রেগে যায়। নামাজ না পড়তে পারলে বা কোন কারণে মিস হয়ে গেলে আপু এভাবেই অঝোরে কাঁদতে থাকে। আপুর এই কান্নাকাটি দেখে নামাজের প্রতি আমার যতটুকু অলসতা ছিল, তা নিমেষেই দুর হয়ে গেছে। নামাজকে কতটুকু ভালবাসলে হুঁশ হওয়ার সাথে সাথে কেউ এরকম আচরণ করতে পারে তা হয়তো সবার জন্যই অনুমেয়। 
আমার জন্য আর ভাগ্নি আফিফার জন্য তার যত চিন্তা!!গতকাল বলে যে তোমাদের এত দুরে পড়তে দিয়ে ভুল হইছে। কিছু খাওনা এটাও আমার চিন্তা! 
আমি অনেক খেলেও আপুর দৃষ্টিতে সেটাকে খাওয়া বলেনা। সেটাকে নাকি উপোস থাকা বলা হয়। এত বলি যে আপু আমি ঠিক আছি এবং ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করি, কিন্ত কে শোনে কার কথা।

একদিন আপুকে নিয়ে শহর থেকে বাসায় ফিরছিলাম। পথিমধ্যে মাগরিবের আজান হলো। আমরা তখন ট্রলারে নদীপথ হয়ে আসছিলাম। কারন রাস্তা খুব খারাপ ছিল। তো আজান এমন একটা সময়ে হলো যে ট্রলার ঘাটে পৌছুতে পৌছুতে নামাজের সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। আমি নিজেও ভাবছিলাম যে কিভাবে নামাজ পড়া যায়
ভাগ্য ভাল তখন আমার অযু ছিল। 
ট্রলারভর্তি লোকজনের মাঝে ইশারায় নামাজ পড়বো কি পড়বোনা সেটা ভেবে ভেবে লজ্জা পাচ্ছিলাম। ভাবলাম কেউ যদি আবার মনে করে যে, এহ! বড় নামাজী হইছে, ইশারায় নামাজ পড়ে মানুষকে দেখায়। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আমার অপর প্রান্তে মহিলাদের মাঝে বসে থাকা আপুর দিকে চোখ পড়তেই আমার চোখ ছানাবড়া।
আপু অলরেডি ইশারায় নামাজ পড়তে শুরু করে দিয়েছে। স্রষ্টার প্রতি তার এই ভালবাসার দৃশ্যটা দেখে মুহুর্তেই আমার চোখদুটো ছলছল করে অশ্রুতে ভিজে যায়। আমি অনেক জায়গায় গিয়েছি। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে সহ নানান ভাবে সফর করেছি। কিন্ত সফরের সময় কিছু পুরুষদের নামাজ পড়তে দেখলেও নারীদেরকে কখনই নামাজ পড়তে দেখিনি। অথচ নামাজকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে প্রত্যেক মু'মিন নর-নারীর জন্য।

ঠিক তখনই সব ভাবনাকে বিদায় দিয়ে, সব ভয়কে মুছে ফেলে, সব লজ্জাকে চোখ রাঙিয়ে বিশ্বজাহানের একমাত্র অধিপতির গোলামীর জন্য প্রস্ততি নেই, আর মনে মনে অশ্রুভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকি...
ইন্না ছলাতি, ওয়া নুসুকী, ওয়া মাহইয়াইয়া, ওয়া মামাতি

পঠিত : ৫৯০ বার

মন্তব্য: ০