তারিখঃ ১১ জুন, ২০১৮, ০৫:১৬
বাংলাদেশের মতো ফুটপাতওয়ালা মধ্যম আয়ের দেশে ফুটপাত ব্যবসা বন্ধ করে দিলে ফুটপাত ব্যবসায়ীরা হয়তো না খেয়ে মরবে । কিন্তু তার চেয়ে বড়ো কথা হলো দেশের ব্যবসা সেক্টরটা অনেকটা স্থবির হয়ে যাবে । যার কারণ হলো এই ফুটপাত ব্যবসায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট একটা জোগান দিয়ে থাকে । তাই বিকল্প কিছু না করে, চাইলেই ফুটপাত ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়াটা সমীচীন হবে না ।
যারা ফুটপাতে ব্যবসা করেন তাদের আসলে তেমন একটা শান্তি নেই । আবার বিক্রির পরিমাণটা বেশি হলেও দিনশেষে তাদের পকেটে খুব একটা টাকা থাকে না । আর এর অবশ্য অনেকগুলো কারণ আছে ।
যথা:
এক.
দলীয় নেতাকর্মী । যে সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, সে সরকারের নেতাকর্মীরা ফুটপাত বেইস ধান্ধা শুরু করে । অনেক ক্ষেত্রে তারা দাপটে ভাব দেখিয়ে রাস্তা দখল করে হলেও ফুটপাত ব্যবসা খুলে দেয় । যেটা গুলিস্তান, নিউমার্কেট, বড্ডা কাঁচাবাজার গেলে যে-ই কারো
সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে । আর এটা এই দখল তৃণমূল থেকে শুরু করে এমপি-মন্ত্রী পর্যন্তও চলে । সরকার দলীয় নেতাকর্মী-এমপি-মন্ত্রীই যখন নাটেরগুরু, সাধারণ মানুষের তখন কী বা করার আছে?
দুই.
ব্যবসায়ী সমিতি । এই ব্যবসায়ী সমিতিগুলো যদিও সরকার দলীয় লোকের ভরপুর তবুও অনেক জায়গায় এর ব্যতিক্রমও আছে । এই সমিতিগুলোও দিনশেষে ফুটপাত ব্যবসায়ীদের থেকে মোটাদাগে একটা সংখ্যা নিজেদের পকেট পুরে ।
তিন.
পুলিশ ! তিন নম্বর পয়েন্ট দেখেই হয়তো অনেকের মনের ভেতর বিভিন্ন নেগেটিভ ধারণ অলরেডি চলে এসেছে । সেটা হয়তো এমন যে এদের কথা কি আর বলা লাগে । দেশটা তো এরাই জোঁকের মতো চুষে খাচ্ছে ।
তবুও আমি কিছু কথা বলি। বাংলাদেশের সব পুলিশ যেমন খারাপ না, ঠিক তেমনই সব পুলিশও আবার ভালো না । এই ভালো না যারা, তারাই ফুটপাত নিয়ে সবচেয়ে বেশি নোংরামির আশ্রয় নিয়ে থাকেন । সেই নোংরামির ধরনটা এমন; জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো বড় উৎসব এলেই কিছু পিটুয়া পুলিশ দিয়ে ফুটপাত উচ্ছেদ করতে লেগে পড়েন । উদ্দেশ্য একটাই, যেকোনোভাবেই উপরি তাদের চাই-ই চাই ।
আবার কোনো মডেল বা সাধারণ থানায় যখন নতুন কোনো ওসি আসেন । প্রথমেই তিনি দেখেন তার পূর্ববর্তী ওসির কী কী সোর্স থেকে উপরি আসতো । তিনিও ঠিক একই পথে হাঁটেন । ফুটপাতও কিন্তু ওসিদের উপরির বড় একটা জোগান দিয়ে থাকে । তাই ওসি সাহেব উনার অধীনস্থ কিছু পুলিশ পাঠিয়ে ফুটপাতের স্পটগুলোতে উনার বার্তা পৌঁছে দেন । এতে কাজ হলে তো হলোই। নচেৎ, সময়-সুযোগ করে একদিন একটা ঝটিকা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দেন । ব্যস, কাজ হো গিয়া । টাকা না এসে যাবে কই ? অবস্থা এমন যে, আমরাও বাঁচি, তোমরাও বাঁচো । তখন ফুটপাত ব্যবসায়ী, ফুটপাত নেতা, পুলিশ কারোই উপচিকীর্ষু মনভাবটা আর থাকে না । যে যার মতো পারে, জনগণকে লুটেপুটে খায় ।
ফুটপাত কেন দরকার?
বাংলাদেশের মতো একটা মধ্যম আয়ের দেশে মার্কেট-দোকানের চেয়ে ফুটপাতের ব্যবসার চাহিদা প্রচুর । এই ফুটপাতের ক্রেতাসাধারণও খারাপ না । কুলি-দিনমজুর থেকে এলিট শ্রেণি পর্যন্ত কে না-যায় ফুটপাতে । সবাই যায় । এই ফুটপাতের ওপর নির্ভর করে দেশের হাজারো কোটি পরিবার । গরিব-নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষগুলোর বড় বড় শপিংমলগুরোতে যাওয়ার সুযোগ তেমন একটা হয় না । আসলে যাওয়া হয় না বললে হয়তো ভুল হবে । সামর্থ্যের কারণে তারা যেতে পারে না । তাই কেনাকাটার জন্য তারা ফুটপাতকে বেছে নেন ।
পরিশেষে সরকার, প্রশাসন ও ফুটপাত সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে অনুরোধ করবো ফুটপাত নিয়ে সকল নোংরামি বন্ধ করুন এবং গরিব, অসহায়দের পেটে লাথি মারা থেকে বিরত থাকুন ।
পঠিত : ১২৩৫ বার
মন্তব্য: ০