Alapon

আমরা এগিয়ে যাচ্ছি কি? ঐ দরজাটা বুঝিয়ে দিল একশ বছর পিছিয়ে!!!



খুলনা টু চিলাহাটি ট্রেন।
আমি দর্শনা থেকে নাটোর আসবো, কোন টিকিট নাই! স্টেশন মাষ্টার পাত্তা দিচ্ছিল না! 
কিছু কি করা যায়? বলতেই মাষ্টার সাহেব বললেন দেখছি......
কতক্ষণ কম্পিউটার টিপাটিপি করে বললেন হবে আপনাকে চিলাহাটি পর্যন্ত টিকিট কাটতে হবে। আমি অবাক হয়ে বললাম কেন!
ভাই সময় নষ্ট করেন নাহ, নিলে নেন না নিলে.........
আমি আর ভদ্রলোকের সময় নষ্ট করে তিনগুণ ভাড়া বেশীদিয়ে টিকিট নিলাম!
ট্রেনে উঠে মাথা গরম হয়ে গেল! পওয়ারকার এর সাথে আমার সিট নং! বিকট আওয়াজে বসে থাকাই দুস্কর! আর ভেবে কিছু করার নাই ঘাপটি মেরে বসে থাকা ছাড়া। ট্রেন চলতে শুরু করেছে কিছুক্ষন চলার পর হঠাৎ শব্দ কমে গেল! বাহ্ ভালতো! এইবার শান্তি....
আবার শব্দ বেরেগেল কারন কি?
পাওয়ারকার ও আমাদের বগির মাঝে একটা দরজা আছে সেটা বন্ধ থাকলে শব্দ সহনীয় মাত্রায় আসছে।
সেই বলি....ব্রিটিশ রা ট্রেন বানিয়েছে অথচ এমন একটা বিষয় তাদের মাথায় থাকবেনা তা তো হয়না! যাই হোক ট্রেন চলছে তারমত করে আমার মূল চিন্তা মাঝের ঐ দরজা নিয়ে, কারন যাত্রীদের যাওয়া আসার  জন্য দরজা সব সময় খোলা থাকছে আর সে কারনে শব্দে থাকা যাচ্ছেনা!
এর মধ্যে একজন যাওয়ার সময় দরজাটা বন্ধ করে গেল! আহ্ কি যে শান্তি....কিন্তু শান্তি পাঁচ মিনিটও টিকল না টাই পরা এক ভদ্রলোক আসলেন কিন্তু দরজা বন্ধ করলেন না! উনি হয়তো জানেন-ই না দরজা টা কেন দেওয়া হয়েছে। 
দরজা নিয়ে আমার ভাবনা আরও বেরেগেল! আমি উঠে গিয়ে একবার বন্ধ করে দিলাম, আবার কে যেন খুলে চলে গেল! বড় জ্বালায় পরে গেলাম। 
ভাবছি আমরা বাংলাদেশীরা এমন কেন? চলতে ফিরতে একটু চোখকান খোলা রেখে চললে কি হয়! যে লোকটা বন্ধ দরজা খুলে যাচ্ছেন বা আসছেন তার কি একবার মনেও হচ্ছে না এটা বন্ধ করা দরকার! আজ থেকে প্রায় দের-দুইশ বছর আগে তারা ভেবেছে যাত্রীদের আরামের জন্য একটা দরজা মাঝখানে দিতে হবে, আর আমরা এই আধুনিক সময়ে এসেও এর সঠিক ব্যাবহার টাও করতে জানিনা বা করছিনা! 
আবার কে যেন দরজাটা বন্ধ করলেন। খেয়াল করলাম ইউনিফরম পরা একটা ছেলে হাতে কিছু নাস্তা নিয়ে যাত্রীদের মাঝে বিক্রি করার চেষ্টা করছে। পোশাকে বুঝলাম ছেলেটা ট্রেনের ক্যান্টিন বয়। ছেলেটি আমাদের বগি ছেড়ে যেতে না যেতেই হরমর করে আবার শব্দ বেরেগেল! দেখলাম একদল সাদা পোশাক পরা লোক আমাদের বগিতে ঢুকলেন! কিছুটা রাজনৈতিক ক্যাডারদের মত! উনারা টিকিট চেকার। আমরা টিকিট কেটে ট্রেনে উঠেছি কিনা সেগুলো চেকিং করছেন। 
মনটা খারাপ হয়ে গেল এদের মধ্যে কেউ দরজা টা বন্ধ করলেন না! অন্তত এদের কাছে আমি আসা করেছিলাম এরা হয়তো বিষয় টা বুঝবেন কারন সব সময় না হলেও জীবনের বেশীরভাগ তারা এর মধ্যেই কাটান। 
আমার মাথায় একটা শিশু বুদ্ধি ঢুকলো! আমি গুনতে শুরু করলাম ঘন্টায় কতজন মানুষ এই দরজা দিয়ে যাওয়া আসা করে এর মধ্যে কতজন মানুষ দরজাটার সঠিক ব্যাবহার করেন! 
তখন ভূলে গিয়েছিলাম শব্দের বিরক্তি! লোক গুনায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম। 
এরই মাঝে নাটোর পৌঁছে গেলাম! খুব আসাহত হয়ে একটা জঘন্য ফলাফল নিয়ে ট্রেন থেকে নামলাম!
প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে নব্বই পচাঁনব্বই লোক আসা যাওয়া করলেন এর মধ্যে মাত্র ছয়জন মানুষ দরজা টা যাওয়ার সময় আবার বন্ধ করে গেলেন, এই ছয় জনের মধ্যে একজন ক্যান্টিন বয়! 
এই গল্পটা লেখার পেছনে আমার একটা উদ্দেশ্য আছে তা হল....
আমরা এখনি ভাল একটা বাংলাদেশ আসা করতে পারিনা! যে দেশের মানুষের মধ্যে এখনও নব্বই ভাগেরও বেশী স্বাভাবিক সচেতনার সমস্যায় আছেন সেখানে ভালকিছু আসা করাটা বোকামিই বলবো। সরকার বা সমাজ সেবক রা যতই উন্নয়নের নামে মাথা ঠুকরে বা গলা ফাটিয়ে বলুক না কেন, কোন লাভ হবে না।
জাতি হিসেবে আমরা শুধু পিছিয়ে নাই, প্রতি নিয়ত আরও পিছিয়ে যাচ্ছি!
-রওশন
২৩ মে ২০১৮ইং

(লেখাটি ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ)https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2175762112440231&id=100000193910697

পঠিত : ১৩৬৬ বার

মন্তব্য: ০